এক সন্ধ্যায় প্রতিদিনের মত সূর্যটা আর পাটে গেল না
দিনের কাজ শেষে অফিস ফিরতি ঘরমুখী ক্লান্ত মানুষের
ভীড় অবাক বিস্ময়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখতে
পেল সময়ের কাটা স্থির হয়ে আটকে আছে দ্বিপ্রহরের ঘরে,
থেমে আছে, নড়ছে না একচুলও, দেখল সময় লটকে আছে
অফিস পাড়ার টেলিফোন টাওয়ারের উচু নেটওয়ার্কে ।


স্কুল ফিরতি ছেলে মেয়েদের সেদিন আর ঘরে ফেরা হলো  না,
স্কুলের ঘণ্টা বাজলো না, কোন  ক্লাস হলো না, পড়া দিতে হল না,
টিফিন হলো না, অদ্ভুত চোখে  সবাই দেখল সময় লটকে আছে
পুকুর পারের বড় জামরুল গাছটার সবচেয়ে উচু মগডালে ।


দোকানী দোকান ফেলে দুপুরের খাবার খেতে গেল না,
ঘরের বউয়েরা উনুনে রান্নার চাল তুলে দিতে ভুলে গেল,
পত্রিকাওয়ালারা সেদিন আর নতুন কোন খবর ছাপলো না,
তাই কেউ জানতেও পারলো না আজ দ্বিপ্রহরে সময় লটকে
গেছে ঊর্মিলাদের আকাশ ছোঁয়া সাদা বাড়ীটার ছাদের কার্নিশে ।


সময় আটকে গেছে বলে সেদিন বুড়ো ইসকান্দর মালীও
রোজকার মতো গোলাপ  বাগানে নিয়মের জল দিতে ভুলে গেল,
সময় আটকে গেছে বলে পাখিরা আর ঘরে ফিরে এলো না,
সময় আটকে গেছে বলে সবুজ কৃষ্ণচুড়ার লাজুক কলিগুলো
আর মুখ তুলে লাল কৃষ্ণচুড়া হয়ে ফুটে উঠে হৃদয় রাঙাল না,
সময় আটকে গেছে বলে প্রেমিক স্বামী তার সদ্য বিবাহিত
তরুণী বঁধুর জন্য আলতার লাল আনতে ভুলে গেলো সেদিন।


সময় আটকে গেছে বলে শাহবাগ থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ঢাকার
সবচেয়ে ব্যস্ত তুমুল রাজপথ ভরদুপুরে থাকলো শুনশান নিস্তব্ধ,
সময় আটকে গেছে বলে গাড়িগুলো অবস্থান ধর্মঘটের ডাক দেয়া
বেফাস নেতাদের মত মাঝ রাস্তায় নিশ্চুপ দাড়িয়ে রইলো,
স্থির পৃথিবীর কোন যাত্রী আর তার গন্তব্যে যেতে পারলো না  
সময় আটকে গেছে বলে গলির মোড়ে শুয়ে থাকা নব্বই বছরের
বুড়ো আইজুদ্দিন আর তার পুরনো সেই শ্বাসকষ্টে ভুগলো না,
সময় আটকে গেছে বলে পাড়ার মোড়ের প্রতিষ্ঠিত ভিখারিটাও
ভিক্ষার বাটি হাতে চুপচাপ বসে রইল, ভিক্ষা চাইলো না,
সদ্য ঘুমভাঙা শিশুটি অবাক বিস্ময়ে দেখল সময় লটকে
আছে রাস্তার মোড়ের সবচেয়ে উচু বৈদ্যুতিক খুঁটির মাথায় ।


সময় আটকে গেছে বলে যে যার স্থানে স্থির হয়ে রইলো,
কেউ একচুল সামনে বা পিছনে এগোল বা পিছলো না,  
সময় আটকে গেছে বলে আমার কলম কেপে গেলো ,
আজ আর হৃদিয়ের জমিতে কোন কবিতার চাষ হল না,
সময় আটকে গেছে বলে আমার নরম প্রেয়সীর রোদেলা
চোখ থেকে কিছুতেই আমার চোখ থেকে আর সরলো না,
আমাদের কারো চোখেই আজ কিছুতেই পলক পড়লো না,
সময় লটকে রইলো আমাদের মাঝে এক অলঙ্ঘ্য বন্ধন হয়ে ।
বাকি পৃথিবী না জানলেও মুহূর্তকে অমর করে দিয়ে সত্যিই
সময় লটকে গিয়েছিল প্রেয়সীর চোখের লাজুক হাসিতে ।




বি দ্রঃ সময় কখনো আটকায় না, তবে কোন কোন ঘটনায় মানুষ আনন্দ
বা শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় । তখন কিছু সময়ের জন্য হলেও বাকি পৃথিবীটা
চললেও ঐ মানুষটার মন জগতে সময় থমকে যায় ।