আমাকে প্রত্যাখ্যান করে যখনই তুমি চলে যাচ্ছিলে
-ঠিক তখনই পদ্মা নদীর মাঝ বরাবর
গল্পরত একটি শুশুক আর গাঙচিলের মধ্যে ঝগড়া শুরু হলো।
গাঙচিলটি শুধু তাকিয়ে দেখলো শুশুকটি জলে ডুব দিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে
আর সে হাহাকারের জলে ভেজা মন নিয়ে উড়তে লাগলো আগুন পোড়া আকাশে।
তখনই আমার মগজের ভিতর চলতে লাগলো বায়োস্কোপ,
সারাজীবন ধরে বারবার অহেতুক আমার মরে যাবার বায়োস্কোপ।
উত্তর যাত্রাবাড়ির ১০৭/৯ নং সেই ভাড়া বাড়ির ছাদে ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে ঘুড়ি আর মাটিতে নামাতে পারিনি, বৃষ্টিতে ভিজে আকাশেই ছিঁড়ে গিয়েছিল কাগজের সেই ঘুড়িটি।
সেদিন সেই ঘুড়ির জন্য বোকার মতো লুকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে অহেতুক একবার মরেছিলাম।
জীবনে প্রথম পাওয়া দাদুর দেওয়া আস্ত দশ টাকার লাল নোটটি সদরঘাটে লঞ্চে উঠতে গিয়ে বুক পকেট থেকে পকেটমার হয়েছিলো,
সেদিন লজ্জায়, অপমানে আর কষ্টে লঞ্চের বাথরুমে কেঁদেছিলাম কিছুক্ষণ পরপর,
সেদিনও অহেতুক মরেছিলাম আমি মাঝ নদীতে অনেকক্ষণ ধরে।
১০৮ এর নীলা আপা কলেজে যাবার কথা বলে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলো মহল্লার পত্রিকার একমাত্র হকারওয়ালার সাথে, নীলা আপা আর কখনোই বাড়ি ফিরেনি,
আমাদের মহল্লায়ও অনেকদিন পত্রিকা পাওয়া যায়নি,
আমিও তারপর থেকে নাম না জানা এক কষ্টে কেঁদেছি রাত বিরাতে ঘুমোতে গেলেই,
তখনও অহেতুক প্রতি রাতেই মরতাম।
এভাবে সারাজীবন
আমি অহেতুক অনেকবার মরেছি,
তোমার এই প্রত্যাখ্যানের পর থেকে আমার মগজে শুধু সারাজীবন ধরে মরে যাবার বায়োস্কোপ চলছে।
তোমার এই প্রত্যাখ্যান এখন একটা মধ্যরাতের ঘুঘু পাখি হয়ে বুকের মধ্যে শুধু উড়ে আর উড়ে,
সারারাত ধরে হাহাকারে ডেকে চলে ঘুঘুটি,
-সেই ছেঁড়া ঘুড়িটির জন্য,
-হারিয়ে যাওয়া দশ টাকার আস্ত নোটটির জন্য,
নীলা আপার ফিরে আসার জন্য।
এখন আমি রাত বিরাতে গুনগুনিয়ে গান গেয়ে বুকের মধ্যরাতের ঘুঘুটাকে ঘুম পাড়াতে ব্যর্থ হয়ে অহেতুক বারবার মরি-
“ওরে আমার মধ্যরাতের বুকের ঘুঘু,
তুমি ঘুমাও না কেনো!
তুমি ঘুমাও
তুমি ঘুমাও। "
এই শহরে এখন যদি রাত বিরাতের একটি ঘুঘু পাখির ডাকে কেউ ঘুমাতে না পারে,
তাহলে শুধু,
আমাকে তোমার এই প্রত্যাখ্যান দায়ী থাকবে,
আর দায়ী থাকবে আমার অহেতুক বারবার মরে যাওয়া।
———————
রশিদ হারুন
২৬:০৭/২০২০