আমরা একটি কথা ভালো করে জানি তাহল নেতৃত্ব ও সাহিত্য অবশ্যই দুইটা দুই জিনিষ ।
একজন সাহিত্যিক তার মনের ভিতরের অজানা জগতকে প্রকাশ করেন তার লেখনী দিয়ে।  হতে পারে কবিতা,গল্প,উপন্যাস,সমালোচনা,নাটক, এগুলো সাহিত্য জগতের প্রভূত অংশ।  
নিজের মনে লুকায়িত হাজারো কল্পনিক বস্তুত পাঠক মনে দাগ কাটতে পারে এমন কিছু সৃষ্টি করাই সাহিত্য।  যাতে উঠে আসবে বাস্তব জগতের আশা আকাঙ্ক্ষা,শোষণ, বৈষম্য,অন্যা, অনাচার,পারিপার্শ্বিকতা । যা পাঠক মনকে নাড়া দিয়ে যাবে। কখনো  কখনো পাঠককে করবে  উদ্বেলিত কখনো বা  হাজারো প্রশ্নের খোরাক জোগাবে । কল্পনা আর বাস্তবতার মিশেলে লেখাকে করবে সাবলীল প্রাণবন্ত নানাভাবে ফুটিয়ে  তুলবে সচেতনতার বীজ। “লিখন-শিল্পকে এককথায় সাহিত্য বলা যায়। মোটকথা ইন্দ্রিয় দ্বারা জাগতিক বা মহাজাগতিক চিন্তা চেতনা, অনুভূতি, সৌন্দর্য্য ও শিল্পের লিখিত প্রকাশ হচ্ছে সাহিত্য। গদ্য, পদ্য ও নাটক - এই তিন ধারায় প্রাথমিকভাবে সাহিত্যকে ভাগ করা যায়। গদ্যের মধ্যে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, গল্প ইত্যাদি এবং পদ্যের মধ্যে ছড়া, কবিতা ইত্যাদিকে শাখা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।;   (সংগৃহীত)।  আমাদের  যে একটি পুরানো রোগ আছে তা প্রমথ চৌধুরী তার বই পড়া নামের ছোট গল্পে বিশদভাবে বর্ণনা দিয়েছেন। আমরা না পড়ে লেখক হতে চাই।  আর অল্প কয়েকটা লেখতে পারলেই নিজেকে মহাজ্ঞানী ভেবে বসে থাকি। সস্তাপ্রচারের আশায় পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন দিয়ে পাঠককে বই কিনতে অনুরোধ করতে আমরা বড়ই পটু। কিন্তু কথা হল এ দেশে এখন ভালো  সাহিত্য রচনার রসদ আছে কি? অর্থাৎ পরিবেশ। যেখানে একটি শিশু ভোর সকালে উঠে ঘুমকাতুরে চোখে এক বস্তা বই কাঁধে জুলিয়ে জ্যাম আর নোংরা আবর্জনা  মাড়িয়ে স্কুলে যায় শুধুমাত্র ভালো নাম্বারের আশায়। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে পৃথিবী বদলে যাচ্ছে সমাজ  রাষ্ট্র  কাঠামোর পুরানো সংজ্ঞাকে পালটিয়ে বিশ্বপরিমণ্ডলে পুঁজিবাদী ধারণাই প্রতিযোগিতার সাথে লড়াই করে বেড়ে উঠছে আজকের বিশ্বসভ্যতা। যেখানে শিক্ষার চেয়ে অর্থই সব কিছুর মূলে। তাদের শিখানো হয় না নীতি,নৈতিকতা, দেশপ্রেম,সামাজিক  দায়বদ্ধত,দেওয়া হয় না সঠিক মূল্যবোধের শিক্ষা। তারা জানেনা সঠিক  ইতিহাস। ক্লাসের এতো বইয়ের মাঝে  ওরা একটুকু সময় পায় না বাইরের দুয়েকটা বই পড়ার, স্কুল থেকে এসে কোচিং, কোচিং থেকে এসে আবার পড়তে বসা।  সামাজিক অনুশাসনের নামে অবৈজ্ঞানিক ও কাল্পনিক ভয় ওদের কমল মনে সুপরিকল্পিতভাবে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। যা ওদের সরল ও কমল মনকে প্রভাবিত করার মতো যথেষ্ট। খেলার মাঠ নেই বিশ্রাম বা ঘোরার মতো জায়গা নেই। যাও কিছু আছে তাও আবার বেদখল বা অসামাজিক কার্যক্রম চলে। বাবা মা ব্যাস্ত থাকে আয় উপার্জন নিয়ে বাচ্চারা পায় না ভালো গাইডলাইন। আর নেতৃত্ব দেবার মতো যোগ্যতা কিভাবে তৈরি হবে তাও কিন্তু বড় একটি প্রশ্ন। বাবা নেতা তো ছেলেও নেতা মামা নেতা তো ভাগিনাও নেতা । ছাত্র সংসদগুলোতে নির্বাচন নেই প্রায় ২৪ বছর ধরে।  লেখা পড়ার মান নিম্ন। দেশ পরে আছে কলুষিত রাজনীতি নিয়ে। মানুষ ব্যাস্ত তার আখের নিয়ে। তাহলে কিভাবে নেতৃত্ব তৈরি হবে? আমাদের দেশের নেতারা প্রায় টকশো বা সভা সমাবেশে একটি কথা বারবার বলে যে আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ?  
