পূর্বসূত্রঃ  


[আমিঃ হা হা হা । কবিগুরু বলেছেন “কবিরে খুঁজো না জীবন চরিতে” ।
       কবিতায় কিছু বাস্তব অনুভূতি কল্পনার রঙে বর্ণিল হয়ে উঠে ।
       কবিতা তাই সরাসরি কবির জীবন চরিত নয় ।


………………………………………………………………...


………………………………………………………………...


প্রিন্সেসঃ এই অসম সম্পর্কের সূত্রপাত কেন বা কিভাবে হয়েছিল ? ]


অষ্টম পর্বঃ নারী স্বাধীনতা


আমিঃ বিবাহিত জীবনে কাদম্বরী দেবী সুখী ছিলেন না । বিবাহিত
        সম্পর্কের টানাপোড়নের কারণে তিনি ঠাকুর পরিবারের কাছ
            থেকে তার প্রাপ্য সম্মান পাননি । কাদম্বরীর নিজের গায়ের রঙও
        ছিলো শ্যামলা । সে তুলনায় তার স্বামী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ছিলেন
        রাজপুত্রের মতো সুদর্শন।


প্রিন্সেসঃ কবিগুরুর মত এটাও দেখছি আরেকটা অসম বিয়ে, এটাও
       কি পারিবারিকভাবে হওয়া বিয়ে ? ঠাকুর পরিবারের এইসব
       সিদ্ধান্ত কে নিতেন ?


আমিঃ  মূলত মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্দেশেই তাকে বউ হিসেবে
        ঠাকুর বাড়ীর সবাই মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন কারন তখন
        তার নির্দেশ ঠাকুর বাড়িতে ছিল অনেকটা আইনের মত।কিন্তু
        স্বামী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ আরও সহ অনেকেই তাকে মন থেকে
        গ্রহণ করতে পারেননি। ওদিকে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ আবার ছিলেন
        বড়ভাই সত্যেন্দ্রনাথের বিলেত ফেরত স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর
        প্রতি অনুরক্ত ছিলেন যিনি তৎকালীন ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম
        সিভিলিয়ানের আধুনিকা স্ত্রী । জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জ্ঞানদানন্দিনী
       দেবীর প্রতি এই মোহও তাকে কাদম্বরী দেবীর কাছ থেকে দূরে
       ঠেলে দেওয়ার বড় একটা কারন ।


প্রিন্সেসঃ পরিবার এবং স্বামীর কাছ থেকে বঞ্চনার স্বীকার হয়েই  কি
         কাদম্বরী দেবী দেবর রবীন্দ্রনাথের দিকে ঝুঁকেছিলেন নাকি
         আরও কোন ঘটনা ছিল ?


আমিঃ যতদূর জানা যায় এটাই মুল কারন ছিল । এর বাইরেও আরও
       কিছু ব্যপার ছিল যেমন তাকে বন্ধ্যা বলে আখ্যায়িত করা হতো
       কোনো যথাযথ ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়াই। জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে তিনি
       যে গৃহের দিকে আকৃষ্ট করতে পারলেন না এ জন্য প্রায় সবাইই
       বউয়েরই দোষ দিতেন, বিশেষ করে মহিলা মহল । তার স্বামী
       জ্যোতিরিন্দ্রনাথের কোন দোষ তারা দেখতে পেতেন না, পুরুষ
       বলে তার সব দোষ ছিল ক্ষমার্হ ।

প্রিন্সেসঃ পুরুষ প্রধান সমাজে দেখা যাচ্ছে রবীন্দ্র নাথের আমল আর
          বর্তমানের সাথে খুব বেশী ফারাক নেই । ঘটনা যাই ঘটুক
          আঙুল তোলা হয় মেয়েদের দিকেই ।


আমিঃ এটা আপেক্ষিক, নারী বা পুরুষ হিসেবে না দেখে আমি এটাকে
        দেখি সবল ও দুর্বলের লড়াই । নারী প্রকৃতিগত ভাবে যেহেতু
        দুর্বল, তার কিছু সহজাত সীমাবদ্ধতা আছে তাই সে স্বীকার
        হচ্ছে সবল পুরুষের আক্রমণের । তবে এর বাইরেও কিন্তু কথা
        আছে, মা হিসেবে, কন্যা হিসেবে, বোন বা প্রেমিকা স্ত্রী হিসেবে
        পুরুষের উপর নারীর যে অপরিসীম প্রভাব তা তো সর্বজন স্বীকৃত।
        নারীর যে মাতৃ রূপ তা তো শাশ্বত, প্রেমিকা হিসেবেও সে ভাস্বর ।
        পার্সিয়ান লেখক  আফেন্দি তো বলেছিলেন, “রাজা হচ্ছে রানীর
        গোলামের গোলাম” ।  


