আমি একটা গোপন বয়সে আটকে আছি,
যখনই বাসার ছাদে এসে দাড়াই
দিন হোক আর রাত,
শীতকাল অথবা গরমকাল যাই হোক,
তীব্র বৃষ্টি শুরু হয় তখন,
ঝড়ো বৃষ্টি, আকাশে বাতাসে
আর আমার বুকের ভিতর।
আমি ঠিকই তাকাবো লাগোয়া
পশ্চিম দিকের ছাদ’টার দিকে,
তখনই আমার বয়স একুশ হয়ে যায়।
যেখানে তুমি সন্ধ্যার সূর্যের সাথে
প্রথম ডুবেছিলে আমার চোখে,
আর সে’দিনই আমার একুশ বুকে
প্রথম ঝড়ো বৃষ্টি হয়েছিলো,
সেই থেকে একুশেই আটকে গেছে জীবন।


বুকের বৃষ্টি’তে তোমার দেওয়া চিঠিগুলো
বিরহী ব্যাঙের মতো ডাকতে শুরু করে,
ঘরের সবাইকে ফাঁকি দিয়ে
তখনই পুরোনো ট্রান্ক’টা খুলি
আমার একুশ বয়স’টা লাফ দিয়ে বুকে ঢুকে যায় অবলীলায়,
প্রতিবার তোমার চিঠির প্রতিটি শব্দ
আমার চোখে একুশের চশমা পড়িয়ে দেয় নির্লজ্জ ভাবে,
আয়নার দিকে তাকালে আটচল্লিশের
কাঁচা পাকা চুল’গুলো কালো হয়ে যায় সেই মুহূর্তে,
ট্রান্ক’টাতে যত্ন করে রাখা তোমার দেওয়া হলুদ রং এর পুরোনো পান্জাবী’টা
গায়ে চড়াই বহু সাবধানে,
ছিড়ে যেনো না যায়,
খানিকটা ভূড়ি বেড়িয়ে থাকে লজ্জিত ভাবে,
ঘরের সবাই তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে হেসে দেয়,
তবুও পরোয়া করিনা কারো হাসির,
রাস্তায় নেমেই একটা রিকশায় উঠে বসি,
আমার একুশ বয়স’টাকে পাশে বসিয়ে  তোমার বাসার পাশ দিয়ে অনেকবার চক্কর কাটি,
যদি কোনোদিন তোমাকে একা তোমার বারান্দায় দেখতে পাই,
আমার একুশ বয়স’টাকে ছুড়ে দেই তোমার দোতালার বারান্দায়,
তখন রিকশা থামিয়ে চুপচাপ বসে থাকি, থাকিয়ে থাকি দোতালার দিকে।


একসময় দেখি, আমার একুশ বয়স’টা
চরম অভিমান, অপমান আর হাহাকার নিয়ে নেমে আসছে দোতালা থেকে,
তারপর চুপচাপ রিকশায় আমার পাশে বসে পরে,
আর তোমাদের দু’জনকে দেখি বারান্দায় হাসতে হাসতে গল্প করতে।
কোনো কথা না বলে বাসায় ফিরি,
পান্জাবীটা খুলে ট্রান্ক’টাতে আবার রেখে দেই,
সাথে রাখি আমার একুশ বয়স’টা।


তুমি চলে গেছো আমার সব,
একেবারে সব নিয়ে,
শুধু আমার একুশ বয়স’টা রয়ে গেছে
আমারই সাথে তোমার সব হাহাকার নিয়ে।
——————————————————
রশিদ হারুন
১৪/০৫/২০১৯