পূর্বসূত্রঃ  


[ আমিঃ বিবাহিত জীবনে কাদম্বরী দেবী সুখী ছিলেন না । বিবাহিত
        সম্পর্কের টানাপোড়নের কারণে তিনি ঠাকুর পরিবারের কাছ
            থেকে প্রাপ্য সম্মান পাননি । কাদম্বরীর নিজের গায়ের রঙও
        ছিলো শ্যামলা । সে তুলনায় তার স্বামী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ছিলেন
        রাজপুত্রের মতো সুদর্শন।


………………………………………………………………...


………………………………………………………………...


আমিঃ এই সীমা অতিক্রম আমরা দেখতে পাই তার বর্ণমালা ভিত্তিক
        নামের কিছু বইয়ে । চরম বিতর্কিত, কদর্য ও সরাসরি ব্যক্তিগত
        আক্রমণের পর্যায়ে পরে এমন কিছু বিষয় তার লেখায় উঠে আসে ।
        আসলে এই সময়ের আগেই উনি নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিলেন, এই
        অপচেষ্টা তাকে জনপ্রিয় থেকে বিতর্কিত লেখিকার তকমা লাগিয়ে
        দেয় । ধরম্পন্থী মৌল বাদীরা ক্ষেপে যায় । আর কিছু কারণে উনাকে
        দেশান্তরী হতে হয় । ]


দশম পর্বঃ স্বতঃস্ফূর্ত  


প্রিন্সেসঃ নতুন আঙ্গিকে চিন্তা ভাবনা, এটা কি তোমার নিজস্ব ধ্যান
          ধারনা নাকি কোন সুত্র থেকে পাওয়া ?


আমিঃ এ আমার একান্ত নিজস্ব চিন্তা ভাবনা, এই বিষয়ে অবশ্য
        বিতর্কও চলতে পারে, কারন এটি কোন প্রতিষ্ঠিত সত্য নয়,
         কেবল আমি দুই দুই মিলিয়ে চার করেছি বলতে পারো,
         কারন যে ধারার লেখার জন্য উনি জনপ্রিয় হয়েছিলেন
         তার রসদ একটি পর্যায়ের ভেতর সীমিত, সারাজীবন
         ধরে লিখে যাবার মত নয়, কিছু লেখা শেষ হলেই মুল
         বক্তব্যের যায়গাটির উপর আলোকপাত শেষ হয়ে যায় ।


প্রিন্সেসঃ উনার খুব বেশী লেখা আমি পড়িনি, কিন্তু সেক্ষেত্রে তো
          আত্মজীবনী মূলক লেখার পাশাপাশি গল্প বা কবিতাতে
          ধারাবাহিক হতে পারতেন, উনার কিছু কিছু গল্প এবং
          কবিতাও আমি দেখেছি ।


আমিঃ উনার গল্প বা কবিতার মুল সুরটিও কিন্তু ঐ একই ধারা
        থেকে উদ্ভূত, এই একক কেন্দ্রিকতাই উনার জন্য কাল
        হয়ে দাড়ায় এক সময় । একজন পরিণত লেখকের যে
        বহুমাত্রিকতা সেটা উনার লেখায় আমার চোখে পড়েনি ।


প্রিন্সেসঃ ভেতরে প্রতিভা থাকলে উনি তো চাইলে অন্য অনেক
         বিষয় নিয়েই লিখতে পারতেন ।


আমিঃ সে চেষ্টা দেখিনি, এর পেছনে সেই পাঠক ও প্রকাশকের
        চাওয়া একটি বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে হয়, হয়তো
        প্রকাশক উনার থেকে ঠিক ঐ ইস্যুতেই লেখা চেয়েছেন ।
        যা চলছে চলুক, ভিন্ন কিছু করতে গেলে কাটতি কমে
        যেতে পারে । এদিকে তো উনার ঐ ইস্যুতে বলার মুল
        জায়গাটি ইতিমধ্যে নিঃশেষ  যা আমি আগেই বলেছি ।


প্রিন্সেসঃ উনার লেখার ভেতর যে প্রতিবাদী ধারাটি ফুটে উঠে
         তা কিন্তু নারী স্বাধীনতা ছাড়াও সমাজের আরও অন্য
         অনেক বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারতো ।


আমিঃ হয়তো, কিন্তু তা তো হয়নি, সেক্ষেত্রে আমরাও হয়তো
       উনার থেকে আরও ভালো কিছু সার্ভিস পেতে পারতাম।
       উনার লেখা অনেক সময়েই প্রতিবাদের শৈল্পিক পর্যায়
       ছেড়ে আক্রমণের পর্যায়ে চলে যেতে দেখা যায় ।


প্রিন্সেসঃ কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারও তো প্রয়োজন আছে বলে মনে
         হয় । সমাজ দেহে এমন কিছু দুষিত ক্ষত আছে যা
         দূর করতে হলে কঠিন হবার প্রয়োজন আছে বৈকি ।


আমিঃ উত্তরটা আপেক্ষিক, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটাও সত্যি,কিন্তু
       শৈল্পিক প্রতিবাদের মাধ্যমে মানুষের মনে প্রভাব বিস্তার
       করা যায় কিন্তু আক্রমণ বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই একটি বৈরি
       পরিবেশ ও আবহ তৈরি করে এমনকি অনেক সময় তা
       প্রতি আক্রমণ ডেকে আনতে পারে ।        


প্রিন্সেসঃ তোমার কথা ও বিশ্লেষণ শুনে তো মনে হয় উনার
         অনেক লেখা পড়েছ ?


