স্মৃতির দুয়ার


-চৌধুরী রেজাউল হায়দার


এক বনমৌরির দুধিকার সুরভীতে খুঁজি  
বাসন্তী চোঁয়ার মাদল হাওয়া,  
ক্লান্ত মনে নির্জন দুপুরে  
দিগন্ত রেখায় সমাহিত রক্ত করবী বাগিচায়।  


বুকভরা কষ্টে সিক্ত নয়নে অশ্রু জলে
‘নীল বেদনা’ কে সাথী করে
একাকী পেরিয়ে চলেছি কতটাকাল..........
আমসৃণ আঁকা বাঁকা পথ ধরে,
থেমে থাকছেনা জীবন কল
এ যেন থামার নয় ...অপ্রতিরোধ্য ঝড়।


শর্ষ্যগন্ধার রূপায়নে আশার কুহুকে
পথিক মন ভাড়ে কল্পনা লালিত্য রাজ্যে,
জটলা পাকানো মেঘলা আকাশে বিদ্যুৎ চমাকায়
শ্রাবণের ঘন ঘন মেঘ ময়তায়।
শান্তি ঊধাও!  
থোকায় থোকায় মিতালি পাতায়  
নির্দয় স্মৃতির রাশি অন্তর গভীরে।


ঘনিয়ে কাটে অজস্র প্রহরে প্রহর,
বেদনাসিক্ত বন দোয়েলের ডাক শুনে,
উর্মী অরুণার সতেজ কিরণে
বাড়ায়না সোভাতে শোভন  
গোলাপ শাখা বুনন স্বপ্ন বনে।

নিঠুর নিয়তির কড়াল অমানবিকতায়
আত্মার আত্মীয়রা কেড়ে নেয় সম্ভ্রম খনি,
বিকচোম্মুখে প্রতিটি প্রত্যঙ্গে এঁকে দেয়
খামচিয়ে মারণ চিহ্ন হায়নারা দল বাঁধি।


সহসা কুহেলিকায় কুহোর তমাসী
থামিয়েছে কলোরব কূজন,
ডেকেছে দাদুরী তমাল কুঞ্জ
তিমিরে হারিয়ে সুজন,
তিথি রয় সয়লাব তিতিরের কান্নাতে।


দেবে কে অভয়, যে নেবে মহাদায়ভাগ,
রয় ইতস্ততা মিলন পাবেনা বুঝি কোন সঙ্গী।
পাতিয়ে কান রয়েছিল শুনিতে
দীপ্র কন্ঠে আশায় আশার ধ্বনি বানী।


শুকিয়ে গেছে কৃষ্ণচূঁড়ার লাল,
ঝড়েছে শেফালী বুকুল, হল ম্লান... টগর শিউলি
অভিমানে ইহলোকে উম্মুক্ত রেখে স্মৃতির দুয়ার
পরপারে গেছে চলে শ্রমন্তী।


দেহের প্রতিটি শিরায় শিরায়
প্রতিশোধ জ্বলে টগবগ তক্ত রক্ত জবার মতোনে
দিনরাত আলো আঁধার খুঁজিফিরি পোড়া আর্ত হরিণী
মোরাই সম দাবানলে।


অতিশয় অগোচরে কিছু ঝরাপাতা
মাটিতে লুটায় দেখায় দরদ ছায়াচ্ছন্নতায়,
ত্রিলোক মোহিনী নিষ্পাপ স্বর্গবাসি
বরাঙ্গনা শ্রমন্তীকে অনন্তের আলিঙ্গনে  
দেয় চুপিসারে ঠান্ডা ছায়াঞ্জলি।
০৫-০৬-২০০৮


* এটা শ্রমন্তীর তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকিতে লিখা ।


-হায়দার
প্যারিস,ফ্রাঞ্চ
৩০-০৪-২০১০