গভীর রজনী
চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার
হারিকেলের আলোটা নিভে গেছে
আমার কেউ নেই চারিধার।


বয়সের ভারে দেহটা দূর্বল
মেরুদণ্ডের হাড়ে ব্যাথা
লেপটা সরিয়ে নিয়েছে
রয়ে গেছে পাতলা কাঁথা।


বউটা অল্প বয়সে পাড়ি দিছে
দুটো ছেলে মেয়ে রেখে
মেয়েটা শশুর বাড়িতে বসবাস
কে আমায় আজ দেখে।


মাঝে মাঝে আসে যায়
থাকে খানিকক্ষণ
ছটফট করে ও নেই উপায়
কি করিবে; মানে নাতো মন।


ছেলেটাকে বিয়ে করিয়েছি
বছর পাঁচেক হলে
সাধ জাগে একটা বাচ্চা হলে
আদর করতাম নিয়ে কোলে।


দোষ দিবোনা, পরের মেয়ের
রাধে তিন বেলা
সকল কাজ গুছিয়ে রাখে
কেউ নেই তবুও একেলা।


সংসারের চিন্তা করে
জীবনটা করিলাম মাটি
আজ শুধু অপেক্ষা করি
এই বুঝি আসবে খাটি।


যৌবনে কত ছুটেছি মাঠে
দোকান ঘরে নয়তো হাটে
সবাই ভুলে গেছে আজ
আর আসেনা আমার বাটে।


কত রাত পাড় করেছি
উঠানে গল্প করে
আবার চলেছি কাজের পিছে
কাঁদা মাটির ঐ চরে।


নদীর ভাঙ্গনে এলোমেলো  সবাই
ঠিকানা হয়েছে ভিন্ন
আপন জনও জীবনের তাগিদে
হয়ে গিয়েছে ছিন্ন।


ঘুমের ঔষধ খাই দুবেলা
তবু ঘুম নেই চোখে
আলো বাতাস কম আসে ঘরে
ঠান্ডা লেগেই আছে তাই বুকে।


ছেলেটা কম পয়সায় চাকরি
জোটেনা তাই ভাল খাবার
সূর্য পূর্ব গগনে সন্ধা লগনে
খোজ নেয় সে বাবার।


ছুটির দিনে আমার হাত ধরে
হাটায় উঠানে বাড়ির ভিতর
নিজে ঠকঠক কেঁপে ও
আমায় পরায় চাঁদর।


মাছের মুড়োটা খাবেনা সে
তুলে দিবে বাবার পাতে
খেতে পারি আর না পারি
তবু ও খুশি ওর তাতে।


শুনেছিলাম বুড়ো বয়সে
ছেলে হয় হাতের লাঠি
চৌকিতে আমারে শুইয়ে
নিজে পেরে নেয় পাটি।


দুটি হাত তুলে তার কাছে
যার হাতে জমিন আসমান
আমার হতভাগ্য বাছার
দান করো এমন সন্তান।