আজ ভোরে, কেন জানি মালিনীর মেয়েটা
একটু দেরি করে এসেছিলো, জুঁইগুলোকে কুড়োতে-
ওতো রোজই আসে সেই সাতসকালে,
মাঝে মাঝে আসে লালপেড়ে হলুদ শাড়িটা পরে,
অনেক ভোরে সোনারোদ্দুরের ঝিলিকটা চনমনে হয়ে ওঠে
তার ছায়ায়। ও, আগেই আসে, কারণ
ভয় আছে যদি, পূবের পাড়ার মালতী আগেভাগেই এসে পড়ে।


কাজীবাড়ির মেঝো ছেলেটা একটু রগত্যাড়া,
যখন তখন রেগে যায়, এমন কি মাঝে মাঝে লাঠি নিয়েও
তেড়ে ওঠে, অকারণে। তাই, ওকে সহজে কেউ ঘাটায় না,
তবে, সেও ওঠে অতি ভোরে,
প্রাতরাশের আগে একটু নির্মল নিঃশ্বাস নেবে করে।


উত্তর পাড়ার গফুরের মেয়েটা সোমত্ত হয়েছে,
ক’দিন আগে পাকা কথা হয়ে গেছে
আজকে তো ওর গায়ে হলুদ
তাই, ও বাড়ির কারও চোখে ঘুম ছিলোনা-
সবাই হুমড়ি খেয়ে উঠে গেছে অতি ভোরে।


মুখুজ্জে মশাইএর ছোট মেয়ে লাবনি,
ওর একটু আধটু মাথায় দোষ আছে
ওরও কিন্তু ঘুম নেই, সেই কাকডাকা ভোরে
ঘুম থেকে উঠে বাড়ি মাতিয়ে তুলেছে,
“বিয়ে দেখবো”, “বিয়ে দেখবো” বলে।


সারেং বাড়ির বৌটা, তার তো ভোরে ওঠার অভ্যেসই আছে,
যাতে করে সোয়ামিকে ডেকে দিতে পারে, ঘাটে যাবার জন্যে-
আগে ভাগে বজ্রাটাকে নিয়ে পৌঁছতে হবে, প্রতিদিনের গন্তব্যে।
তাই, কেন জানি মনে হলো,
আজকের ভোরটা অন্য দিনের চেয়ে
আগেই ভোর হয়ে গেছে।


(“ভোরের মাঝি” কাব্য থেকে)