প্রিন্সেসঃ  তারপরেও একটা মেয়েকে শুধুমাত্র মেয়ে হবার জন্য এমন
          অনেক বঞ্চনা, অনেক বৈষম্য, অনেক নিগ্রহ সহ্য করতে
          হয় যা একজন পুরুষ কখনোই বুঝতে পারবে না ।


আমিঃ আসলে নারী ও পুরুষ পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, যারা এই আবহ
        তৈরি করতে চায় তারা বিতর্কিত পথের পথিক । সৃষ্টিগত ভাবেই
        নারী ও পুরুষ পরস্পরের পরিপূরক, প্রতিদ্বন্দ্বী নয় । নারী ও পুরুষ
        উভয়ে মিলে, অবদানেই তৈরি হয় একটি শান্তিপূর্ণ সংসার, সমাজ,
       দেশ, জাতি তথা সমগ্র মানবজাতি । একজন নারীর যে দৈহিক ও
        মানসিক গড়ন তা পুরুষের দৈহিক ও মানসিক গড়ন থেকে
        সম্পূর্ণ আলাদা। সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতেই গড়েছেন এ স্বাতন্ত্র্য ।
        
প্রিন্সেসঃ এই নিয়ে কোন কোন নারীবাদী লেখিকা পুরুষশাসিত সমাজ,
        সংসার এমনকি  সৃষ্টিকর্তার দিকেও আঙুল তুলতে চান ।


আমিঃ হ্যা বুঝতে পারছি তুমি কার কথা বলছ। কৌতুহলবশত তার
       বেশ কিছু লেখা পড়াও হয়েছে, তার লেখা মূলত তার নিজের
       অভিজ্ঞতাকেন্দ্রিক,নিজস্বতার রঙে রাঙ্গানো,তার প্রথম দিককার
       লেখা গুলোতে দেখা যায় প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় নারীর প্রতি
       বৈষম্যে তাকে প্রতিবাদী করে তুলছে,এর ঘটনার সূত্রপাত সেই
       ছেলেবেলা থেকেই,ছেলেবেলা শব্দটিতেও তার আপত্তি কারন
       এতে ছেলে শব্দটি থাকায় নারীর প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে বলে
       এটা শব্দটি বর্জন করে উনি মেয়েবেলা শব্দটি ব্যবহার করেন।


প্রিন্সেসঃ এই মেয়েবেলা শব্দটির ধারনা এবং ব্যবহার কিন্তু আমার মন্দ
          লাগেনি । কেমন একটি নিজস্বতার ছোঁয়া খুঁজে পাই ।


আমিঃ এই ব্যপারে তোমার সাথে আমি একমত। বাল্যে ছেলে এবং মেয়ে
       শিশুর মধ্যে ছোট ছোট বিষয়ে পারিবারিক বলয়ে বিদ্যমান বৈষম্য
       তাকে প্রচলিত ব্যবস্থার প্রতি বিদ্রোহী করে তোলে পরবর্তীতে যার
       প্রভাব তার সামাজিক ও পেশাগত বলয়েও দেখা যায়। এই প্রতিবাদী
       সুরটিই মূলত তার লেখায় উঠে আসে, তার প্রথম দিকের লেখাগুলোতে,  
       নারীর পারিবারিক, সামাজিক ও সহজাত বঞ্চনা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে
       প্রচণ্ড প্রদিবাদী ও ব্যতিক্রমী একটি সুর ধ্বনিত হতে দেখা যায় তার ঐ        
       লেখাগুলোতে যা নারী স্বাধীনতার প্রচলিত ধারনা থেকে অনেক সতন্ত্র ।


প্রিন্সেসঃ হ্যা, এই স্বাতন্ত্র্যই তাকে আলাদা একটি অবস্থানে নিয়ে যায় ।
          
আমিঃ স্বভাবতই এই নতুন ধারনা একটি নতুনত্বের আবহ ও বিতর্কের
      জন্ম দেয় যা রাতারাতি এই লেখিকাকে নিয়ে আসে লাইম লাইটে ।
       পাশাপাশি তার লেখায় নারীর বঞ্চনার দিকটি উঠে আসায় নারী
       তথা সুশীল সমাজে তার এবং তার লেখার একটি আলাদা অবস্থান
       তৈরি হয় ।  পাঠক ও প্রকাশক মহলেও এর প্রভাব পরে ।  


