বন্ধু শ্যামলের রুমে তোমাকে দেখলাম বিশ বছর পর।
প্রচণ্ড বৃষ্টির সকালে কফি খেতে খেতে
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে
অর্থনীতিরই কঠিন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছ দু’জন।
আমাকে লক্ষ্য করনি তোমরা একবারের জন্যও।


কবে এসেছ এই বৃষ্টির শহর-সিলেটে?
থেকে যাবে নাকি পাকাপাকি?
কবিতা কি পড়ো এখনো?


সময় খুব ফাঁকিবাজ
আমাকে একবারের জন্যও বলে কয়ে যায়নি।
এই ক্যাম্পাসের ‘এক কিলোর’
দু’পাশের চারা গাছগুলো দেখতে দেখতে
আমার মাথা ছাড়িয়ে ‌অনেক অনেক উপরে উঠে গেলো,
অথচ আমি ঠিক ততটুকুনই রয়ে গেলাম।


গাছগুলো প্রতিদিন বড় হতে হতে বছর বছর পাতা ঝরায় মাটিতে,
অথচ আমার স্মৃতির পাতা কখনই ঝরলো না।


চার বছর ধরে ‘এক কিলোর’ প্রতিটি ইঞ্চিতে আমি তুমি এক সাথে বৃষ্টিতে ভিজেছি,
রোদে পুড়েছি।
সেই দিনগুলোতে তোমার কন্ঠে কত যে কবিতা শুনেছি।
দুষ্টামির ছলে মনস্তাপ ভরা বুকে আমাকে প্রায়ই বলতে
-যদি আমি কবিতা লিখতে পারতাম,
তাহলে তুমি আমাকে ‘কবি’ বলে ডাকতে পারতে।


সেই তুমি এখন বড়ো অর্থনীতিবিদ।
শুনেছি বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়াও।
স্বামী সংসারে খুব ভালোই আছো,
অথচ আমি ঢাকা থেকে এসে এই সিলেট শহরেই আটকে গেলাম তোমার জন্য!
এখনো থাকি সেই একই ব্যাচেলারদের মেসে।

কবিতা কি পড় এখনো?
ফাঁকিবাজ সময় আমার বয়স বাড়িয়ে দিল বিশ বছর,
সিলেট শহরের বছরের পর বছর বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে,
রোদে পুড়তে পুড়তে
আমি এখন বৃষ্টির জল আর রোদের তাপ বুকে লুকাতে শিখেছি।


গোপন এক তীব্র আশা পালছি বিশ বছর ধরে এই বুকের মধ্যে।
তাইতো সব কাজ থেকে পালিয়ে প্রায় প্রতিদিনই একবার হলেও ঢু মারি অর্থনীতি বিভাগে,
যদি কোন একদিন দেখা হয়ে যায় তোমার সাথে।


মাঝখানে বিশ বছর পার হয়ে গেলো চোখের নিমিষে,
অর্থনীতি বিভাগেই বন্ধু শ্যামলের রুমে তোমাকে দেখলাম।
তীব্র বৃষ্টির আহ্বান উপেক্ষা করে
কবিতার বদলে সেই তুমি অনায়াসে অর্থনীতির কঠিন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছ!


তুমি কবে এসেছো এই শহরে?
থেকে যাবে নাকি পাকাপাকি?
কবিতা কি পড়ো এখনো?


তোমাকে খুব বলতে ইচ্ছে করেছিলো চিৎকার করে,
সিলেট শহরে আমার এই শরীর মন-
বৃষ্টি, বিরহ আর অভিমানে ভিজতে ভিজতে,
একই সাথে এই বুকের মাঝে বিষাদের তীব্র রোদ পালতে পালতে ,
আমি এতোদিনে কবিতা লিখতেও শিখেছি।


তুমি এখন অনায়াসে আমাকে ‘কবি’ বলতে পারো।
————
র শি দ  হা রু ন
২৩/০৫/২০২২