ইমরান ইভান-এর কবিতাwww.bangla-kobita.com ওয়েবসাইটে ইমরান ইভান-এর প্রকাশিত কবিতাসমূহ।uuid:2782cc4c-711d-4403-b8f7-50c47540831c;id=16072024-03-29T07:10:45Zhttps://www.bangla-kobita.com/imranib71/meyego-boro-betha-lage/মেয়েগো বড় ব্যাথা লাগে2021-04-17T22:44:20-04:002023-06-27T18:44:26-04:00ইমরান ইভানhttps://www.bangla-kobita.com/imranib71/<p>আষাইড়া মেঘের লাহান চোখ বায়া কষ্ট পড়ে,<br />চৈতের রইদে মাটি পুরে, আমার পুরে কইলজা।<br />মেয়েগো আগোন মাসটা আইতে দিলানা!<br />নতুন ধানের লগে তোমারে ঘরে উঠাইবার আউস আছিলো,<br />নবান্ন মেলা আইলে আইজও মনডা হু হু কইরা কান্দে।<br />মেয়েগো বড় ব্যাথা লাগে!</p>
<br /><p>আমার লগে যাইবানি? লও পলাই।<br />ভাটার চরে গিয়া ছন দিয়া ঘর বান্দুম,<br />গাঙ্গে মাছ মাইরা মায়া-পোলারে শিক্ষিত বানামু।<br />লও পলাই!<br />বাপের মুখে চুনকালি দিতা পারবানা বইলা-<br />ছনের আগুন দিলা আমার কইলজায়।<br />মেয়েগো বড় ব্যাথা লাগে!</p>
<br /><p>জমির পানি বাড়লে, বর্গা চাষার অভাব বাড়ে।<br />তোমারে নিয়া মনের স্বাদ গুলা দিন দিন ধনী হইয়া উঠে।<br />নিশিত রাইতে তোমার ঘাটে নাও বাইন্দা কইছিলাম;<br />এইবার পাট বেইচা তোমারে নাকের ফুল কিনা দিমু।<br />উত্তর আসমানে মেঘের ডাক হুইনা আমারে জড়াই ধইরা কইছিলা;<br />নাকফুল লাগবোনা, আমার ডর লাগে, আমারে তুমি ঘরে তোল।<br />বইশষা কালে কাম নাই, গাঙ্গে নাও বায়া পয়সা জমাইছি, ঘরের চালে নতুন ছন দিছি।<br />তুমি আর ঘরে উঠলানা।<br />নৌকার মহাজন ডিঙ্গি নৌকায় ভাসায়া তোমারে লইয়া গেলো অচিন দেশে।<br />মেয়েগো বড় ব্যাথা লাগে!</p>
<br /><p>গরুফেরা বিকালে ভেন্না তলায়<br />প্রথম যেদিন কইছিলা আমারে ভালবাস।<br />হেইদিন থেইকা এই মনডা তোমারে সাফ-কবলা কইরা দিছি।<br />হায়গো! বানের জলে ফসল ভাসলে মানুষ নিঃস্ব অয়,<br />আমি নিঃস্ব অইছি তোমারে হারায়া।<br />যাত্রার দলের গান হুইনা মানুষ চোখ ভিজায়া কান্দে,<br />আমার চোখ ভিজেনা, বুকের মইধ্যে গাঙ্গের জোয়ার ভাঙ্গে।<br />তোমার শোকে ঘর ছাড়লাম, নাও ছাড়লাম।<br />তোমারে আর ছাড়তে পারলাম কই।<br />মেয়েগো বড় ব্যাথা লাগে!</p>@ 2024 - ইমরান ইভানhttps://www.bangla-kobita.com/imranib71/pohela-boishakher-khola-chithi/পহেলা বৈশাখের খোলা চিঠি2021-04-13T07:44:13-04:002023-06-25T03:58:41-04:00ইমরান ইভানhttps://www.bangla-kobita.com/imranib71/<p>প্রিয় অভিমানী।<br />কেমন আছ?<br />আজকের পহেলা বৈশাখের দিনে তোমাকে খুব মনে পড়ছে।<br />তাই তোমাকে এই খোলা চিঠি লিখতে বসলাম।<br />কিভাবে শুরু করব ভেবে পাচ্ছিনা।<br />আমিতো অন্যদের মত গুছিয়ে কথা বলতে পারিনা।<br />তবুও যদি আমার এই খোলা চিঠি কোনদিন তোমার চোখে পড়ে<br />তবে হৃদয়ের অনুভূতি দিয়ে বুঝে নিও।</p>
