আমি জন্ম থাইক্যাই
ভাত কথাডা খুব গোপনে বুকের মইধ্যে পালতাছি।


একদিন রাজার চৌকিদার আমার বুকের ভিতরে হাত হান্দায়া দিয়া দেখতে চাইছিল বুক পিঞ্জিরায় কোনো দাবিদাওয়া- বিপ্লব পালতাছি কিনা?
তার হাত ময়লা অইছিলো আমার বুকের ভিতরে!
বিশ্বাস করেন,
তার পুরা হাতে শুধু ভাত কথাডা আঠার লাহান লাইগা গেছিল,
ঘেন্নায় আর রাগে তার পুরা শরীল কুকড়াইয়া গ্যাছিলো তারই নোংরা হাত দেইখ্যা।
আমারে ধরার আগেই দৌড়াইয়া পলাইছি।
তারপর থেইক্যা উন্নিশ বছর ধইরা
আমি লুকাইয়া আছি জঙ্গলে।


আমি অবাক হইয়া দেখলাম, জঙ্গলে
‌অনেক মানুষ লুকা‌ইয়া আছে আমার লাহান।
আমার মতন হগ্গলে হেগো বুকে ভাত কথাডা পালতাছে।


ভাত কথাডা দিনদিন
আমার বুকের সব কথা খাইয়া আরো তাগড়া হইতাছে।
অহন আমার বুকে কোনো খোদার ভয়ের কথা নাই,
আমার বুকে মহামাইন্য রাজা বাদশার ভয়ের কোনো কথা নাই,
নাই এইটুকুন সম্মানের কথা যথাযথ  কর্তৃপক্ষের লাইগ্যা।


আমি দিনরাত টের পাই একটাই কথা
একটাই শক্তি, একটাই মোনাজাত,
বুকের ভিতরে শুধুই ভাতের কথা।
ভাতই আমার মোনাজাত,
ভাতই আমার খোদা
ভাতই আমার রাজা বাদশা
ভাতই আমার যথাযথ কর্তৃপক্ষের ।


ভাতের ভয়ের গল্পটা এবার বলি আপনাগো।
আমার বাপ আমাগো দুইবেলা ঠিকমতো ভাত জোগাইতে পারতো না।
হেই কষ্টে একদিন হেয় রাইতের বেলা গান বানছিলো,
ভাতের কষ্টের গান।
কত্তোবড় বেকুব আছিলো,
রাজদরবারের রাস্তার পাশে বইস্যা ভাত লইয়া গান বানধে।
রাজার চৌকিদার তারে ধইরা সে‌ই যে যথাযত কতৃপক্ষের কাছে লইয়া গেলো,
আমার বাপ আর কোনদিন ফিরে নাই।


তারপর থে‌ইক্ক্যা আমি মুখ দিয়া আর কোনদিন ভাত কথাডা বলিনা,
শুধু বুকে পালি গোপনে ভাত কথাডা।
ভাতই আমার মোনাজাত,
ভাতই আমার খোদা
ভাতই আমার রাজা বাদশা
ভাতই আমার যথাযথ কতৃপক্ষ।


জংঙ্গলের লুকানো সব মানুষ আমার মতো একই স্বপ্ন দেখে
মান্যবর মহারাজা একদিন বলবেন,
-“ফরমান জারী করা হলো,
আজ থেকে আজীবন রাজদরবার পক্ষে সব প্রজার চুলায় তাদের ক্ষিধার সমান গরম ভাতের ব্যবস্থা করা হবে”।
————————
রশিদ হারুন
২০/০৭/২০২০