বিগত নির্বাচনী হাওয়ায় দেশটা তখন দোল খায়,
ডান-বাম বিরোধী আর সরকারি দলের যতশত নেতা, ক'জন উঁচুদরের মন্ত্রীও এলো আগেপাছে,
ইনিয়েবিনিয়ে হাসিতে কাশিতে নাচিতে কুদিতে
তাহারা জনঃঅসেবা করিতে শুধু ভোট চায়!!
জনতাও হাদারাম - দলেদলে ভীড়ে শামিল
সকলের তরে ঐ একটাই দাবী, বাম তীরে বাঁধ চাই!
ঠাটেবাটে আহামরি কোকিল নেতার ফেনিল মুখে আশার বাণী, প্রতিশ্রুতির সকল তালা ভেঙে যায় -
      "হবে-হবে, এবার নিশ্চয় হবে!
       সেবার হাতকে শক্তিশালী করতে
       আমাদের প্রতীকে ভোট দিন! "


আহা! সত্যিসত্যিই যদি -
সর্বনাশা তিস্তার বাম তীরে একটা বাঁধ নির্মাণ হয়!
তবে, কতই না ভালো হতো!
জেগেজেগে স্বপ্ন দেখি-
কৃষকেরা ফিরে পেলো তিন ফসলী জমি,
সবুজের বিশালতা, ছেয়ে গেলো প্রেয়সীর বুক!
ফিবছর বন্যা মানবেতর জীবন - আর নয়!
ফিরোজা বিবির নাড়ী ছেঁড়া ধন আর ভাসে না
বানের তোড়ে কুটোর মতন! তাকে রোজ বিকেলে খেলতে দেখি ফুলের মতন!!"


মন্তমুগ্ধতায় বক্তব্য শুনি-কান জুড়িয়ে যায়,
প্রাণে আবেশ জাগে, বিশ্বাসের ভিতটা একটু একটু করে শক্ত হয়! দেশের অত বড়সড় নেতা, মন্ত্রী-সান্ত্রীসহ আরও কতজন! সকলে বলেছে যখন- তখন আশায় বুক বাধি; এবার হবে নিশ্চয়ই।


অতঃপর, বর্ষা আসে
কচুরিপানা নৌকা ভাসে,
হাস মুরগী আর মানুষ ভাসে
বুকের জমিন বিলীন করে - নতুন সুরে ভাঙ্গন ধরে
আমেনা ভাসে জরিনা ভাসে, কলিম বুড়ার নাতিটা ভাসে-
বৃদ্ধ কিষাণ শিশুও ভাসে!
সাপ ব্যাঙ আর মানুষগুলো!
ক্যামনে বাঁচে? ক্যামনে বাঁচে?


নেতার প্রতিশ্রুত স্বপ্নিল কথাগুলো মনে পড়ে,
বিশ্বাসের বাঁধ ভেঙ্গেচুড়ে সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে ক্রোধান্ধ চিবুকের রগচটে যায় বারবার;- ঘৃণাভরে একদলা থুতু লেপ্টে দিয়ে অসহায় মেছের আলীর দল চিৎকার করে বলে যায়__
"ওরে-
গোঁফখেজুরে ভাঁড়ের দল
বঙ্গপিতার আদর্শে চল,
নাকি -
তোরাও ঐ মিথ্যেবাদী হুলুর মতন
চোরের নাতি ফাঁপড় দালাল!?"
সেকিরে -
সে কি রে - একিরে!!!?
সেকালে আর একালে-
দেখি একইরকম চিত্র
মার্কাগুলো ভিন্ন বটে
তোরা কাজেকামে মিত্র!
উল্টো দিকে বাঁধের পিলার!
বানের জলে ভাসে
হাজার কোটির শ্রাদ্ধ শেষে
মোদের রিলিফ দিতে আসে...!?


আর কতকাল রাখবি জিইয়ে-
এই মরণ নদীর ফাঁদ?
বলছি মোরা চাই না রিলিফ
চাই তিস্তা নদীর বাঁধ।।


_________ তিস্তা
      ইবনে মিজান
১২ জুলাই ২০১৯