আমার হাত এখন অনেক বড় হয়েছে মেঘে মেঘে আশ্চর্য আলোয়,
সে কিছু ধরতে চায় তার মতো ক’রে, সবুজ অরণ্যেয়, লাল বনে,    
বৃষ্টির ফোঁটায় ; আমি জানি, আমার হাত তোমার বাহুতে ধরা দিবে;  
আলো আঁধারের হলুদ বনে গাঢ় পল্লবে; স্মৃতি আর নষ্ট অতীত হ’য়ে।  
আমার কণ্ঠ এখন কম্পন জাগাতে শিখেছে, কঠিন সুরে, তার স্বরে;


আমি জানি, সে তোমারই স্তব গাবে তার সমস্ত স্বরমালা বিছিয়ে নগ্ন
নির্জনে, আমার অসুস্থ্য অঙ্গুলিগুলো তোমার নিকট স্নিগ্ধভাবে অমল
পাপড়ির মতো প’ড়ে র’বে রৌদ্র বিচ্ছুরিত টলোমলো শিশিরে, বিস্তীর্ণ  
সবুজে। আমার চোখ আজ অনেক প্রসারিত, বিবর্ণ নদীর তীক্ষ্ম ঢেউয়ে;  
সে তার মতো ক’রে অনেক কিছু দেখতে শিখেছে সূর্যের অমল আলোয়,


আমি জানি, তাকে যদি কিছু দেখতে বলা হয় সে তোমাকে দেখে নিবে
রৌদ্রকরজ্জল সোনালী দিনে; ফাল্গুনের জ্যোৎস্নায় চন্দ্রমল্লিকার নক্ষত্রের  
রাতে। আমার নাক প্রচণ্ড ঘ্রাণ নিতে শিখেছে, মাঘনিশীথের হিম হাওয়ায়;
তাকে যদি কোনো কিছুর ঘ্রাণ নিতে বলা হয় উজ্জ্বল ম্রিয়মাণ ছুঁয়ে আসা
শরীরে; আমি জানি, সে তোমাকেই ইন্দ্রিয়ে প্রবেশ করাবে শূন্যেয় ভেসে  


আসা অপরুপ শিশিরে। আমার পা এখন অনেক প্রসারিত, মায়াবী চিত্তে,
সে শিখেছে মাইলের পর মাইল পথ অতিক্রম করতে; পরিপূর্ণ সবুজ ঘাসে,
তাকে যদি যেতে বলা হয় নিবিড় ভোরের কল্লোলে বিহ্বল বাতাসে, ক্রিমে,  
আমি জানি, সে তোমার পথেই এগিয়ে যাবে আপন মনে অন্তিম গভীর সুরে।
আমার কণ্ঠধ্বনি এখন অনেক শ্রুতিমধুর; স্নিগ্ধ কলরবে নিবিড় ধ্যানে উৎসবে,  


তাকে যদি কোনো সুরে ভেসে যেতে বলা হয় সে পালতোলা নৌকায় তোমার
পথেই এগিয়ে যাবে। আমি জানি, বসন্ত সঙ্গীতের সব সুর অঘ্রাণের প্রান্তরে।  
আমার স্পর্শ এখন অনেক কোমল আর স্নিগ্ধতর মেধাবী নীলিমার উষ্ণতায়।
তাকে যদি কিছু স্পর্শ করতে বলা হয় নক্ষত্র বীথির নিবিড় জ্যোতির শিখায়;  
আমি জানি, অন্তহীন নিবিড় বাতাসে আশ্বিনের দিনে সে তোমার স্তব গাবে।


সে তোমার দিকেই এগিয়ে যাবে অমল পাপড়িতে গভীর ধ্যানে মেধাবী মননে,
আজ আমি অনেক অনেক বড় হয়েছি সাদা মেঘের অভ্যন্তরে ধূসর মেঘের বুকে;
সব কিছু দেখি না, সব কিছু দেখতেও ইচ্ছা ক’রে না প্রকৃতির অর্থহীন ইতিহাসে,
ইচ্ছা করলেও আমি দেখতে পাই না পৃথিবীর শূন্য বুকে গভীর ভাবনার নির্জনতা,
আমার স্বপ্ন জ’মে থাকে আমার আঁখি কোণে, অশ্রুতে, রক্ত আর হেমন্তের বাতাসে।