আচ্ছা মা ধর্ষণ কী?
সাত বছরের খুকীর মুখে, এই প্রশ্নটি শুনে কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে গেলাম। টের পেলাম হৃদপিন্ডটা যেনো, ক্ষণিকের জন্য হলেও অচল হয়ে গেলো। অজানা এক ভয়ে আত্মাটা খাঁচা ছেড়ে বের হয়ার উপক্রম হলো। মনে হলো, একটা ভয়ংকর বিষধর সাপ গলার ঠিক মধ্যেখানে, কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে আছে। না পারছি উগরে ফেলতে, না পারছি গলাধঃকরণ করতে।
ঐ কয়েকটা শব্দ, প্রশ্নাকারে ওর মুখ থেকে এমনভাবে বের হয়ে এলো- যেনো মনে হলো ও কোনো বাজারে বিক্রিত খেলনার কথা জানতে চাচ্ছে। পছন্দ হলে, আবদার করলেই পেয়ে যাবে।
ধর্ষণ নামক ঐ শব্দটি, আজকাল চারপাশে এত বেশি উচ্চারিত হচ্ছে, যে একটি সাত বছরের শিশুর মুখ দিয়ে বিনা দ্বিধায় বের হয়ে আসে। যদিও বা ঐ শব্দের অর্থ তার জানা নেই।
আমি কী- জবাব দেবো? অতটুকুন ছোট্ট শিশুকে, আমার কী- বলার আছে? জীবনের সব অভিজ্ঞতা জড়ো করে এনে, অথবা সব বই-পত্র অভিধান ঘেটেও যদি, ওকে ধর্ষণের মানে বলে দিই, ও কি তা বুঝবে?
ওর কি বুঝার মতন সেই বয়স হয়েছে?
আচ্ছা, ওকে না হয় বললাম ধর্ষণ মানে, অপরিচিত কেউ চকলেট, খেলনা অথবা অন্যকিছু দিয়ে লোভ দেখিয়ে, কাছে ডেকে নেয়া এবং নিয়ে অত্যাচার করা। ও না হয় বুঝলো। সরলভাবেই বুঝিয়ে দিলাম ধর্ষণ কি। কিন্তু তা তো কেবল দরজার বাইরের সমাচার।
অন্দরমহলের কোণে আধো আলো, আধো ছায়ায়, নিরাপত্তার ছায়াশরীর গুলো, যে ঘাপটি মেরে বসে আছে? তাদের কী বিশেষনে ভাগ করবো? কোন উপমায় ভূষিত করবো তাদের?
আমি কিভাবে বুঝাবো তাকে সত্যিকারের ধর্ষণ মানে কী? কিভাবে? তাহলে কি তা আমার অপারগতাই থেকে যাবে? কষ্ট, আহা কি যে কষ্ট, একজন মা হয়ে বলে না বুঝানোর কষ্ট। বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। মাথার ভিতরের প্রত্যেকটি স্নায়ুতে একটি কথাই, বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে, মা ধর্ষণ কী?


উৎসর্গ :- শিশু সায়মাকে।