প্রিন্সেসঃ কিন্তু পরবর্তী লেখাগুলোতে তিনি সীমা অতিক্রম করে যান
        ফলে তার লেখা বিতর্কিত হয়ে পড়ে ।


আমিঃ এই ব্যপারে আমার নিজস্ব একটি পর্যবেক্ষণ আছে । উনার লেখা
        যেহেতু ব্যক্তি কেন্দ্রিক এবং নিজস্ব বলয়ে আবর্তিত তাই একটা
        পর্যায়ে এসে উনার লেখার রসদ শেষ হয়ে যায়, যা বলার ছিল
        তা সব বলা শেষ হয়ে যায়, ততদিনে উনি একটি বিশেষ ধারার
        লেখিকা হিসেবে পাঠক ও প্রকাশক মহলে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে
        উঠেছেন । প্রকাশক ও পাঠক মহলের চাহিদা পূরণ, প্রতিবাদী
        ইমেজ ও জনপ্রিয়তা ধরে রাখা এবং বিতর্ক জিইয়ে রাখতে গিয়ে
        তখন উনি সীমা অতিক্রম করেন ।


প্রিন্সেসঃ তোমার বিশ্লেষণ যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত বলে মনে হচ্ছে যদিও আমি
        আগে এভাবে কখনো ভাবিনি ।


আমিঃ এই সীমা অতিক্রম আমরা দেখতে পাই তার বর্ণমালা ভিত্তিক
        নামের কিছু বইয়ে । চরম বিতর্কিত, কদর্য ও সরাসরি ব্যক্তিগত
        আক্রমণের পর্যায়ে পরে এমন কিছু বিষয় তার লেখায় উঠে আসে ।
        আসলে এই সময়ের আগেই উনি নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিলেন, এই
        অপচেষ্টা তাকে জনপ্রিয় থেকে বিতর্কিত লেখিকার তকমা লাগিয়ে
        দেয় । ধরম্পন্থী মৌল বাদীরা ক্ষেপে যায় । আর কিছু কারণে উনাকে
        দেশান্তরী হতে হয় ।    



বিদ্রঃ সাময়িক বিরতির পর আজ “ফেসবুক আমি এবং একজন প্রিন্সেস আদিয়াত” লেখাটির “নবম পর্ব” পোস্ট দিলাম । আগে প্রথম থেকে অষ্টম পর্ব পোস্ট দিয়েছিলাম । যারা ঐ কিস্তি আটটি পড়েননি তাদের অনুরোধ করবো পড়ে নিতে নাহলে পুরোপুরি রস আস্বাদন করতে অসুবিধা হবে। লেখাটা অনেক বড় হবে । লেখার কাজ চলছে । ১০০ পৃষ্ঠা + লেখার ইচ্ছে আছে, মাল, মসলাও রেডি । আপনি ঠিকই শুনেছেন ১০০+ পৃষ্ঠার একটি কবিতা । ভবিষ্যতে হয়তো একটি কবিতা দিয়েই একটি বই হলেও হতে পারে। সেটা নির্ভর করছে আপনাদের ভালো লাগা ও সমর্থনের উপর। কয়েকটি ধাপে বাকি অংশ গুলো আসবে । এটি মূলত ফেসবুক নির্ভর নতুন ঘরানার একটি গদ্য কবিতা । প্রথাগত কবিদের অনেকের কাছেই এটাকে কবিতা ভাবতে কষ্ট হতে পারে । এটা লিখতে গিয়ে আমারও একটি নতুন ধারা বলে মনে হয়েছে । অনেকটা Dialogue বা Conversation ধরনের যার প্লাটফর্ম হচ্ছে ফেসবুক ।  প্রথম দুইটা পর্বে যে গদ্য কবিতার কথা বলেছিলাম এটা সেই পরীক্ষা মূলক গদ্য কবিতা । তাই তালমিল বা ছন্দের ভেতর নয়, কাব্যিকতা খুঁজতে বলবো ভাষার ব্যবহার, উত্তর প্রতি উত্তর ও স্বগতোক্তির ছন্দের ভেতর। কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না যেন । সাথে থাকুন। ধন্যবাদ ।


রচনাকালঃ ৩০-০৯-১৩ ইং                                                                  (চলমান)