যুগে যুগে  রূপে  রূপে মাগো তুমি করুণাধারার জলভূমি,  
কখনো শ্বেত শুভ্ররুপে মাগো তুমি মনোহর কামিনী,
কখনো খোঁপাখুলে এলোচুলে মাগো তুমি জগৎজননী দামিনী,
কখনো অশুভ জয়ে মাগো তুমি চির বিধ্বংসী মাতঙ্গিনী ।


ক্ষণে ক্ষণে মাগো তোমারে যতই নিবিড়ে চিনিবারে পাই,
তুমি ছাড়া এ জগতে মোর এহেন সুহৃদ আর কেহ নাই,
কোমল হৃদয়ে ঢেকেছ তুমি ঘরহারা বৈশাখের ঝঞ্জাক্ষুব্ধ রাত,
নিদাঘের খরতাপে কভু ছাড়োনি মাগো তুমি সন্তানের সুকোমল হাত ।


তোমার নামে মাগো শুরু আমার নিজ বর্ণমালার প্রথম পাঠ,
কঠিন জগতভূমে মাগো তুমি আমার বিজয়ের প্রথম চৌকাঠ,
তোমার যতোটা চিনেছি মাগো বিধাতারে পারিনি স্মরিতে তত,
সে লয়ে দুঃখ নেই জমা, জানি মা তুমিও জীবনের মত সতত ।    


তোমার উষ্ণ আঁচল শুষেছে শিশুতোষ দুঃখের যত লোনা জল,
বিপদে আপদে ঐ আচল মাগো নির্ভরতা নিরাপত্তার কেন্দ্রস্থল,
জীবনের পলে পলে সে মোছায় জমে ওঠা গ্লানির দুঃসহ ক্লেদ যত,  
তোমার থেকে যতই দূরে যাই সে আচল ঘিরে থাকে ছায়ার মত ।  


তোমার চোখে মাগো প্রথম দেখেছি জগতের সজীব সবুজ রুপ,
তুমি জ্বেলেছ মাগো জীবন মরণের সব অধ্যায়ে পবিত্রতার ধূপ,
যতই বলি মাগো তোমারে নিয়ে জমা কথার ঝুড়ি হবেনা কভু শেষ,
জন্ম জন্মান্তরে মাগো রয়ে যাবে তোমারে জড়িয়ে বেজে যাওয়া সুরের রেশ ।


বয়েসের ভারে সময়ের টানে যতই মাগো হতে চেয়েছি মহীরুহ বটবৃক্ষ,  
তোমার কাছে সতত রয়ে গেছি সেই ছোট শিশুটি চির অবোধ অবক্ষ,
শিক্ষকের চেয়ে বড় শিক্ষক তুমি গড়েছ জীবন দিয়ে আদর ও শাসন,  
সন্তানের ভুল কখনো পারেনি মাগো তোমার চোখে আনতে ভ্রূকুটির বান ।


বিধাতারে দেখিনি স্বচক্ষে তোমারে দেখেছি জগতে তার সুযোগ্য প্রতিনিধি,
তোমার ভালোবাসায় পেয়েছি খুঁজে মাগো মানুষ হবার ঐশ্বরিক আকুতি,
এ জগতেরে যত চিনেছি তত জেনেছি মাগো জীবনে তোমার অবদান,
বহমান জীবন যমুনায় মাগো তুমি উদার প্রকৃতির মত শাশ্বত মহীয়ান ।