সারাটি পথ হেটে গেলুম একা একা
চারদিকের কোলাহলেও সবকিছু স্থির
আমার মানসপটে প্রজ্জলিত একটি মুর্তি
অপমান ও ব্যাথায় কুকড়ে যাওয়া
মানুষটিকে দেখে নিজেরি ঘেন্না লাগে!
ছিঃ এই মানুষের ভিতরে এত নোংরা পদার্থ
এত ক্রোধ, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা
এই জঘন্য মানুষ লয়েই জগতের এ হাল!
ছায়াটি অস্পষ্ট হতে থাকে!
দৃশ্যপট থেকে মুছে যেতে থাকে স্থির চিত্র
আমার ভিতর ভর করে শুন্যতা
ঘোলা হতে থাকে মস্তিস্কের কোটি
নিউরো সেলের জগত!
হঠাত সামনে পড়ে জলাশয়
আমি অস্থির হয়ে মুখে জল ছিটিয়ে দেই
মুছে যাওয়া প্রতিবিম্ব আবারও
প্রকট হয়ে উঠে!
চমকে যাই আমি!
ভীষণ চমকে যাই!
আরে এ তো আমি!
আয়নার প্রতিফলনে আমার চিত্রই ভেসে
উঠছে।
আমার শ্বাসকষ্ট হয়, আটকে আসে দম
আমার ভিতরের কুতসিত চিত্র আমাকে
প্রাণহীন করে তুলে!
শুরু হয় আমিত্বের সংঘাত!
আমার সাথে আমার যুদ্ধ!
নিরন্তর সংঘাত!
আবেগ, বিবেক ও প্রতিটি স্বতন্ত্র অনুভুতি
এক অপরের শত্রু! ঘোর দুশমন।
আমি স্তব্ধ হয়ে যাই!
এই শরীরের ভিতর এতগুলা আমি!
কোন আমি আসল, এরাই বা কারা!
সকলেই চিৎকার করে নিজের
অস্তিত্বের সত্যতা দেয়!
কাট!
আরে আমি বসে আছি থিয়েটারে!
চোখ দুটিতে রাজ্যের ঘুম!
আমি ইচ্ছের বিরুদ্ধে বহু কষ্টে জেগে আছি
আত্নসমর্পিত চোখকে খুলে রেখেছি টানটান
আমার বায়োগ্রাফি দেখানো হবে!
আমলনামার হিসেব নিকেশ
আমি খুব আগ্রহ নিয়েই অপেক্ষা করছি!
ধ্যাত! শুরু হচ্ছে না কেনো?
কৌতুহল ও অন্দরের চাপা উত্তেজনায় জবজবে
কাট কাট কাট শব্দ!
সাদাকালো চিত্র! একের পর এক ফ্রেম
পর্দায় ভেসে উঠল হাসপাতালের বেড!
এক তরুণী বিছানায় শুয়ে গোংগাচ্ছে!
আহা! কি কষ্ট! আশেপাশে কেউ নাই
মহিলা কাতরাচ্ছে আর বলছে পানি, পানি
পানি!
কি আজব কেউ নেই পাশে!
আমি চিৎকার করে ডাকি! কেউ তো পানি
দাও! ওনার খুব কষ্ট হচ্ছে!
আজব!  আমার কথা কেউই শুনছেনা
হটাত মেয়েটি পাশ ফিরল, আমি বাকরুদ্ধ
আরেহ এতো আমার মা! মা!! আম্মা!!!!!
আমি ডাকি অনেক, মা শুনেনা!
আচ্ছা আমি কই?
এমন সময় চলে আসে নার্স!
মাকে পানি দেয়, কলিজা ঠান্ডা হয়ে আসে।
আমার মায়ের কাতরানো একটু থামে!
ইশ! কি যে শান্তি লাগে আমার
দু'ফোটা জল গড়িয়ে ভাসে!
আমি আবারোও ফিরে আসি বাস্তবে
আমি তো মুভি দেখছি! নিজের মুভি
তাই তো মায়ের কাছে যেতে পারলামনা
গল্প আবারও শুরু হয়, চলতে থাকে!
একটি ফুটফুটে বাচ্চার চিত্র ভেসে উঠে!
কি নাদুস নাদুসনুদুস!  কি কিউট!
সবাই কত আদর করে, এ টানে ও টানে!
বিষন্ন মন আনন্দে ভরে উঠে!
আমারও খুব ইচ্ছে করে বাচ্চাটিকে
আদর করতে!
কিন্তু আমি যে কেন পারিনা!
গভীর রাত! কান্না উঠে বাচ্চাটার!
মা অনেক চেষ্টা করেন, থামেনা!
কান্নায় লাফিয়ে উঠে বুক!
আয়হায়! বাচ্চাটার কি অবস্থা!
মা পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে নেন
গুণগুণিয়ে লরি গাইতে থাকেন,
"ছোট্ট সোনা, গুল্লু মনা....
এ দৃশ্যে চোখ ভিজে উঠে আমার
মা! আমার মা! কত যত্ন করে পালসেন
এভাবে একের পর চলতে থাকে চিত্র
আমার শৈশব, কৈশোর, বেড়ে উঠা
আমার দুঃখগুলো দেখে হাসি
সুখ দেখে কাদি!
ভুল!
জীবনে করে যাওয়া মহাভুলগুলো
ভিতরের পোড়া ক্ষতগুলো জাগিয়ে তুলল
ইশ! ভুলগুলো এভাবে না হলে জীবন বদলে যেত!
কাট!
আমি ফিরে আসি বাস্তবে!
আবার ঘোরে ফিরি
চারপাশে রেডিয়েশন!
প্রকৃতি ক্রোধান্বিত!
কিছু মরচে ধরা গাছ নীরব কান্না করসে
এই আমি কই এলাম!
আমার চামড়া পুড়ে যাচ্ছে তীব্র দাহে
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে! মরে যাচ্ছি বোধহয়
কাট!
ফিল্ম শেষ!
হাজার হাজার প্রশ্ন, উত্তর নেই
দেয়ার কেউ নেই!
আরে দিবে কিভাবে?
আমি তো অন্ধকার কবরে!
সাড়ে তিনহাত মাটির ঘোর
অন্ধকার! এত অন্ধকার কেন!
আমাকে প্লিজ বাচাও!
এরা কারা?
দুজন ভয়ানক মুখোশধারী!
অগ্নিচোক্ষে প্রশ্ন!
তুমি কে?
আমি....আমি কে?......