রাত আমার নিমগ্ন চেতনায় এক অনন্ত রহস্যময় অস্তিত্বের নাম, জিবন্ত রাত্রির আছে নিজস্ব সত্ত্বা, রূপ মাধুরী, বিবর্তনশীল রাত আবার ছলনাময়ী নারীর মত প্রহরে প্রহরে তার রূপ বদলায় । ব্যক্তিভেদে মানব সত্ত্বায় রাতের রয়েছে আলাদা আলাদা আবেদন তাইতো কবি তুলসীদাস বলেছিলেনঃ  


“প্রথম প্রহরে সবাই জাগে, দ্বিতীয় প্রহরে ভোগী।
তৃতীয় প্রহরে তস্কর জাগে চতুর্থ প্রহরে যোগী”।


এই লাইন দুটির আলোকে এবার রাত্রিকে একটু বিভাজনে ব্রতী হওয়া যাক ।


প্রথমে আসি প্রহর প্রসঙ্গে, প্রহর কাকে বলেঃ  
প্রহর সময়ের পুরোনো দেশী একক। অষ্টপ্রহর মানে একদিন। অতএব সে হিসাবে এক প্রহর সমান তিন ঘণ্টা। প্রহর ব্যবস্থায় দিন সকাল ছয়টায় আরম্ভ হত, আর রাত সন্ধে ছটায়। দিনের চার প্রহরকে দিবা প্রহর ও রাতের বেলায় বলা হয় রাত্রী প্রহর। অতএব প্রথম প্রহর মানে ৬টা থেকে ৯টা, দ্বিতীয় প্রহর মানে ৯টা থেকে ১২টা, তৃতীয় প্রহর মানে ১২টা থেকে ৩টে আর চতুর্থ প্রহর মানে ৩টে থেকে ৬টা। এভাবে রাত্রি ও দিনের আবর্তনে প্রহরেরও আবর্তন ধরা হত ।


অহ্নঃ
দিনের বারো ঘন্টাকে তিন অহ্নে ভাগ করা হয়। দিনের পুর্বভাগ পুর্বাহ্ন (সুর্য প্রখর হয়ে উঠার আগ পর্যন্ত), দিনের মধ্যভাগকে মধ্যাহ্ন(সবচেয়ে প্রখর সুর্য যে সময়) আর অপরাহ্ন হল আবার শীতল হতে থাকা দিনের শেষ ভাগ।


তিথিঃ
চাঁদের এক দিনকে তিথি বলে। তিথি মোটামুটি ১৯ ঘন্টা থেকে ২৬ ঘন্টায় হয়। চাঁদের পৃথিবীকে আবর্তনের কারনে যে সময়ে চাঁদ ও সুর্য কর্তৃক পৃথিবীর সাথে তৈরিকৃত কোন ১২ ডিগ্রী পরিমাণ বাড়ে সেই সময়ই তিথি। ওদিকে আবার পৃথিবীও সুর্যের চারিদিকে ঘুরছে উপবৃত্তাকার পথে। একারনে এই ১২ ডিগ্রী সরে যাওয়ার সময়টা কোন স্থির সময় নয়। তাই প্রহরের মত তিথি দিনের "কোন একটা নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হবে" এবং "নির্দিষ্ট পরিমাণ সময়" এরূপ বলা যায় না।


পক্ষঃ
পনের তিথিতে এক পক্ষ। দুই পক্ষে মোটামুটি হিসাবে সাড়ে ঊনত্রিশ দিনকে এক চান্দ্র মাস বলা হয়। দুই পক্ষের মধ্যে কৃষ্ণ পক্ষ হল পুর্নিমার পরদিন থেকে অমাবস্যা পর্যন্ত সময় আর শুক্লপক্ষ হল অমাবস্যার পরদিন থেকে পুর্নিমা পর্যন্ত সময়।


ঋতুঃ
দুই মাসে এক ঋতু। কাগজে কলমে মোট ছয়টি ঋতু গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত যার প্রত্যেকটির রয়েছে আলাদা আলাদা রূপ মাধুরী ও স্বকীয় চরিত্র ।  


আয়নঃ
তিন ঋতুতে এক আয়ন। দুই আয়নে এক বছর। আয়ন দুইটি হল উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ণ । উত্তরায়ণ হল দক্ষিণ অয়নান্ত (২২ ডিসেম্বর, Winter solstice ) থেকে উত্তর অয়নান্ত (২১ জুন, Summer solstice ) পর্যন্ত সময়কাল। এই সময় সূর্য উত্তর দিকে হেলে পড়তে থাকে। সুর্য যে দিন(২১ জুন) সর্বোচ্চ পরিমানে উত্তর দিকে হেলে যায়, সেদিনকে উত্তর আয়নান্ত বলা হয়। এই দিনটা বছরের সবচেয়ে বড় দিন। আর বিপরীতক্রমে, দক্ষিণায়ণ হল ২১ জুনের পর থেকে ২২ ডিসেম্বর। মকর সংক্রান্তি বা উত্তরায়ন সংক্রান্তি কিন্তু ২২ ডিসেম্বর নয়, যদিও শুরুতে এটা ২২ ডিসেম্বর পালন করা হত বর্তমানে তা ১৫ জানুয়ারির দিকে পালন করা হয়।
বছর, যুগ ও শাতাব্দীঃ
বারো মাস বা দুই আয়নে হয় এক বছর । বারো বছরে এক যুগ, আর শত বছরে এক শতাব্দী ।