ডাক্তার, প্রিয় সুভাষিণী পরম কল্যাণেশু দরদী আমার,
শুভেচ্ছাসহ ভালবাসার একান্ত গোলাপের
সুবাসিত অবিরাম প্রেম জানিও।
পরসমাচার এই যে, ইতোপূর্বে অনেকবার তোমার
সহিত যোগাযোগের পূর্ণ তাগিত অনুভব করিয়াছি,
কিন্তু পর্যাপ্ত সময়ের অভাবজনিত কারণে মনের ইচ্ছা
মনের গভীরেই আড়াল করিয়া রাখিয়াছি।
যাহা হউক, বিগত কিছু দিবস পূর্বের কথা,
হয়ত তোমার মনে পড়িবে প্রদত্ত চিঠিটি
মনোযোগের সিহত পাঠ করিলেই তবে।


ডাক্তার, তোমার নিবীড় তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন
থাকিবার সময়, কিছু প্রয়োজনীয় নিরীক্ষার দ্বারা
আমার বুকের বাম পাঁজড়ের হৃদপিন্ডকে বহু
পর্যবেক্ষণ করিবার পর একটা অনাকাঙ্খিত সরলরেখা
ধরা পড়িয়াছিল, যাহা তোমার বিচক্ষণতার চক্ষুদ্বয় এড়াই নাই।


সুচিকিৎসার কোনো কমতি কর নাই সেই ক্ষণে,
তোমার নিঃস্বার্থ সেবার বদৌলতে কিছুদিনকাল সুস্থ্য থাকিয়া
বর্তমানে পূণরায় ততরেখাসহ চরম ক্ষতের সৃষ্টি
হইয়াছে, প্রেম নামক কঠিন-নিষ্ঠুর এক কুষ্ঠ ব্যধিতে।


তবুও তখন বলিয়াছিলে উক্ত ব্যরামটি নিরাময়যোগ্য।
কিছুকাল যাবৎ যত্নে সেবা-শুশ্রুষা করিলে
সাধারণতঃ ইহা সারিয়া উঠিতে পারে,
কিন্তু দিনের পর দিন ব্যধিটি সর্বাঙ্গে মৌচাকের
ন্যায় চতুস্পার্শ্বে প্রবল ছড়াইয়া পড়িতেছে-
যাহার ব্যথা অসহনীয় ও করুণ ব্যদনাদায়ক।


তুমি শুনিয়া পিড়ীত হইবে যে, আজ-কাল উদগ্র ব্যথা
নিয়া সাভাবিক চলাচলের অযোগ্য হইবার উপক্রম।
বেয়াড়া-বেলাজ ব্যরামটি নিয়া বড়ই বিপদ ও বিব্রত
অবস্থার মধ্য দিয়া দিনাতিপাত করিতে হইতেছে।


এমতাবস্থায়, যদি সম্ভবপর হইয়া থাকে যে, তুমি একবার
আসিয়া স্বচোক্ষে চাহিয়া সঠিক পরামর্শের
মাধ্যমে একটা সন্তোষজনক সুরাহা করিবার তরে
সুচিকিৎসার দ্বারা উক্ত অসুখ নিরাময়পূর্বক সাবলিল
সিদ্ধান্তে উপণীত হওয়া যায় কিনা তাহার একটা
বিধিব্যস্ত করিলে খুবই উপকৃত ও কৃতজ্ঞ হইতাম।
আর তোমাকে বড় দেখিবারও সাধ জাগিতেছে মনে।


মনে কি পড়ে তোমার তখনকার একটি পদক্ষেপের কথা?
তুমি তোমার ডান হস্তটি আমার বাম পাঁজড়ে রাখিয়া
স্পর্শ করিয়াছিলে, ততক্ষণাৎভাবে বেহায়া-বেলাজ
রোগটি শরীর হইতে নিমেষেই উধাও হইয়া গিয়াছিল।


মনে কি পড়ে বাহিরে ঝুম বর্ষার ধারা ঝরিতেছিল?
তুমি আনমনে খোলা জানালার বাহিরে হেরিয়া মৃদু
স্বরে কহিতে লাগিলে-


“এমনও বর্ষাস্নাত সন্ধ্যা পূর্বে দেখিয়াছি বলিয়া
মনে পড়ে না গো প্রিয়
বুঝি বাহিরে শনশন বিচলিত বায়ু যায় বহিয়া
নিঃশ্বাসে প্রেম খুঁজিয়া নিও।”