আমি সুনীল, আমি সুবিশাল, আমি নিঃসীম,
আমি মৌন,আমি গম্ভীর, আমি অপার, আমি
অপরাজেয়, আমি আদি, আমি অন্ত, আমিই
অনন্ত, আমার একান্ত নিজস্ব গতিশীল সুখের
উন্মাদনায় সময়ের মত বয়ে চলি নিরবধি ।
আমার তুলনা কেবল আমার নিজের সাথেই,
আমার লড়াই কেবল আমার নিজের সাথেই
আমার অনুভব কেবল আমার নিজস্ব সত্ত্বার,  
আমার পরাজয় কেবল আমার নিজের কাছেই
আমার সঙ্গম কেবল আমার নিজের সাথেই ।

আমি চির উত্তাল, আমি চির যৌবন, আমি
ক্লান্তিহীন, আমি সুগভীর, আমি অতুলনীয়,  
আমি নদীকে, পাহাড়কে, ধরণীকে গ্রাস করি,  
আমার সুবিশাল বুকে নদী নিজস্বতা হারায়,
আমার গভীরতায় পাহাড়ও ছোট হয়ে যায়,
আমার গহীন বুকে ধরণী নিঃশেষে ডুবে যায়।  
সৃষ্টির আদি থেকে আমার বুকে নিরন্তর বয়ে
চলে লোনা  নীল কান্নাস্রোত,আমার বয়ে চলা
নিঃসঙ্গ বিপুলতার গোপন গভীর মনোবেদন,
ঊর্মিমালা ডেকে তাকে তোমরা খুশী করেছ।  


তোমরা আমার অশ্রু জলের লবনাক্ত কষ্ট  
থেকে বানাবে কৃতজ্ঞতার নুন, তা সত্ত্বেও
তোমরা মানুষেরা কখনোই কৃতজ্ঞ হবে না,
তোমরা কৃতজ্ঞ হতে যে শেখইনি,কৃতজ্ঞতা
যে তোমাদের রক্তেই নেই, এরপর তোমরা
নির্দয়ের মতো অবলীলায় আমার গহীন নীল
শরীর থেকে খুবলে খুবলে ছিঁড়ে নেবে নীল
তিমি, হাঙ্গর, শীল, ডলফিন, লবস্টার আরও
কত কি, করবে মন ও দেহের ক্ষুধা নিবারণ,  
আর এতে আমিও কিছুই বলবো না, এ অতি
সামান্য উদ্বৃত্ত, তোমাদের ঝোলায় ছুড়ে দেয়া
আমার নিছক দয়ার দান, নিতান্তই অবহেলে ।  


শিকারের গল্প ভুলে তোমরা মানুষেরা আমার
কাছে ফিরে আসবে, আয়েস করে আমার কুলে
বসবে, মনের সুখে জলকেলি করবে, বালিতে
নাম লিখবে,মুছবে, আবার লিখবে,লোনা জলে
ধুয়ে যাবে,আবারো লিখবে,আবারো ধুয়ে দেবো
আমি সে নাম, আমার সৈকতে পদচিহ্ন রেখে
যাবে,আমি মুছে দেব, বালিতে খেলাঘর বানাবে,
আমি ঢেউয়ে ভাসিয়ে দেবো তোমাদের বানানো
সে বালুঘর, এভাবে ক্রমাগত তোমাদের আমার
খেলার ক্রীড়াণক বানিয়ে খেলবো ছেলেখেলা ।


আবার নতুন কেউ আসবে সে হয়তো আবারও
বালিঘর বানাবে,আমি আবারো ভেঙে দেব তার
সাধের সে খেলাঘর। তোমরা মানুষেরা বারবার
আসতে থাকবে, বারবার কুলে বসবে, জলকেলি
করবে, স্নান করবে,সমুদ্র সঙ্গম করবে,কেউ ফিরে
ঘরে ফিরে যাবে, কেউ ডুবে মরবে, কিন্তু আমার
তাতে কখনোই কিছু আসবে যাবে না। তোমরা
নশ্বর, তোমরা সবাই হারিয়ে যাবে মহাকালের
নির্মম গহ্বরে, আমি থেকে যাবো সতত বহমান ।


