অদৃশ্য স্বপ্নের বাঁধভাঙ্গা জোয়ার
ঊড়িয়ে বাতাসে শাড়ির আঁচল
ঝংকার তোলে তৃষ্ণার্ত বুকে নূপুরের শব্দতান,
দোলায়ীত রেশ্মির বেনীযুগল হেঁটেছিলে স্বপ্নালু দৃষ্টি নিয়ে  
প্রহরের পর প্রহর গুনে কাটিয়েছিলে
পেতে চাইলে কল্পচঞ্চল; প্রতীক্ষিত অমৃতসম ভালোবাসার !


মায়ামাখা সিঁড়ি বেয়ে খুঁজেছ অবিভাজ্য আদরের গহীন
মেলেছিলে  প্রজাপতীর হরিদ বরণ ডানা    
লক্ষ্যছিল আকাশ ছোঁয়ার,  
আবেগী ভাবনার বাগিচা টুকরো টুকরো সোহাগ    
প্রত্যহ প্রানে লুপিয়েনিত তরতাজা পরশের  ফোঁটাফোঁটা আস্বদনীয় স্বাদ !  


স্বাপ্নিক আলো ও অন্ধকারে পুষ্প সুবাস তরঙ্গতাল  
ভাবনার পসরা ডালী ভড়েছিলে কাজল কালো নয়ন  
বাড়িয়ে কদম  নিষ্পাপী এক উচ্ছল প্রাণময়ী    
সৌরভভাসা বাগে দুরপনেয় থোকাথোকা ভাবোন্মাদ !


বাড়ালে চঞ্চুপুট শরদিন্দুর গোলাপী তাড়না  
রয়ে ডুবে কল্পনার তুলিতে আঁকা দিগ্বিজয় কামনার মন
দিঘল জীবন বিকশিত হতে শুরু করেছিল তন্নি এক তরুণী !


ভুল ছিল রাতের বেলায় একটি ভুল বাসে উঠে পড়া
অপরাধ নয় ভুল
শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে শিয়াল কুকুর
খাবলে কামড়ে ছিন্নভিন্ন করে অসহায় শরীরটা
আক্রোশ আর লালসা মেটায় দুর্বহ ক্ষুধা ছয় হায়েনাদল !


নরপিশাচেরা লৌহ টুকরোয় রয় ব্যাতিব্যস্ত আদীমতায়
আঘাত-প্রতিঘাতে করে জর্জরিত স্পর্শকাতর গর্ভাঙ্গে
ক্ষতবিক্ষত হয়েযায় গুপ্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ,
মানুষরুপী পিশাচদের তৃপ্তি আসেনি বোধদয় তখনও
পরগাছা ভেবে ছুড়ে ফেলে দেয় যত্রতত্র !


নিরিহ প্রাণীর মতো পড়ে থাকে রাস্তার পাশে
একা নগ্ন ক্ষত বিক্ষত উদোম বিধ্বস্ত ,
উদর গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসে ক্ষুদ্রান্ত্র-বৃহদান্ত্র  
ধুঁকে-ধুঁকে কাতরাতে-কাতরাতে পৌঁছেযায় ক্ষয়াকাশের শেষ সিমানায় !


ত্রয়োদশ দিবসে হারিয়ে যায় বাসনা জাগা
বিমর্ষতায় ধুম্রেহারায় স্বপ্ন হয়ে ফুটে ওঠার কুঁড়ি
দিন ও রাতের স্বপ্নঘেরা আবর্তিত সময় থমকে দাঁড়ায়,
পড়া লেখা যার হয় নিমিষে বিলিন
আবির্ভাব হল রীতিমতো ঘোরতর এক অপরাধ হত্যা জজ্ঞ !


শারীরিক পাশবিক নির্যাতনে
নির্মম লাঞ্ছনার বর্বর বীভৎস শিকারের পরিনতি
উঠেছিল উত্তাল হয়ে অস্থির ও বেদনাবিধুর মহাভারতের দিল্লি,
লড়াইতে অবশেষে পরাস্ত মৃত্যুঞ্জয়ী
অভূতপূর্ব এক সুদর্শিনী নন্দিনী
বয়স সবেমাত্র তেইশ একজন ছাত্রী তরুনী
তুমি ‘দামিন’হয়ে উঠেছিল নির্যাতিত নিখিল নারীর প্রতিমূর্তি !


