বাবু থেকে ইব্রাহিম  (গদ্য কবিতা)
কলমেঃ মোঃ ইব্রাহিম হোসেন


রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার নিকটতম একালাকার হরিশংকরপুর গ্রাম,
জয়নাল আবেদীন সরকার নামের এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি বাস করতেন সেথায় অবিরাম।


তাঁর দ্বিতীয় পরিবারে ছোট্ট সংসারে ছিলো তাঁর স্ত্রী ও একমাত্র অবুঝ ছোট্ট কোলের একটি ছেলে।
তাঁদের বাড়ির পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে বিশাল পদ্মা নদী, মাছ ধরে সেথা ডিঙি নায়ে কত জেলে!


তাঁর প্রায় শত বিঘা সম্পত্তি ছিলো বিশাল পদ্মা নদীর এপারে-ওপারে এলাকা জুড়ে,
ছিলো না তাঁর কোনো অভাব অনটন, ছিলো নাকো দুঃখ কষ্ট দুয়ারে।


আদার পাড়া নামের এক গ্রামে ছিলো তাঁর ১৫ থেকে ২০ বিঘা সম্পত্তির চাষাবাদ, 
তাঁর সে জমিও সেখানকার এক কৃষকে করতো নিজের মত করে আবাদ।


একদা সেই ভদ্রলোক তাঁর জমি দেখতে যায়,
তাঁর সে জমিতে ছিলো বিঘা কতক বুট,
ফসলের মাঠ বুটে ভরপুর অবাক চোখে চেয়ে দেখে হয় কিছুক্ষণ নিশ্চুপ।


ফসলে ভরা মাঠ দেখে খুব আনন্দিত হয়ে দিশেহারা হলেন, মনে মনে ভাবলেন;
এ জমি থেকে যদি তাঁর ছেলের জন্য কিছু কাঁচা বুটের দানা তুলে নিয়ে যাই ; চোখে স্বপ্ন আঁকলেন।


তবে খুশি হবে তাঁর ছেলে এ বলেই জমি থেকে তুলে নেন কয়েকটি বুট ঝাড়-গাছ,
নিজের ইচ্ছায় তুলে নিয়ে বাড়ি গিয়ে বাবু নামে ডাক দেন,ছেলে নেয় তাঁর পাছ।


ছেলেকে তাঁর ডেকে কোলেতে বসিয়ে রেখে বুটের ফলগুলো ছিলেছিলে তার মুখে দিতে যান,
এমন সময় ছেলে বলে বাবা ডেকে, একটা কথা বলতে চাই বাবা,একটু দাঁড়ান।


আপনি যে ফল নিয়ে এসেছেন,সে ফল কি আমাদের? ঝটপট বলেন আমায়।
বাবা বলেন  হ্যাঁ বাবা, সে ফল আমাদের,
আমাদেরই মাঠের জমির কামায়।


ছেলে বলে আমাদের ঠিক আছে, ঠিক আছে বাবা আমাদের সবই তা,
কিন্তু চাষ তো আমরা করি না, এ ফল তো বর্গাচাষিরও আমাদের বলে এনেছেন আপনি যা।
আপনি কি তাকে বলে এ ফল নিয়ে এসেছেন বাবা?


বাবা হতভম্ব হয়ে  চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলেন, এ তো আমার কোনো সাধারণ ছেলে নয়!
এ বলেই বাবা খুব আত্মহারা হয়ে আনন্দ চিত্তে  তার নাম দিলেন "হে আমার ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ" হোক তোমার জয়।


তখন থেকেই সে-ই ছোট্ট কোলের অবুঝ শিশু "বাবু" থেকে হয়ে গেলো "ইব্রাহিম হোসেন" ভাই, 
কেঁদে বাবা বলেন, নাই, নাই, নাই; এমন ছেলে জগতজুড়ে এ ভুবনের কোথাও বুঝি নাই।


তখনই চোখের জলে বাবা যান ফিরে সেই গ্রামে চলে,
বর্গাচাষির আদারপাড়া গ্রামের বাড়ি,
সাবুর মাঝি নামের বর্গাচাষিকে ডাক দেন,
এসো ভাই চলো মাটে, অনবরত চোখে ঝরছে বারি।


বর্গাচাষি বলেন, কেনো কি হয়েছে ভাই? আমাকে খুলে বলেন অবিচলিত আমি,
শঙ্কা পায় মনে, কিবা করেছি তবে, বুকটা কাঁপে দুরুদুরু ভয়ে জানেন অন্তর্যামী!


মাঠে গিয়ে বলেন শোনো বলি ভাই, কোনো ভয় নাই, জমি থেকে বুট গাছ কিছু নেবার চাই,
সাবুর মাঝি বলেন, এ কি বলেন!  আপনার জমি, আপনার ফসল। আমার কাছে অনুমতির কি প্রয়োজন তাই?


সব ঠিক আছে ভাই,আপনাকে বলে যায়,
দয়া করে কয়েকটি বুটের ঝাড় দিবেন আমায়;
আপনাকে না বলে নিয়েছিলাম কিছু বুট ফল,
না খেয়ে ছেলে করেছে ঋণী, নষ্ট যেনো হয়েছে
আমার জীবনের সব কামায়।


ছেলে বলে, বাবা! যাও ফিরে আবার এ ফলে আছে তাদেরও হক, যারা করে আমাদের জমি চাষ,
মনে রেখো বাবা, খাবো না আমি কখনো যতই মারো তুমি, দিলেও দিতে পারো বনবাস।


কৃষক অনেক অবাক হয়ে বলেন, সুবহানাল্লাহ্!
এতো ছোট্ট ছেলের এতো জ্ঞান! এতো বুদ্ধি!
এ বলেই তিনি নিজের হাতে ক্ষেত থেকে বুটের ঝাড় তুলে দিলেন, দোয়া করে বলেন হোক তার জীবনের সিদ্ধি।


বাবা জয়নাল আবেদীন, মনে বাজে সুখ বীণ
সে ফল নিয়ে বাড়ি আসেন ফিরে,
ছেলেকে ডাকেন বাবা, এসো এসো কাছে খোকা,
তোমার জন্য এ ফল চেয়ে নিয়ে এসেছি নীড়ে।


খোকা হলো বেজায় খুশি, মুখে ফোটে মিষ্টি হাসি
ছিলেছিলে খেতে লাগলো সেই কাঁচা বুটফল,
প্রভুর দ্বারে দু'হাত তুলে প্রাণভরে করলো দোয়া বাবা মায়ের ঝরলো আঁখির জল।


সে থেকেই নাম নাম হলো আমার মোঃ ইব্রাহিম হোসেন, ইব্রাহিম, আমি দিলাম পেছনে রাজশাহী।
আজ নাই মা ও বাবা বড়ই আমি এতিম অসহায়,
পানা চাই মা বাবাকে দাও জান্নাতে হে প্রভু!
তোমারই সকাশে চাই নাজাত তব গুণগান গাহি।


মূল রচনা: ০২-০৮-২০২১ ইং
সংশোধিতঃ ১৭-০১-২০২৪ ইং
(মায়ের মৃত্যুর পর - ০৪-০১-২০২৪ ইং)