খোকার আত্মকথা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন


জয়নাল আবেদিন সরকার ভদ্র মানুষ ছিলেন,
কৃপা করে মাওলা তাঁকে সম্পদে ভূম দিলেন।
বাড়ি ছিলো নদীর ধারে বহুত জমি-জমা,
সুখ ছিলো তাঁর ভুরি ভুরি ছিলেন না তো কমা।


সুখের সংসার চারটি মেয়ে দু'টি ছিলো ছেলে,
বাবা আবার বিয়ে করেন বিবি মারা গেলে।
ইউসুফ আলী আইয়ুব নামে জন্ম নিলো ঘরে,
মায়ের মনে সুখ সীমাহীন দু'টি ছেলের তরে।


ভাই আর বোনে হিংসা করে শিশু দু'টি দেখে,
বাবা বুঝি দিবেন তাদের জমি'জমা লেখে।
কিছু দিনের শিশু আইয়ুব গেলো যখন মারা,
মায়ের পেটের ভাইকে ছাড়া ইউসুফ সর্বহারা।


কান্না মায়ের কে থামাবে নানি এসে পাশে,
সান্ত্বনা দেয় তার মেয়েকে সময় সর্ব'নাশে।
অবুঝ শিশু ইউসুফ তখন মলিন মুখে বলে,
ক্যামনে থাকি একা নানি মা যদি যায় চলে ?


ছোট্ট শিশু কোলে নিয়ে নানির অশ্রু ঝরে,
মা ও কাঁদে বাবাও কাঁদে আইয়ুব ছেলের তরে।
এদিকে ফের বুদ্ধি করে ভাই -বোনে সব মিলে,
কৌশলে সব জমি নিতে নিঠুর পাষাণ দিলে।


বাবার কাছে আরজ করে শোনো বাবা তুমি,
বিক্রি করতে যাবো মোরা আগের মায়ের ভূমি।
বাবা আদেশ করে বলেন নাই কোনো মোর বাধা,
দিল'টা ছিলো বাবার অনেক সৎ সাহসে বাঁধা।


বললো তারা আপনি যাবেন মোদের সাথে সেথা,
নইলে বাবা চিত্ত ভরা রইবে জমা  ব্যথা।
তাদের কথা শুনে বাবা রাজি হলেন তখন,
রেজিষ্ট্রি'র  অফিস পানে রওনা দিলেন তখন।


ছোট্ট ছেলে ইউসুফ বলে আব্বু আমি যাবো,
সেথায় গিয়ে রেস্টুরেন্টে মিষ্টি ও দই খাবো।
আমতা আমতা করে তারা তাকে নিয়ে গেলো,
ওরা সবাই যুক্তি করে পাখা ভেঙে ফেলো।


বড়ো হয়ে দিবে সে যে মোদের গলে ছুরি,
তার আগেতে করতে হবে কৌশলে তাই চুরি।
মিষ্টি কিনে দিলো তারে বসে বসে খায় সে,
ছোট্ট শিশু অবুঝ ছেলে এদিক সেদিক চায় যে।


ভাই বোনেতে করতে গেলো ক্রয়-বিক্রয়ের দলিল,
বাবার সাথে গল্প করে বন্ধু সেজে জলিল।
দলিল করে আসলো তারা বাবার সাইন নিতে,
পাইছি মোরা অর্থ বুঝে হবে দলিল দিতে।


সাইন করে দিলেন দলিল সহজ সরল মনে,
আত্মহারা মন খুশিতে ছয়'টি ভাই ও বোনে।
বছর খানিক পরে সবই জানা-জানি হলো,
তারই শোকে বাবার চোখে অশ্রু টলোমলো।  


অবুঝ শিশু নাবালককে ভাসাই দিলাম তারে,
আল্লাহ তুমি সদাই থেকো ঐ শিশু'টির ধারে।
সর্বশান্ত করে নিলো আমার জমি যারা,
তাদের প্রতি রইলো আমার অভিশাপের ধারা।


যে আশাতে ফাঁকি দিলো ভেঙে যাবে তাহা,
কষ্ট বুকে আর্তনাদে বলবে তখন আহা !
অল্প কিছু দিনের পরেই বাবা গেলেন মারা,
ছোট্ট কোলের শিশু হলো এতিম সর্বহারা।


ছোট্ট শিশু মায়ে পালে কষ্ট সাধন করে,
ছেলে আমার বড়ো হবে আনবে যে সুখ ঘরে।
লেখাপড়া শিখে ছেলে বড়ো হলো যখন,
রবের কৃপায় দুঃখ জ্বালা দূর হলো যে তখন।

অশ্রুজলে দু'হাত তুলে মায়ে কেঁদে বলে,
সারাজীবন সুখে থাকিস এই ধরণীর তলে।
অবশেষে ভাই ও বোনের জমি জমা যত,
শেষ বয়সে শেষ হলো যে কান্না অবিরত।  


মায়ের কাছে ক্ষমা নিতে আসলো তারা সবে,
ক্ষমা করে বলেন তাদের, তাদের পাশেই রবে।
খোকার আম্মু বিশাল মনের সবাই তা তো জানে,
গুণবতী পুণ্যবতী সব লোকেতে মানে।


খোকার কাছে আম্মু যে তার  সবার থেকে প্রিয়,
লেখক বলে মাকে সবে ভালোবাসা দিও।
ধন্য হবে জীবন তোমার ধন্য হবে তুমি,
জীবন তোমার বিলীন করো মায়ের পদচুমি।