এ হল গিয়ে কবিতা আরোহী পঞ্চদশ,
আরোহীতে লাইন বর্ণের উল্টো রথ,
প্রথম লাইনে পনের বর্ণ রয়
চতুর্দশ বর্ণে দ্বিতীয় লাইন,
তৃতীয় লাইনে তেরটি বর্ণ,
প্রতি লাইনে বর্ণ কমবে,
আরোহীতে প্রতি লাইনে
বর্ণ কমতে কমতে
একে এসে থামবে,
বর্ণের আবহে
ভাবের ঘরে
নিম্নমুখী
আরোহ
হবে
যে ।  


ঘরানাঃ আরোহী পঞ্চদশ



দৃষ্টি আকর্ষণঃ অবরোহী কবিতাকে অবরোহী ঘরানায় আদলে সংজ্ঞায়িত করার ধারাবাহিকতায় আজ এলো আরোহীর আদলে আরোহীকে সংজ্ঞায়িত করার প্রয়াস । ইতিপূর্বে নদী ও নারী বিষয়ক একটি বৃহৎ কবিতার মুল ভাবকে এই ঘরানায় তুলে আনার প্রয়াসের লক্ষ্য ছিল এই ঘরানার লেখা দিয়ে ভাবের পরিপূর্ণ প্রকাশ সম্ভব কিনা তা যচাই করে দেখা । আজকের এই লেখার উদ্দেশ্য হল একই কবিতার ভেতর সে কবিতার সংজ্ঞা ও উদাহরণ একীভূত করে এই ধারার লেখার ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করা । এই ঘরানার কবিতা দিয়ে সব বলা যায়, এটি তার আরেকটি উদাহরণ । আগামীতে সমারোহীর আদলে সমারোহীকে সংজ্ঞায়িত করার ইচ্ছে রইল  ।  ইতিপূর্বে বাংলা কবিতায় আরোহীর গঠন সম্পর্কে বিশ্লেষণমূলক লেখা দিয়েছি । যারা কবিতা আসরে নতুন বা এই আরোহী সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তাদের জন্য এই গঠন প্রণালী আবার দেখালাম ।


ঘরানা বিশ্লেষণঃ “আরোহী পঞ্চদশ” ধারাটি অবরোহীর বিপরীতক্রমে অর্থাৎ ১৫ শব্দে শুরু হয়ে এক শব্দে এসে শেষ হবে, এর ফলে লাইন সংখ্যা ও শব্দ সংখ্যার বিপরীত অনুক্রম হবে, এটির আকৃতির সাথে পিরামিডের কোন মিলও থাকবে না বা এই ধরনের কোন কাজ বাংলা বা ইংরেজি কোন ভাষার সাহিত্যেই হয় নি । অনলাইন বা অফলাইন কোথাও এরকম কিছু পাইনি, যা পেয়েছি বড়জোর পিরামিড আকারের দুই একটি লেখা এতে এরকম কোন লাইন বা বর্ণ বিন্যাস পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়নি, তাই নিজেই আজ সূচনা করলাম ‘অবরোহী ও আরোহী পঞ্চদশ’ নাম দিয়ে এই ঘরানার লেখা । এই ভাবনার ধারাবাহিকতায় আজ প্রকাশিত হল “আরোহী পঞ্চদশঃ তৃতীয় পক্ষ” । এটি অবরোহীর বিপরীত ক্রমে বা লাইন ও বর্ণসংখ্যা একে অন্যের বিপরীত অনুক্রমে বসবে । এই ধারাটি বোঝার জন্য আমার আজকের কবিতা “আরোহী”কে লাইন অনুসারে বিশ্লেষণ করে দেখানো যেতে পারে ।  



আরোহী


লাইন      কবিতা                                   বর্ণসংখ্যা


০১          এ হল গিয়ে কবিতা আরোহী পঞ্চদশ       ১৫
০২          আরোহীতে লাইন বর্ণের উল্টো রথ,        ১৪
০৩          প্রথম লাইনে পনের বর্ণ রয়                 ১৩
০৪          চতুর্দশ বর্ণে দ্বিতীয় লাইন,                  ১২
০৫          তৃতীয় লাইনে তেরটি বর্ণ,                   ১১
০৬          প্রতি লাইনে বর্ণ কমবে,                     ১০
০৭          আরোহীতে প্রতি লাইনে                     ০৯
০৮          বর্ণ কমতে কমতে                           ০৮
০৯          একে এসে থামবে,                           ০৭
১০          বর্ণের আবহে                                 ০৬
১১           ভাবের ঘরে                                  ০৫
১২           নিম্নমুখী                                      ০৪
১৩           আরোহ                                      ০৩
১৪           হবে                                          ০২
১৫           যে ।                                          ০১


