একটা বাগান ছিল । ফুল-ফল-পাখি-বাতাস- পাখির গান সমস্ত মিলে তপোবন না হলেও একটা সুন্দর উদ্যান বিরাজ করছিল নেট দুনিয়ায় । এখানে পাখিরা গান গায় , গান লেখে , কিছু পাখি কবিতা লেখেন তাদের মধ্যে কিছু পাখি কবিতা পড়েনও । নিজেদের আনন্দ আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাঠক-শ্রোতার আনন্দই ছিল মুখ্য । একবিংশ শতাব্দীর পাখিদের জীবনেও ভীষন স্ট্রেস , অফিসে-বাড়িতে । যাদের অফিস নেইন , এই ডাল সেই ডাল , এই ফুল সেই ফল করেও অনেক চাপ । তাই নিজেকে তরতাজা রাখতে এই বাগানের পাখিরা স্বত্স্ফুর্ত সাহিত্য চর্চা করে নিজেদের তরতাজা রাখেন  । যাতে পরদিন সকালে এই-ডাল-সেই-ডগাতে 'বাদুর ঝোলা' হয়ে নিজ নিজ  ক্ষেত্রে পৌঁছনর শক্তিটুকু পান । হ্যাঁ , এখন পাখিদেরও বাদুরের সাথে কম্পিটিশন ।


তপোবনের এক বহু পুরনো, বরখাস্ত হওয়া মালি একদিন নেট দুনিয়ায় বি-গ্রেড বাংলা গল্প খোঁজ করতে করতে হঠাত সেই বাগানের দেখা পেলেন  । মালি বলে কথা , বাগান খুব প্রিয় ।  কিন্তু কিছুক্ষন  এই ফল সেই ফল খাওয়ার পর পেট ভরতেই দেখতে পেলেন সেখানকার পাখিদের । ও মা , একি বেয়াদব সব পাখি । গান করে সুর বোঝে না , কবিতা লেখে বিন্যাস-বানান কিছুই জানে না , কবিতা পড়ে উচ্চারণ পারে না । শুধু একে অন্যকে গান-কবিতা-ছরা শোনায় আর নিজেদের আনন্দে মেতে থাকে । মালি দেখে বেজায় রেগে গেলেন । তাঁর সময়ে তো এইসব বেয়াদবি বরদাস্ত করা হত না । মনে মনে স্থির করলেন পাখি গুলোকে শিক্ষা দেওয়া দরকার ।
বরখাস্ত হওয়া মালি তাঁর ভাগ্নেকে তলব করলেন । ভাগ্নে মালি এই চাকরির বাজারে মন্দার যুগে কাজ পেয়ে ছুটে এলেন ।  ভাগ্নেকে  মালি আদেশ দিলেন পাখি গুলোর শিক্ষার ব্যবস্থা কর । ভাগ্নে কাজে লেগে পড়লেন । স্থির করলেন সবার আগে প্রয়োজন পরিবেশ , শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ । এমন শান্ত আনন্দঘন পরিবেশে কি আরভ শিক্ষা হয় । তাই বাগানের শান্তি নষ্ট করতে শুরু হল উত্পটাং মন্তব্য । মন্তব্য পৌঁছল বড় পাখি থেকে ছোট পাখি পর্যন্ত । আস্তে আস্তে মন্তব্যের ভাষা ও সাইজ এমন হল যে কবিতা-গান সব ঢাকা পড়ে গেল । কিছু কিছু শান্তি প্রিয় পাখিতো বাগান ছেড়ে দুর রাজ্য ফেসবুকে পাড়ি দেবার কথা ভাবলেন । এবং করলেন ও তাই । আস্তে আস্তে বাগানের সম্মানীয় এবং  অনেক ক্ষেত্রে বয়সে বড় পাখিরা বাগান ছারতে শুরু করলেন । কিছু মাঝরি পাখি কবিতা-গান সাময়িক বন্ধ রাখলেন সম্মান খোয়ানোর আশঙ্কায় । পড়ে রইল কিছু ছোট পাখি , ভাগ্নে ভাবলেন এবার তাহলে শিক্ষা শুরু করা যাক । বুড়ো ভাম গুলোকে তো আর শিক্ষা দেওয়া যায় না !!!
