আমি চল্লিশ বছরের আশেপাশের একজন পুরুষকে জানি
-যিনি বিগত প্রায় বিশ বছর যাবত শহরের বেশির ভাগ ডাকবাক্স তার বাড়িতে জমিয়েছেন,
এক কথায় চুরি করেছেন।


এই জন্য তাকে কয়েকবার থানা হাজত ও করতে হয়েছে।
লোকটিকে অনেকবার মানসিক ডাক্তার দেখানো হয়্ছে,
এমন কি মানসিক হাসপাতালেও রাখা হয়েছিল দিনকে দিন ।


প্রতিবার সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পর যখনই উনি নিজের শহরে ফিরেন,
শুধু মাত্র শহরের যে কোন একটি ডাকবাক্সের দিকে নজর পড়লেই;
তিনি পূর্বের মানসিক অবস্হায় ফিরে যান মুহূর্তে।
ডাকবাক্স সম্পর্কিত এমন অদ্ভুত রোগ ডাক্তারি ইতিহাসে পৃথিবীর কোথাও নেই।


পুলিশের এজহার থেকে জানা যায়, লোকটির সদ্য যৌবনে একজন কিশোরীকে একটি প্রেমপত্র লিখে মহল্লার ডাকবাক্সে ফেলেছিলেন।
তারপর থেকে সে‌ই চিঠির উত্তরের জন্য প্রথমে তিনি নিজ বাড়িতে বসে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছিলেন,
তারপর একসময়ে ধৈর্য হারিয়ে মহল্লার পোস্ট অফিসে গিয়ে সারাদিন বসে থাকতেন,
এভাবে যতই দিন যায়,
একসময যখন চিঠির উত্তর আর আসেনা;
তখন তিনি শহরের বাকী পোষ্ট অফিসে গিয়ে গিয়ে বসে থাকতে শুরু করলেন।


এইসময় একদিন হঠাৎ করেই উনার মনে হলো,
সেই চিঠির উত্তর ডাকবাক্সের ভিতরই পড়ে আছে,
ডাকপিয়নরা ইচ্ছে করে‌ই উনাকে চিঠির উত্তর দেয়না।


উনি কোথায় যেনো এক গভীর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেলেন।
সেই থেকে তিনি ডাকবাক্স দেখলেই ভেংঙে বাড়িতে নিয়ে যান,
আর চিঠিপত্র ঘেটে ঘেটে উনার চিঠির উত্তর খুঁজে বেড়ান।


এই ইতিহাস জানার পর
আমি যখনই যেখানে, এমন কি দেশের বাহিরেও যে কোন ডাকবাক্স দেখি,
কেন যেনো আমি সেই ডাকবাক্সের শরীরে সেই পুরুষটিরই আবছায়া দেখতে পাই!


অনুভব করতে পারি,
পৃথিবীর সমস্ত ডাকবাক্সের ভিতরে আলাদিনের দৈত্যের মতো
এই লোকটির আত্মা আটকে আছে অনন্তকাল ধরে।


আমার ভিতরে এক অপরিচিত ‌অদ্ভুত অনুভুতি জানান দেয় যে,
এই মানুষটির মৃত্যূর পরও তার আত্মার মুক্তি হবেনা,
যতক্ষণ না পর্যন্ত ডাকবাক্স চুরির এই ইতিহাসের
-‘নাম না জানা’ সেই কিশোরীটি
এই পুরুষটিকে একটি চিঠির উত্তর লিখে হাতে হাতে দেয়,
অথবা তার মৃত্যূর পরও সেই চিঠির উত্তর লিখে সেই কবরের মাটিতে রেখে আসে।


যেদিন থেকে কিশোরীর দয়ায় লোকটির আত্মা ডাকবাক্স থেকে মুক্তি পাবে,
-আমি হলফ করে বলতে পারি,
শুধুমাত্র সেদিন থেকেই এই শহরের আর কোন ডাকবাক্স চুরি হবেনা।
—————————
রশিদ হারুন
০২/০৮/২০২০