মনোলীনা,
কেমন আছো ? তুমিতো ভালোই থাকবে,
কেমন আছো জানতে চাওয়া ঠিক হয়নি,
তোমাকে অনেক কাল লিখিনা,
কেমন যেন সংকোচ হচ্ছিলো,
তুমি হয়তো বিব্রত হবে ভেবে,
বোকা মানুষতো, তাই বেশী চিন্তা করতে পারিনা,
লিখেই ফেললাম,
তোমার মনে আছে,
তুমি আমাকে“ বোকা মানুষ” বলতে সব সময়।


মনোলীনা,
আমার না খুব, খুব জানতে ইচ্ছে করে
তুমি ঘুম থেকে উঠে এখনো রবীন্দ্র সংগীত শোনো কিনা ?
সকালে নাস্তার পর কি এখনো ব্ল্যাক কফি খাও
নাকি অভ্যেসটা বাদ দিয়েছ?
গোসলের সময় তোমার এক ঘন্টার বেশী সময় লাগতো
এখনো কি এতো সময় পাও গোসলের জন্য?
বৃষ্টি তোমার খুব পচ্ছন্দ ছিলো,
বৃষ্টি হলেই ভিঁজার জন্য পাগল হয়ে যেতে,
সাথে সবসময় আমাকে লাগবেই,
আমার আবার বৃষ্টির জলে মাথা ব্যাথা করতো
তোমার কারনে আমাকে কতোবার যে বৃষ্টির জলে ভিঁজতে হয়েছে,
আর মাথা ব্যাথা নিয়ে রাতে ঘুমোতে পারতাম না,
তোমাকে তবুও বুঝতে দেইনি।
তুমি এখনো বৃষ্টিতে ভিঁজো কিনা জানিনা,
তবে আমি ভিঁজি সারাক্ষনই , বুকের জলে
কেউ দেখেনা ,শুধু বুকটা ভিঁজে কাদার মতো থকথক করে।


মনোলীনা,
তোমার খুব শখ ছিলো বিদেশ ঘুরার
অথচ আমি পাশের দেশ ইন্ডিয়াতে
নিয়ে যেতে পারিনি তোমাকে কখনো,,
ইন্ডিয়া কেনো , কক্সবাজারে ঘুরার সামর্থ ও ছিলনা আমার,
ছোট চাকুরী , যাই বেতন পেতাম সংসার চালানোই
ভয়াবহ ব্যাপার ছিলো আমার জন্য,
আতংকে থাকতাম প্রতি মূহুর্তে,
অসুখ বিসুখ আর মেহমান যেনো হুট করে না আসে,
নিজের গাড়ী বাড়ির খুব স্বপ্ন দেখতে তুমি,
আমার স্বপ্ন ছিলো ঋন না করে মাসটা শেষ করা।


মনোলীনা,
তোমাকে নিয়ে রাতে আকাশ দেখতে আমার খুব ভালো লাগতো
আর তুমি বলতে, যে আকাশকে স্পর্শ করা যায়না
তাকে শুধু শুধু দেখার কি আছে ?
আকাশে আমি যে তোমাকেই দেখতাম
যেখানেই যাই যেনো তুমি আমাকে আগলে রেখেছো মনে হতো,
আমি এখন আর আকাশ দেখিনা,
বুকের মধ্যেই একটা আকাশঘর বানিয়েছি,
মন বেশী খারাপ হলে সেখানে ডুকে দরজার খিল আটকিয়ে দেই ,
তারপর চুপটি করে বসে থাকি অনন্তকাল।


মনোলীনা,
আমার বিলাসিতা বলতে ছিলো
একটু কবিতা লেখার চেষ্টা করা,
তাও তোমাকে নিয়েই ভালোবাসার কবিতা,
তুমি কেনো যে আমার কবিতা পড়তে না ,
আর পড়লেও বলতে -,কিছু বুঝোনি,
একদিন আমি কিভাবে যেনো বুঝে ফেললাম
তুমি আসলে অন্য কারো কবিতা পড়তে ভালোবাসো,
তার দূরবোধ্য শব্দগুলোর অর্থ অবলীলায় ধরে ফেলো,
সেদিনই আমি টের পেলাম
তুমি দুরে চলে গেছো
লক্ষ কোটি মাইল দুরে।


মনোলীনা,
তুমি যতই কাছে থাকতে না কেনো,
আমি প্রতি মূহুর্তে টের পেতে শুরু করলাম
আমি সারা জীবন আলোর বেগে ছুটলেও
তোমার নাগাল পাবোনা।
তুমি এতো দুরে কবে চলে গেলে আমি একবারও জানলাম না,
হয়তো আমি “বোকা মানুষ” ছিলাম ,এই জন্য বুঝতে পারিনি,
কাছে থেকেও যে অনেক দুরে যাওয়া যায়
ঈশ্বর সেদিন আমাকে জ্ঞান দিলো,
তারপর আমি সারারাত আকাশের দিকে তাকিয়ে
কেঁদেছি,শুধু কেঁদেছি,মনে মনে তীব্র চিৎকার করে,
আমার এই ছোট্টবুকে এতো জল কবে জমে ছিলো
আশ্চর্য্য আমি টেরই পাইনি,।


মনোলীনা,
তুমি বোধহয় এখন বিদেশ ঘুরাঘুরি করো প্রায়ই,
নতুন কবির কবিতা তুমি খুবই পচ্ছন্দ করতে,
এখনো করোতো?
উনি তোমার সাথে কি বৃষ্টিতে ভিঁজে ?
নাকি বৃষ্টিতে ভিঁজা তুমি ছেড়ে দিয়েছো?
ঈশ্বর সবার ইচ্ছে পুরন করে একদিন,
দেখো তোমার নিশ্চই খুব দামী গাড়ী বাড়ী হয়েছে?
খুব আরামে থাকো নিশ্চই,
সুখে থাকো তো ? বুঝলে সুখ ???


মনোলীনা,
আমি এখনো বিলাসিতা টুকু ছাড়তে পারিনি,
আজকাল আর ভালোবাসার কবিতা লিখিনা.
লিখি ,অভিমান,ক্রোধ,বিশ্বাসহীনতা
আর বুকের হাহাকারের কবিতা,
যেদিন আমার এই কবিতাগুলো দিয়ে প্রথম বই ছাপবো
তোমাকেই উৎসর্গ করবো বইটি।


ইতি
“বোকা মানুষ”


বিঃদ্রঃ তোমার নতুন সংসারের বিদেশের ঠিকানা এখনো পাইনি । পেলেই চিঠিটা পাঠিয়ে দিবো, ততোদিন থাকুক চিঠিটা আমার কবিতার খাতায়।
----------------------------
রশিদ হারুন
০৯/০৪/২০১৮