ধরাকন্ঠে মা বলে “খোকা” তুই কবে আসবি
অন্যকিছু লাগবেনা; আনবি শুধু একটা তসবি,
কতোদিন হয়; গেলি দেশটারে ছাড়ি
একবার আয়; দেখে যা নিজের ঘরবাড়ী,
খোকা বলে “মা”, সবেতো গেল বছর ছয়
এই কয়দিন সৌদি থেকে কোন কিছু কি হয়?
ধার-দেনা সব’তো এখনো মা হয়নি সাড়া
ছোট বোনটারে বিয়ে দেবারও আছে খুব তাড়া,
বাড়ীঘর কিছু হয়নি করা; আগের মতোই আছে
গোছগাছ কিছু না হলে; কি লাভ গিয়ে দেশে,
টুনিকে মা বিয়ে দেব ভাল জামাই দেখে
তুমি শুধু বসে খাবে পায়ের উপর পা রেখে,
বিদেশ এসেছি দুঃখ ঘোচাতে; তা যদি না পারি
শেষের শেষটাও দেখে ছাড়বো; হাল সহজে ছাড়ি?
তুমি কোন চিন্তা করোনা মা; মাত্র আর কয়েকদিন
কষ্ট যাতনা দূর হয়ে মা ফিরবে মোদের সুদিন,
কথাবার্তায় মা-ছেলের কন্ঠ আসে ধরে
মায়ের কথা শুনতে খোকা আরো সামনে বাড়ে,
খোকা বলে “মা”, বলো অসুখটা তোমার কোথা
মা বলে,পাগল;অসুখ না, বুকের বামে একটু ব্যথা
গ্যাষ্ট্রিকের ওষুধ খেলে ওটা এমনি যাবে চলে
ভালো করে দেখে মোড়ের ডাক্তার দিয়েছে বলে,
পিতৃহীন অবোধ খোকা ভরে অব্যক্ত বিষন্নতায়
পয়সা কিছু হাতে এলেও; ঘিরে থাকে শূন্যতায়,
মরুভূমির লু-হাওয়া যবে ঝড়ের বেগে বয়
ভাবি এই কাঞ্চা শরীরে তা কেমন করে সয়,
আধাসেদ্ধ খাবার আসে সময় গেলে পেরিয়ে
ক্ষুধার চোটে খেতে হয় রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে,
একরূমে করে গাদাগাদি; কতজন যে থাকি
“ভাল আছি” এই বলে শুধু; মাকে দেই ফাঁকি,
বছর ছ‘য়ে পেলাম কতো বিয়োগেরই খবর
দেশে গিয়ে দেখতে পাবো শুধুই তাদের কবর,
মামারা সব তিনজনেই; চলে গেছেন ওপারে
বাবা তো আগেই গেছেন; কাকাও গেছেন কবরে,
গ্রামের কতজনেই গেছেন; পরিচিত জন যারা
নিরবতায় হলে মনে; বিবেকে দেয় নাড়া,
এই বিদেশের মর্মটা কি; তা কি কেউ জানে?
সুখের আশায় ছুটলাম শুধু; জানে আমার প্রাণে,
তবুও আশা, নিয়তিতে ভরসা; স্বচ্ছলতা আসবে
আজীবন দুঃখিনী মা; সুখের সাগরে ভাসবে,
চব্বিশ ঘন্টায় আঠারো ঘন্টা থাকতে হয় কাজে
হিসাব নাই খাওয়া ঘুমের; কখন কয়টা বাজে,
হঠাৎ একদিন ঘুম ভাঙ্গে মাষ্টার সাবের ফোন কলে
ভেবে পায়না খোকা; ডাইরেক্ট কল কোন ছলে?
বিজ্ঞানের এই ডিজিটালে; অ-জ্ঞানে কেমনে টের পায়
ফোন কলটা রিসিভ করতে খোকার বুঝি প্রাণ যায়,
মাষ্টার বলে শক্ত “হ”, কাঁদবিনা তুই যেন
মা-বাবা কি সারাজীবন; থাকে কারো হেন,
বাকরূদ্ধ খোকা, বুঝে; নিয়তি দিয়েছে ধোঁকা
মা বুঝি চলে গেছে, ধরায় আমার কেন থাকা।