ডাক পড়ল দুরদেশের বাগান ' পচা আস্তানা', 'জঞ্জাল বাগান' , 'অস্বচ্ছ ভারত উদ্যান' এবং আরো অনেক বাগানের পন্ডিত মালিদের। একে একে  বিন্যাসবিদ পটল এলেন , বানান  বিশেষজ্ঞ মুরগীড় ডিম এলেন , ছন্দ বিষয়ক পণ্ডিত অতিরঞ্জন এলেন , অবশেষে এলেন সমস্ত তাত্ত্বিক বিষয়ের পন্ডিত  কাঁচাভুত । শিক্ষাদান শুরু হল । কবিতায় কবিতায় খুঁজে খুঁজে ভুল ত্রুটি দেখে বিরাট বিরাট মন্তব্য । পাখিটা মন্তব্যের সাইজ দেখে ভয় পেল । খুলতে বেশি ডাটা লাগে যে ! একদিন বড় মালি দেখতে এলেন শিক্ষার হাল হকিকত । রেগে গিয়ে বললেন " ভাগ্নে , অল্প পুঁথির কম্ম নয় , আলোচনা সভায় ডাকো সব ব্যাটাকে এক সাথে । তার পর এমন পোস্ট দাও যেন কোনো ব্যাটা আর কবিতা-গানের নাম না করে "।
ভাগ্নে মামার কথা মত নির্দেশ দিলেন পন্ডিতদের । পন্ডিতরা শুরু করলেন গুগুল সার্চ, উইকিপিডিয়া , ইয়াহু আরো কত কি । পটল পন্ডিত বললেন " অল্প ডাটার কম্ম নয় আমি চললাম তোদের বাগান ছেড়ে " ।
শুরু হল ডাউনলোড একের পর এক । উইকিপিডিয়ার নকল তার নকল তারো নকল । যাকে বলে শিক্ষার হদ্দমুদ্দ ।
এরপর শুরু হল আলোচনা সভায় পেস্ট । একের পর আরেক । পোস্টের চেহারা এমন হল যে কিছু পাখি নিস্বাস-প্রশ্বাস এর জায়গা না পেয়ে বাগান ত্যাগ করার কথা ভাবতে শুরু করলেন । মনে খুব কষ্ট নিয়ে পাখিরা সব ঘর বন্দি হয়ে থাকে শিক্ষার ভয়ে । পন্ডিত মহাশয়রা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাখিদের নাকে মুখে শিক্ষা কলম দ্বারা গুঁজে দিতে থাকলেন ।
অবশেষে শিক্ষা পুর্ণ হল ।  বড় মালি খুশি হয়ে পটল-আলু-ডিম এর ঝোল রেঁধে খাওয়ালেন পন্ডিতদের । পন্ডিতদের মধ্যে একজনের ছিল গ্যাসের ধাত । বদহজম হয়ে পটল তুলে এখন ভুত হয়ে বাগানের এই ডাল সেই ডালে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ।
বাকি পন্ডিতরা নিজেদের ইনাম নিয়ে ফিরে গেলেন নিজ নিজ বাগানের আনাচে কানাচে ।
বড় মালি খুশি হয়ে বাগানে বেড়াতে লাগলেন । পাখিদের উত্পাত নেই ।গান নেই , কবিতা? মুখেও আনে না । আলু-পটলের ঝোলের ঢেকুর তুলে বসলেন বড় মালি ।
পেছন থেকে নিন্দুক রবি ঠাকুরের নকল করে বলল " শিক্ষা তো হল , কবিতা হল কি ?"


বাইরে তখন দখিনা বাতাসে পাখিগুলোর মন দুমড়ে মুচড়ে উঠতে লাগল নিজেদের প্রিয় বাগানটার জন্য ।