তোমারা অসংখ্য জাহাজ বানাবে, মাদার শিপ
বানাবে,বিধ্বংসী ডেস্ট্রয়ার বানাবে,মিসাইলবাহী
গানশিপ বানাবে, ডুবুরী সাবমেরিন বানাবে, কিন্তু
আমার অতল রহস্যের তল পাবেনা কখনোই।  
তোমাদের বানানো সুপার স্ট্রাকচার টাইটানিক
আমি এক লহমায় ডুবিয়ে দেবো, আমার অসীম
ক্ষমতা আমি বারবার দেখিয়ে দেবো  হারিকেন,
সাইক্লোন, জলোচ্ছাস ও সুনামির সুতীব্রতায় ।


মোট কথা, তোমাদের কারো কোন বিশেষত্ব
থাকবে না আমার অস্তিত্বের সামনে, যত চেষ্টা
কর না কেন সবাই সমান হয়ে থাকবে, সবাই
এক হয়ে যাবে আমার সামনে,কারন সুবিশাল
আমি, চিরন্তন আমি, অবিনশ্বর আমি,পৃথিবীর
তিনভাগ জুড়ে আমি সুবিশাল অকুল পাথার ।  


( ঈষৎ পরিবর্তিত)


রচনা কালঃ ২৮ - ০৯ – ১৩ ইং              (৮:৪৫ Am)


দৃষ্টি আকর্ষণঃ নিয়মিত কবি তালিকার প্রথমে থাকা নাকি অনেক সুখের, অনেক গৌরবের, অনেকের হিংসার ! আসলেই কি তাই ? কি জানি, নামের কারণে আমি তো কখনো ঐ বর্ণমালা ভিত্তিক কবি তালিকার প্রথমে থাকতে পারিনি, তাই কখনো নেয়া হয়নি ঐ অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার স্বাদ, সাহিত্যের সেবক হিসেবে, মানুষ হিসেবে মনে হচ্ছে একটি অপূর্ণতা রয়ে গেছে । তাই ইচ্ছে হল একটু পূর্ণ হতে, নতুন একটি অভিজ্ঞতা নিতে, নিজেই একবার যাচাই করে দেখতে, আসলেই এ কতোটা সুখের, কিন্তু সেজন্য তো পৈতৃক নাম বদলাতে পারবো না । তাই বর্ণমালা ভিত্তিক নিয়মিত কবি তালিকার প্রথমে আসার জন্য আপাতত “অকুল পাথার” ছদ্ম নামটি নিলাম । এর অবশ্য আরেকটি গৌণ উদ্দেশ্যও আছে, তা হল এই আগাধ সুখের অভিজ্ঞতা নিয়ে “সুখেনের সুখ” নামে একটি কবিতা লেখার গোপন ইচ্ছে । এই আত্মজ্ঞান লাভের চেষ্টাকে আশা করি মাননীয় অ্যাডমিন ও কবি বন্ধুরা ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখবেন । ধন্যবাদ ।


কেউ কেউ কিসের নেশায় এসব করছে তা নিজেই একটু দেখতে ইচ্ছে হল ।আমারটা একটি প্রতিবাদও বটে, তবে ভিন্ন ধারায় । যে লাইনে কেলি হচ্ছে সে লাইনেই প্রতিবাদ করলাম । কিছু কিছু লোকের কাছে গৌণ জিনিসই যে মুখ্য হয়ে উঠে তাদের প্রতি কটাক্ষ হানতেই আমার এই পদক্ষেপ । তবে আমি পৈতৃক নাম বদলাইনি, “অকুল পাথার” ছদ্মনামটি নিলাম, যার অর্থ হচ্ছে সুবিশাল সমুদ্র । নিজেকে যদিও এখনো কবি হিসেবে প্রমাণ করতে পারিনি । তবে এটা জানি কবি ও লেখকদের ছদ্ম নাম নেয়া নতুন কিছু নয়, কবিগুরুর ছদ্মনাম ছিল ভানুসিংহ, আর অনেকেরই অনেক নাম ছিল । আসরের বন্ধুদের জন্য এখানে কিছু প্রতিষ্ঠিত কবি ও লেখকদের ছদ্মনাম দিলাম ।  