ঘরানার উৎপত্তিঃ অবরোহী শব্দটি এসেছে অবরোহ শব্দ থেকে যার আভিধানিক অর্থ উপর থেকে নিচে নেমে আসা, এর বিপরীত শব্দ আরোহী । এই কবিতা পর্বতারোহীর মত অবরোহী কবিতা উপর থেকে নীচে স্ফীত হয়ে নেমে এসেছে বলে এই নাম, আর উল্টোটি হল আরোহী । শাব্দিক অর্থ ছাড়াও আরোহ এবং অবরোহ যুক্তি বিদ্যায় বিশ্লেষণ ও সত্য অনুসন্ধানে শব্দ দুটির ব্যবহার হয়, এই কবিতায়ও আছে গঠনগত আদলের সাথে ভেতরে এক অন্ত নিহিত সত্য খোঁজার প্রয়াস। অনিশ্চিত পৃথিবীতে মানুষ যুগে যুগে বিভিন্নভাবে সত্য খুঁজেছে। অনুসন্ধিৎসু মন বারবার মানুষকে নানা গোলক ধাঁধায় নিক্ষেপ করেছে। এ ধাঁধা মানুষকে সত্যে উপনিত হতে সাহায্য করেছে। সত্যের আপাত-স্ববিরোধীতায় দার্শনিকদের আসল মজা। Soren Kierkegaard বলেছিলেন “ The thinker without paradox is like a lover without feeling, a paltry mediocrity.” কোন তত্ত্বীয় আলোচনায় না গিয়ে আজকে যুক্তিশাস্ত্রের দুটি সাধারণ বিষয়ের উপর একটু দৃষ্টি দিব।
বিজ্ঞান-গবেষণা-যুক্তিশাস্ত্রে দুটি স্বীকৃত পদ্ধতি হচ্ছে
১) অবরোহ (Deductive)
২) আরোহ (Inductive)


অবরোহ (Deductive): একটি চূড়ান্ত সত্যের মাধ্যমে পূর্ব নির্ধারিত/ প্রমানিত একটি সত্য থেকে কতোগুলো সরল সত্যে উপনিত হওয়ার পদ্ধতি হচ্ছে অবরোহ।


উদাহরণঃ ০১
-মানুষ মরণশীল
-আবুল একজন মানুষ
সুতরাং আবুল মরণশীল


উদাহরণঃ ০২
মাছ জলজ প্রাণী
রুই একটি মাছ
সুতরাং রুই জলজ প্রাণী


আরোহ (Inductive) এটা হচ্ছে কতোগুলো সরল সত্যের মাধ্যমে একটি সাধারণ সত্য বা চূড়ান্ত সত্যে উপনীত হওয়া।


উদাহরনঃ ০১
আবুল মরণশীল
রহিম মরণশীল
করিম মরণশীল
চুড়ান্তঃ সব মানুষ মরনশীল


উদাহরণঃ ০২
শিং মাছ জলজ প্রাণী
কৈ মাছ জলস প্রাণী
রুই মাছ জলজ প্রাণী
চূড়ান্তঃ সব মাছ জলজ প্রাণী ।


শেষ কথাঃ এভাবে আরোহী ও অবরোহী কবিতায়ও থাকতে পারে জীবন ও জগতের ভাল মন্দের গোলক ধাঁধা থেকে সত্য খোঁজার প্রয়াস। এটি কেবল শুরু, আরও অনেক গবেষণা ও চর্চা দরকার আছে এই বিষয়ে । এই ঘরনার লেখাকে এটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে কাজ করতে হবে সবাইকে, কবিতা আসরের বন্ধুদের কলমে একটি অবরোহী বা আরোহী লেখা পেলে সেটি হতে পারে এই অগ্রযাত্রায় একটি শুভ পদক্ষেপ । ভালোবাসা ।