শরত এসেছিল এক কিশোরের স্নিগ্ধ চোখে
এসেছিল সে শ্যামল বাংলার প্রত্যন্ত এক গাঁয়
এসেছিল তার বসন্তের অস্থায়ী ঠিকানায় ,
এসেছিল রোদে ভেজা এঁটেল মাটির
কর্দমাক্ত রাস্তার ধারে ।


শিউলির শৈশব হাসির ছটায় ,
প্রশান্ত তটিনীর বেলাভূমি তটে ,
কাশ বনের শঙ্খ-শুভ্র হিন্দোলের বুকে ,
সকালের স্বচ্ছ দীঘির লাল-নীল-সাদা—
শাপলা-শালুক আর সরোজিনী বনে
সদ্য স্নাত সলজ্জ পাঁপড়ির গায়
চুপিসারে এসেছিল সে ।


শিশিরের রুপোলি জলে সিক্ত ধানের খেতে
লুকোচুরি খেলারত সেই কিশোরের
মনটাও ভিজে যেত
আনন্দে অবগাহি শবনম হয়ে ।


চলিশার হাটে সদাগরি নায়ের ছাতে
দেখেছিল চুপচাপ উদাস মনে ,
মোলায়েম তুলোর মেঘে ভেসে যেতে যেতে—
দেখেছিল ওই দূর নীলাকাশ-গঙ্গায়
ধীরে ধীরে লুকায় সে প্রণয়ীর কাছে ।


পুরাতন রাজবাড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে
শারদীয়ার আগমনে মুখরিত
ঢাকের আবাহনি বাজনার তালে তালে
নাচিত সে কিশোরের মন ।
শারদীয়ার বোধনেও দেখেছিল তাকে
নতুন গন্ধমাখা সাটা-মাটা পোশাকের
অনাবিল উছলিত আনন্দের মাঝে ।


কালিগঙ্গা বক্ষের ঘূর্ণির ঘোলাজলে
পানসিতে ঘুরু ঘুরে সুরভিত ধূপের ধোঁয়ায়
বিদায়ের দৃশ্যে হরিষে বিষাদে সেই
কিশোরের মনটা আজো কেমন করে ।


শরত আজো আসে নির্ঘন্ট মেনে ,
সবকিছু আবছা ধুলোঢাকা আরশির মাঝে ।
   **************************