কবি ও লেখকদের ছদ্মনামঃ
______________________________
ছদ্ম নাম -প্রকৃত নাম


ভানুসিংহ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কমলাকান্ত-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
অপরাজিতা দেবী-রাধারানী দেবী
কালকূট-সমরেশ বসু
ওমর খৈয়াম-সৈয়দ মুজতবা আলি
কাকাবাবু-প্রভাত কিরণ বসু
কালপেঁচা-বিনয় ঘোষ
জরাসন্ধ-চারুচন্দ্র চক্রবর্তী
ইন্দ্রনাথ মিত্র-ডঃ অরবিন্দ গুহ
যাযাবর-বিনয় মুখোপাধ্যায়
অবধূত-দুলাল মুখোপাধ্যায়
নিরপেক্ষ-অমিতাভ চৌধুরী
নীলকন্ঠ-দীপ্তেন্দ্র সান্যাল
কাফি খাঁ-প্রফুল্ল চন্দ্র লাহিড়ী
বিরূপাক্ষ-বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র
যুবনাশ্ব-মনীশ ঘটক
নীললোহিত-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
মহাস্থবির-প্রেমাঙ্কুর আতর্থী
বীরবল-প্রমথ চৌধুরী
প্র.না.বি.-প্রমথনাথ বিশী
স্বপনবুড়ো-অখিল নিয়োগী
ধনঞ্জয় বৈরাগী-তরুণ রায়
বেদুইন-দেবেশ রায়
ভীষ্মদেব-দেবব্রত মল্লিক
হুতুম পেঁচা-কালীপ্রসন্ন সিংহ
বিজ্ঞানভিক্ষু-লালিত মুখোপাধ্যায়
টেকচাঁদ ঠাকুর-প্যারীচাঁদ মিত্র
দীপক চৌধুরী-নিহার ঘোষাল
মৌমাছি-বিমল চন্দ্র ঘোষ
চাণক্য সেন-ভবানী সেনগুপ্ত
পরশুরাম-রাজশেখর বসু
শ্রীপান্থ-নিখিল সরকার
বানভট্ট-নীহাররঞ্জন গুপ্ত
ভাস্কর-জ্যোতির্ময় ঘোষ
রূপদর্শী-গৌরকিশোর ঘোষ
সুপান্থ-সুবোধ ঘোষ
বিকর্ণ-নারায়ন সান্যাল
প্রবুদ্ধ-প্রবোধ চন্দ্র বসু
শংকর-মণিশংকর মুখোপাধ্যায়
শ্রীভট্ট-দীনেশ গঙ্গোপাধ্যায়
বনফুল-বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়
সুনন্দ-নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
অনিলা দেবী-শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
অমিয়া দেবী-অমৃতলাল বন্দোপাধ্যায়
ত্রিলোচন কলমচী-আনন্দ বাগচী
নবকুমার কবিরত্ন-সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
মানিক বন্দোপাধ্যায়-প্রবোধ বন্দোপাধ্যায়
সত্য সুন্দর-মোহিত লাল মজুমদার
পঞ্চানন-ইন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়
উদয়ভানু-প্রাণতোষ ঘটক
নীহারিকা দেবী-অচিন্তকুমার সেনগুপ্ত
হুতোম পেঁচা-কালি প্রসন্ন সিংহ
দৃষ্টিহীন-মধুসূদন মজুমদার
সত্য সুন্দর দাস-মোহিত লাল মজুমদার
পরশুরাম-রাজশেখর বসু