আমি ধরলাম শক্তিপুঞ্জ তুমি ধরলে ময়ূরাক্ষী
স্টেশন থেকে রওনা দিলাম যাব অনেক দূর।
জায়গা পাইনি দাঁড়িয়ে আছি দরজা ধরে, আর
তুমিও দেখি তথৈবচ আমার মত হয়ে।


সত্যি একটু কোথাও যেন জায়গা নেই। আছে?
কি পেয়েছি যার জন্য এত ছুটছি ঐ
গণ্ডগোলে বাতাসগুলোর অর্থ বুঝতে গিয়ে
উঠে পড়েছি শক্তিপুঞ্জে, তুমি ময়ূরাক্ষীর দরজায়।



ময়ূরাক্ষী  ছুটছে যেন তাথৈ তাথৈ নৃত্য
নাচতে নাচতে বলতে থাকছে, কাকে বলছে ও
“এই ধরো হাত, স্পর্শ দেবো, বাঁচিয়ে দেব”, আর
বলছে সে এক মুক্তো দেবে সোহাগ দেবে খুব।
রাজ্য জুড়ে ধান ভানবে ভাদুর পালা শোনার-
সময় করবে আর করবে শান্তিনিকেতন।


এমন করে বলতে বলতে ময়ূরাক্ষী নাচছে
নাচের তালে ঝংকার ফুল নাচের তালে হাট
যেন একটা শূন্যভূমি ঘর বাড়ীতে ভরে যায়।



প্রচণ্ড একটা যেন জেদ কিংবা সেরকম কিছু
কিসের জন্য এত আহতবিরহশব্দধ্বনি
আমার গাড়ী ছুটে যাচ্ছে ধুলো উড়ছে যেন ঢেউকাটা
গড়াপেটা ভাঙ্গাগড়া গড়াপেটা ভাঙ্গাগড়া আওয়াজ চাকায় হচ্ছে
যেন বলতে বলতে যাচ্ছে সে ছুটতে ছুটতে বলছে


“মানব না, মানি না, শুনবো না, ধরবে না, ভেঙ্গে আজ ছুট দোবো ঐ
অরণ্যে চলে যাব। সন্ন্যাসব্রত নিয়ে ফিরে এসে গড়ে দেব আখড়ামহিমা” -


তার বলার ভঙ্গীতে সব উড়ে যায় সবকিছু গুঁড়িয়ে যায় যেন।



কতদূর আসা হল কে জানে, কতদূর যে যেতে হবে এই
বিরাট  বিরাট ঝাঁকুনির সাথে লড়াই করে চলেছি সব সময়।


বিজ্ঞাপনে পার্টির প্রচারের মত ভণ্ড হয়ে যাসনি তো  ভীরু -
আজ আবার ভয় কি! নির্ভয় হয়ে তুই ঘাম-ঝরা দৌড় দিয়ে যা
যদি তুই কাজ নাই পেলি তবে কি শিশুদের ঘাস মাথা চিবিয়ে খাবি
যদি তোকে বহতা স্রোতের ভিতরে ডুবিয়ে রাখে তুই ডুবে যাবি
যদি তোকে কুয়োবৃন্দাবনে জল নেই বলে নামিয়ে দেয় ওরে
তুই কি পাগল হয়ে যাবিনা তখন। তখনও কি বন্ধন ঘুচবে না।



ইঞ্জিনে ঘর্ঘর বিকট আওয়াজ যেন গরজাচ্ছে শক্তিপুঞ্জ
এই মায়াময় পৃথিবীর ফুলোডোর লুকোচুরি ইত্যাদি ছুঁড়ে দিয়ে সে
কোন সে শক্তিব্রহ্ম মাথায় চড়েছে তার ও যে পালিয়েই যাবে।


কোথায় পালিয়ে যাবি পলাতক, ঠিকানা কি হবে সেকি নিজেই জানিস
নিজেকে  জানিস তুই, সবাইকে  ভুলে গিয়ে একদম একাকী হয়ে গেলি কখন
কখন তোর আত্মীয় অনাত্মীয় ধুলো হয়ে গেছে পথের
পথের পথিক হয়ে ছোটার সময় যেন বেখেয়াল হয়ে গেছে সব।



ট্রেন দুটো এসে দাঁড়ালো প্রথম বর্ধমানের বাড়ীর দাওয়ায়
গৃহলক্ষ্মী ময়ূরাক্ষী বিশাল গাছের হাওয়ায় পাতার মতন সকল
মানুষ জনকে টেনে নিচ্ছে, সব লোকেদের অবাধ গতি দরজা খোলা।


তোমার ভেতর কি মহিমা সবাই তোমার হাত ধরতে চায়?
আড়ষ্টতা নেই তো আমার দাঁড়িয়ে আছি তোমার মত -  
তোমার দিকেই লোক যাচ্ছে , আমার ছোঁয়া কেউ চায় না।
দরকার নেই প্রয়োজন নেই কিছু লোককে পেলেই খুশি অমর-দহন ।



বর্ধমানের আত্মীয়তা সাঙ্গ হলে আবার রওনা দুই জনাতে
ধিতাং তালে চলছে ও আমি চলছি একটু হতাশ একটু গোঁয়ার হয়ে।
তুমি একবার হাত বাড়ালে হাসি মুখে, আমি এখন কী করতে পারি
চিন্তা করছি হঠাৎ দেখি খানা জংশন পেরচ্ছে দুই ট্রেন
শক্তিপুঞ্জ ময়ূরাক্ষী দুই দিকেতে মুখ ঘুরিয়ে নিল
সময় চলল আর বাড়ল ওদের মধ্যে দূরত্ব ক্রমশ।



খানা জংশনে পাশাপাশি ছিল সত্যি আমরা একদম পাশাপাশি
সেখান থেকে আলাদা হল অভিমুখ আর সেটাই মিলনস্থল
ট্রেন দুটো কি পেছন দিকে চলতে পারবে কখনও।  
----------------