একটা পরিত্যক্ত ব্রিজ
একটা অস্তগামী সূর্য,
আর সতত বহমান নদীর স্রোত;
তোমাদের পিতারা এখানে প্রতি বিকেলে আসে,
তোমাদের মানব জীবনের চিরায়ত চক্র ব্যাখ্যা করে।


শোন আমার প্রিয় সন্তান,
তোমায় নিয়েও এখানে আসতাম আমি রোজ,
তুমি ডুবন্ত টকটকে লাল সূর্য এনে দিতে বলতে আমায়;
আমি বলতাম, বহমান এ স্রোতের শেষে সমুদ্রের গর্জন,
তারপর প্রকাণ্ড সব জলতরঙ্গ পেরিয়ে সূর্যের বাস।
অসংখ্য বার কথা দিয়েছি তোমায়
সমুদ্রে ডুব দিয়ে ঘুমন্ত সূর্য এনে দেব।


আমার প্রাণের সন্তান, শোন,
আমি ব্যর্থ ছিলাম!
তুমি ব্যর্থ হইয়ো না; তোমার কলিজার সন্তান,
তার বুকে পুরে দিও ঘুমন্ত সূর্য।
তাকে জানতে দিও না, পিতামহের ঠিকানা;
আমি কোন জবাবদিহি করতে চাই না;
আমি চাই না, বৃদ্ধাশ্রমের এই ছোট্ট ঘরে আমার পাশে তুমি থাক!


বৃদ্ধাশ্রমের এই ঘরে, দ্বার গুলো সব বন্ধ করে
বাস করে, সব ব্যর্থ পিতার দল।
আবদ্ধ জীবনের একপাশে মরচেধরা জানালা;
আমরা সারাবেলা সন্ধ্যে নামার প্রার্থনা করি,
সন্ধ্যে নামলে পরে, ভাগ-বাটোয়ারা করে,
আহার করি জানালা ভেদে আসা জোনাক পোকার ঝাঁক;
আর মাঝরাতে ডুকরে উঠে করি হড়হড় করে বমি।
আমি চাই না তুমি আমাদের দলে এসে জীবনকে অভিশাপ দাও,
চাই না, তোমার দীর্ঘশ্বাস গিয়ে আছড়ে পরুক জানালার ওপাশে।


যদি ব্যর্থ না হও, তবে আমার একটা আবদার রাখবে?
তোমার ব্যর্থ পিতার আজীবনের আক্ষেপ!
আমায় নিয়ে এক-বিকেলে তুমি একা সমুদ্রের তীরে যাবে;
আমি শেষবারের মতো তোমায় সূর্যাস্ত দেখাব!
প্রকাণ্ড সব ঢেউয়ের উৎসে, সূর্য সূর্যের মতো ডুবতে থাকবে
তুমি তোমার মতো করে আমার জীবন চক্র উপস্থাপন করতে থাকবে;
তারপর একেবারে ডুবে যাবার মুহূর্তে, তুমি আবার সূর্য এনে দিতে বলবে,
আমি সম্মুখে অগ্রসর হব, ঢেউগুলো সব ক্ষোভে ফুলে উঠবে,
ডুবন্ত সূর্যের সাথে আমিও আস্তে আস্তে জলতরঙ্গে বিলীন হয়ে যাব;
একটা লাল টগবগে ঘুমন্ত সূর্যের খোঁজে!