আমিঃ একসময় আমার খুব পড়ার বাতিক ছিল, শুধু উনার
        লেখা নয় হাতের কাছে যা পেয়েছি তাই পড়েছি, সে
        জরাসন্ধের ন্যায়দণ্ড থেকে মেয়েদের শসার ফেসপ্যাক
        বানানোর তরিকা, রুবাইয়াৎ ওমর খৈয়াম থেকে পটকা
        তৈরির নিয়ম, বাদামের ঠোঙ্গার কাগজের লেখা বা নানার
        আমলের পুরনো দলিল দস্তাবেজ যখন যা হাতের সামনে
        পেয়েছি পড়ে ফেলেছি, কিছুই বাদ যায়নি, হা হা হা  ।


প্রিন্সেসঃ হি হি হি, ফেসপ্যাক তৈরির নিয়মের বই আবার কোথায়
        পেলে তুমি ? আর পটকা  বানানো শিখেই বা তোমার
        কি লাভ হয়েছে ?


আমিঃ লাভ ক্ষতির কথা তো ভাবতে যাইনি, আমি বরাবর কলেজ
       লাইব্রেরি, পাবলিক লাইব্রেরি, গন উন্নয়ন গ্রন্থাগার, বিশ্ব
       সাহিত্য কেন্দ্র ছাড়াও স্থানীয় কয়েকটি স্টাডি সার্কেলের
       নিয়মিত সদস্য ছিলাম, এর বাইরেও আমার নিজস্ব একটি
       মিনি লাইব্রেরি ছিল পাঁচ শয়ের বেশী বইয়ের সংগ্রহ ছিল
       সেই মিনি লাইব্রেরিতে ।


প্রিন্সেসঃ ছিল বলছ কেন, এখন নেই ?


আমিঃ সেটা এক দুঃখের কাহিনী, ঐ সময় আমার কিছু ফ্রেন্ড
        এবং ওদের কিছু ফ্রেন্ড, যারা সবাই ছাত্র, ফ্ল্যাট ভাড়া
        করে একসাথে থাকতাম, একবার অডিটের কাজে মাস
        দুয়েকের জন্য ঢাকা থেকে চিটাগাং যেতে হয়েছিল, ফিরে
        এসে দেখি আমার লাইব্রেরির প্রায় সব বইই হাপিশ ।


প্রিন্সেসঃ কেন, কি হয়েছিল, মার্ক টোয়েন শুনেছিলাম বন্ধুদের
         থেকে বই ধার করে রীতিমত লাইব্রেরি তৈরি করে
         ফেলেছিলেন । তোমার বন্ধুদের ভেতর মার্ক টোয়েন
         নামে কি কেউ ছিল নাকি ?



বিদ্রঃ সাময়িক বিরতির পর আজ “ফেসবুক আমি এবং একজন প্রিন্সেস আদিয়াত” লেখাটির “দশম পর্ব” পোস্ট দিলাম । আগে প্রথম থেকে নবম পর্ব পোস্ট দিয়েছিলাম । যারা ঐ কিস্তি নয়টি পড়েননি তাদের অনুরোধ করবো পড়ে নিতে নাহলে পুরোপুরি রস আস্বাদন করতে অসুবিধা হবে। লেখাটা অনেক বড় হবে । লেখার কাজ চলছে । ১০০ পৃষ্ঠা + লেখার ইচ্ছে আছে, মাল, মসলাও রেডি । আপনি ঠিকই শুনেছেন ১০০+ পৃষ্ঠার একটি কবিতা । ভবিষ্যতে হয়তো একটি কবিতা দিয়েই একটি বই হলেও হতে পারে। সেটা নির্ভর করছে আপনাদের ভালো লাগা ও সমর্থনের উপর। কয়েকটি ধাপে বাকি অংশ গুলো আসবে । এটি মূলত ফেসবুক নির্ভর নতুন ঘরানার একটি গদ্য কবিতা । প্রথাগত কবিদের অনেকের কাছেই এটাকে কবিতা ভাবতে কষ্ট হতে পারে । এটা লিখতে গিয়ে আমারও একটি নতুন ধারা বলে মনে হয়েছে । অনেকটা Dialogue বা Conversation ধরনের যার প্লাটফর্ম হচ্ছে ফেসবুক ।  প্রথম দুইটা পর্বে যে গদ্য কবিতার কথা বলেছিলাম এটা সেই পরীক্ষা মূলক গদ্য কবিতা । তাই তালমিল বা ছন্দের ভেতর নয়, কাব্যিকতা খুঁজতে বলবো ভাষার ব্যবহার, উত্তর প্রতি উত্তর ও স্বগতোক্তির ছন্দের ভেতর। কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না যেন । সাথে থাকুন। ধন্যবাদ ।


রচনাকালঃ ০৭-১০-১৩ ইং                                                                  (চলমান)


দৃষ্টি আকর্ষণঃ আজ রাতের আগে আর আসরে আসা হবে না । ভালো থেক বন্ধুরা ।
রাতে ফিরে সবার কবিতা পড়ার ইচ্ছে রইল ।