আশঙ্কায় কম্পিত ছিল শেষ নিঃশ্বাসটুকু  
অবিরল কান্নায় সিক্ত অবচেতন মন,
চেতনা বিহীন বোধশক্তি
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে যায় পৌঁছে রোরুদ্যমান স্বপ্ন
হাজারো বেঁচে থাকার আর্তিটুকু অন্ধকারে করেনিল গ্রাস !


হায় হতভাগী মেয়ে !  
দুর্বৃত্তদের পাষণ্ডতা
জঘন্য কুকর্ম আর বর্বর নৃশংসতা
কেড়েনিল সম্ভাব্য সুস্থ স্বাভাবিক অনাগত
দাম্পত্য সংসার জীবন ,
নিষ্ঠুর নিয়তি বীভৎসতা ভরা ভাগ্যলিপী
অভিশপ্ত হয়ে সাক্ষী থাকল দাঁড়িয়ে যামিনী ১৬ই ডিসেম্বর !


ভীরুভীরু মনে প্রকম্পিত নেত্র  
গড়িয়ে গড়ায় ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুবারি ,  
জলন্ত মোমশিখার উজ্জল্য যায় হারিয়ে
দূর-দিগন্তে সুভ্রতার আঁচল নেয় রূপু বর্ণীল
দগ্ধ কণ্ঠে ধ্বনিত করে তুলবে মহাবিশ্ব !


অশ্রু ধারায় উৎসর্গ
হৃদয় নিংড়ান শ্রদ্ধায় ছড়ানো পুস্পমাল্য কভু নাহি হবে শুষ্ক,
কখনোবা পদ দলিয়ে করবেনা আর কেউ পিষ্ঠ
ক্ষোভের তিব্রতা যাব ভুলে,কণ্ঠে শান্তিস্বর পাবো ফিরে
‘নির্ভয়তা’র জ্বালানো বহ্নি শিখা গনগনে করে তুলবে বিশ্ববাসীর হৃদয় !

শ্রদ্ধা অবনত কণ্ঠস্বর ,দিয়ে যাই জানান
তুমিই ভারত মাতা,তুমি বোন ভারতের আর তুমিই ভারত কন্যা
তুমি নিখিল ভারতের কন্যা,জায়া,তুমিই জননী !
অসংখ্য অগণিত নর-নারী
সারাটা দিন এক কাতারে দাঁড়ি
পুষ্পার্ঘ্য শোভায় ঊদয়া দামিনীর বিদেহী আত্মাকে জানালো শ্রদ্ধাঞ্জলী !
(০১/০১/২০১৩)    অসমাপ্ত....................
-হায়দার ।
প্যারিস,ফ্রান্স।  
০৪/০১/২০১৩
প্রিয় পাঠক /পাঠিকা,
ভারত বর্ষে গেল ১৬ই ডিসেম্বর রাতে মানুষ রুপী কিছু দানবদলের মারনপন ভস্মীকরণ ত্যজি দৃষ্টির স্থায়িত্ব বাড়ে ২৩ বছর বয়েসী এক তন্নি তরুনীর উপর !ভাবতে কন্ঠ রোধ হয়,স্বর যায় কাতর হয়ে ।তার পরও রুদ্ধ কন্ঠে বলি- দিল্লির উদিত আমানত কিংবা উদয়া দামিনী তরুণী শনিবার ২৮শে ডিসেম্বর ২০১২ এই বর্বর-অধ্যুষিত সমাজ-সংস্কারের বিভীষিকা থেকে
নীরবে নিয়েছে চিরবিদায়  ।---তাঁকে উৎসর্গ ও স্ব-শ্রদ্ধ শ্রদ্ধা জানাতেই এই লেখার অনুপ্রেরনা।সংশোধনী ১২/০১/২০১৩