আমাদের দেশের এইসব অশিক্ষিত নেতা নামধারী মূর্খরা এটাও জানেনা যে ব্যাকারণগতভাবে  আগামী, আর ভবিষ্যৎ শব্দ দুটোর অর্থ একই। জায়হোক আসল কথায় আসি, নেতা কাকে বলে? নেতা হতে হলে কি কি গুণাবলি থাকা প্রয়োজন? প্রথমেই যে কথাটি বলতে হয় তা হল নেতা ও নেতৃত্ব বুঝার সক্ষমতা। একজন নেতা দেখবে শুনবে  বুঝবে তারপর সে সব সমস্যা নোট করবে, নিজের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণকে অন্যান্য নেতৃবৃন্দের  সাথে আলোচনা করে পারিপার্শ্বিকতা অনুধাবন করে সঠিকভাবে সবাইকে এককাতারে নিয়ে  স্বার্থহীন কাজ করে যাবে।
নেতৃত্ব হল এমন এক সামাজিক প্রভাবের প্রক্রিয়া যার সাহায্যে মানুষ কোনও একটি সর্বজনীন কাজ সম্পন্ন করার জন্য অন্যান্য মানুষের সহায়তা ও সমর্থন লাভ করতে পারে।
কিন্তু নেতৃত্বের সঠিক সংজ্ঞা দেওয়া বেশ কঠিন। লিঙ্কন ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক এন মেরি ই. ম্যাকসোয়েনের মতে, "নেতৃত্ব আসলে ক্ষমতা: নেতাদের শোনার ও পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা, সব স্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলোচনা শুরু করায় উত্সাহদানের জন্য নিজেদের দক্ষতাকে কাজে লাগানোর ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতাকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষমতা, জোর করে চাপিয়ে না দিয়ে নিজেদের মূল্যবোধ ও দূরদর্শিতাকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করার ক্ষমতা। নেতৃত্ব মানে শুধুই সভায় আলোচ্য বিষয়সূচির প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখানো নয়, নিজে সেই কর্মসূচি স্থির করা, সমস্যা চিহ্নিত করা এবং শুধুই পরিবর্তনের সঙ্গে সামাল দিয়ে না চলে নিজেই এমন পরিবর্তনের সূচনা করা যা উল্লেখযোগ্য উন্নতির পথ প্রশস্ত করে। ( সংগৃহীত)
আরও সহজভাবে বলা যায় যে একজন নেতা গোটা সমাজের মানুষকে প্রভাবিত করার মতো ক্ষমতা রাখে যদি কিনা সে দূরদর্শী হয়। অর্থাৎ সে কারো দ্ধারা নিজে প্রভাবিত হয় না, সে তার নিজের মেধা প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করে। আর তার এই যোগ্যতা সে তখনি অর্জন করতে পারবে যখন সে মানুষের ও তার কর্মী বাহিনীর মনের চাওয়া পাওয়াকে বুঝতে পারবে। সমাজের স্বার্থে দেশের স্বার্থে সকল দলমত গোষ্ঠী নির্বিশেষে এককাতারে কাজ করবে। একজন নেতার কাছে তার পরিবার ও নিজের চেয়ে দেশ সবার আগে। সব কিছুর সেক্রিফাইস করার মতো মানসিক মনের অধিকারি হতে হবে। তবেই জনগণ তাকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে এবং তার নেতৃত্বকে সাধুবাদ জানাবে। যার প্রমাণ এই বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বাঙ্গালী জাতির সর্ব কালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমান।