কাপড়ের এই দোকানটার সামনে আমার ছেলেকে নিয়ে প্রায়ই আসি।দোকান’টা অনেক পুরোনো। আগের চেয়েও এখন অনেক সুন্দর করে সাঁজিয়েছে।গাড়ী থেকে নেমে দোকান’টার বাহিরে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকি। কাঁচের ভিতর দিয়ে তাকিয়ে পুতুলে পরানো নতুন নতুন পান্জাবি দেখি ।তারপর কোনো কাপড় না কিনেই আবার গাড়ী’তে উঠি।আমার ছেলে শুধু আমার দিকে আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থাকে প্রতিবার।


আমার বাবা’ও আমাকে নিয়ে ঠিক এভাবেই দাড়িয়ে থাকতো।উনি বাচ্চা ছেলে’দের কাপড় দেখতো আর বলতো, “এবার ঈদে তোকে এই দোকান থেকে নতুন এই জামা’টা কিনে দিবো। আগে থেকে একটু দেখে রাখি, যদি ভালো কিছু আবার চোখে পরে যায়”।
বাবা কখনি আমাকে এই দোকান থেকে কোনো কাপড় কিনে দিতে পারেনি।
ঈদ আসলেই খুব অপরাধী চেহারাতে বলতো,
“বাবারে এই বার বোনাস’টা ঠিকমতো হয় নাই, সামনের বার নিশ্চিত কিনে দিবো।”
তারপর ফুটপাতের পোষাক’ই ছিলো প্রতি ঈদের নতুন কাপড়।
আমি আসলে নতুন নতুন পান্জাবি দেখি বাবা’র জন্য।এখন এই দোকানের সব কাপড় কেনা’র ক্ষমতাই আমার আছে , শুধু বাবা নেই।
বাবা’র সবই ছিলো, ভালোবাসা, আন্তরিকতা, কষ্ট , ছিলোনা আর্থিক ক্ষমতা।
আমি আমার ছেলে’কে তার বাবা’র কষ্ট’টুকু দিয়ে যেতে চাই।
আমার ছেলে প্রতিবারই বলে, “বাবা তুমি কখনোই কিছুই কিনো না, তাহলে কি জন্য আসো এই দোকানে?”
আমি প্রতিবারই বলি, “ আমি আমার বাবা’র কষ্ট দেখতে আসি এই দোকানে, তুমিও বড় হয়ে তোমার বাবা’র কষ্ট দেখতে ঠিকই আসবে।”
প্রতিবারই আমার সন্তান আশ্চর্য হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
----------------
রশিদ হারুন
০৮/০৯/১৮