পল্লী  বাঙলার  মাটিতে  লালিত  রস-সিক্ত  গেঁয়ো  পথে
ঐক্যের  মলয়  স্পর্শে  প্রানের  ছোঁয়া
দোলা  দিত  একদিন ,
সেইদিন  লালু-কালু-কানাইয়ের মনে ।
গ্রাম্য  রজনীর  আঁধারে  বনানি,
কখনো বা  শ্যামময়  ধানের  জমির
বক্ষে  রচিত  আল-পথ  ধরে
ধীর  পদে  মশালের  আলো,
কখনো বা  টিমটিমে  লণ্ঠন  বাতি  লয়ে
এক  হাঁটু  জল  ঠেলে—
ও পাড়ার  হালিমের  অসুস্থ  ছেলের
সমাচার  নিত
এ পাড়ার  নিতাইয়ের  বাবা ।
পিঠে-পুলি,  নবান্নের  শিরণি  নিয়ে
গামছার  পুঁটুলি  যেত
ও পাড়ার  ফরিদের  বাড়ি ।
এ পাড়ার  ধবলীর  দুধ
ও পাড়ার  নেহালের  ভাঁড়ে
দই  হয়ে  জমে  যেত  হৃদয়ের  টানে ।
বিজয়ার  উৎসবে, নবান্নের  পরবে  ছড়াত
ওদের-মোদের  বাড়ির  পুকুর  থেকে
বারোয়ারি  উৎসবের  মেজাজেতে  ধরা
কতো না  বিচিত্র  মাছের  স্বাদু  সৌরভ ।
হায় !  সে কাল  হারিয়ে  গেল, জানিনা  কোথায় !
আজ  শুধু  আছে  দীর্ঘ শ্বাস !
হৃদয়  দীর্ণ  করে—
টর্চের  আলো  দখল  নিয়েছে
লণ্ঠনের  অনুজ্জ্বল  আলোর  ভুবন ।
আঁধারের  টুটি  ছিন্ন  করে  সেথা
উছলিত  ঝলমলে  বিজলির  আলো ।
আল-পথ  সমাধিস্ত  কংক্রিটের  নীচে ।
পিচ ঢালা  পথ  বেয়ে—
কলুষিত  রাজনীতি  ছড়িয়ে  পড়েছে
পল্লীর পথে-ঘাটে,  মানুষের  খিড়কির  দোরে ।
হৃদয়ের  গ্রণ্থি  ছেঁড়া,  শিথিল  আজি
স্বার্থময়  জঘন্য  প্রতিযোগিতায় ।
এ পাড়ার  বোমায়  হত
ও পাড়ার  কুলসুমের  একমাত্র  অনাথ  নাতি ।
এ পাড়ার  পুত্র হারা  মায়ের  শোকে
কাঁদে না  আজ  ও পাড়ার  হালিমের  বউ ।
অস্ত্রের  ঝঙ্কারে,
বারুদের  ধোঁয়ায়  ঢাকে  শ্যামলিমা  খেত ।
হিংসার  বিষাক্ত  ছোবলের  ত্রাসে
দু পাড়া ই  কাঁপে  আজ  আতঙ্কের  মাঝে ।
তবু  ছোটে  রাজনীতি
আবিলতায়  থৈ থৈ  ঘৃণ্যতম  হিংসার  পথে ।
            **********************