<br /><p>তুমি হয়তো অনেক কিছুই ভুলে গেছ।<br />কিন্তু দেখো, বোকার মত আমি সেই স্মৃতি গুলো আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি।<br />সেই পহেলা বৈশাখের দিনটার কথা মনে আছে তোমার?<br />যে বৈশাখী মেলায় প্রথম তোমার চোখে চোখ পরেছিল।<br />সেই যে তোমার পিছু নিলাম।<br />এরপর তোমার সাথে প্রেম, তোমাকে নিয়ে ছোট ছোট স্বপ্ন বোনা।<br />প্রায় তিন বছর পর তোমার চলে যাওয়া।<br />তারপর আজও তোমার পিছু ছাড়তে পারিনি।</p>
<br /><p>তুমি টিপ পড়তে খুব পছন্দ করতে।<br />যেন এক একটা নক্ষত্র তোমার কপালে উজ্জ্বল হয়ে ফুটে থাকত।<br />সেবার বৈশাখী মেলা থেকে তোমার জন্য দুই গোছা চুরি আর তোমার প্রিয় চালতার আচার এনেছিলাম।<br />টিপ আনিনি বলে তোমার সে কি অভিমান।<br />আমি বললাম "সামনের পূর্ণিমায় আকাশের চাঁদ এনে তোমার কপালে টিপ পড়িয়ে দিবো।"<br />তুমি হেসে কুটি কুটি হয়ে বললে "পাগল, চাঁদ দিয়ে আবার টিপ পরা যায় নাকি!"</p>
<br /><p>তখন আমরা অনেকটা বড় হয়ে গেছি।<br />দুজনেই কলেজে পড়ি।<br />ঐ বছর পহেলা বৈশাখের দিন বাসায় কোচিংএর কথা বলে এক সাথে দুজন মেলায় ঘুরতে গিয়েছিলাম।<br />মেলা থেকে আমি তোমাকে হালকা নীল রঙের একটা পুথির মালা কিনে দিয়েছিলাম।<br />আর তুমি আমাকে কিনে দিয়েছিলে গাঢ় কালো রঙের একটা হাত ঘড়ি।<br />নাগর দোলায় উঠে তোমার সে কি ভয়।<br />ভয়ে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে।<br />সেদিনই প্রথম আমি তোমার উষ্ণতা অনুভব করি।</p>
<br /><p>পরের বছর বৈশাখ আশার আগেই সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেলো।<br />আমাকে ভুল বুঝে চলে গেলে তুমি।<br />মানুষ ভুল করে, ভুল বুঝে, ভুল ভাঙেও।<br />কিন্তু তোমার ভুল আর ভাঙাতে পারিনি।</p>
<br /><p>এখন তুমি কোথায় আছ কেমন আছ জানিনা।<br />তোমার দেওয়া প্রতিটা স্মৃতি প্রতিটা মুহূর্ত খুব যত্নে হৃদয়ের তোরঙ্গে তুলে রেখেছি।<br />তুমিও কি এমন যত্ন করে রেখে দিয়েছ আমার সকল স্মৃতি চিহ্ন নাকি ভাসিয়ে দিয়েছ<br />সময়ের স্রোতে?</p>
<br /><p>তোমার ভুল ভেঙেছে কিনা অথবা কোনদিন ভাঙবে কিনা আমি জানিনা।<br />তবুও গত পাঁচটি বছর তোমার ফেরার অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছি।</p>
<br /><p>আমার এই খোলা চিঠি আকাশের ঠিকানায় তোমার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিলাম।<br />হয়ত এই চিঠি ঘুড়ি হয়ে, পাখি হয়ে অথবা পাখির পালক হয়ে তোমার কাছে পৌঁছুবে।<br />যদি এই প্রতিক্ষা মানবের খোলা চিঠি কোনদিন তোমার কাছে পৌঁছায়।<br />তুমি ফিরে এসো।<br />আমি আমৃত্যু তোমার প্রতীক্ষায় থাকবো।<br />ইতি<br />তোমার পথ চেয়ে থাকা<br />একজন প্রতিক্ষামানব</p>@ 2024 - ইমরান ইভানhttps://www.bangla-kobita.com/imranib71/baapjaner-mukhe-shona-muktizuddho/বাপজানের মুখে শোনা মুক্তিযুদ্ধ2021-03-21T22:36:43-04:002023-06-27T11:34:11-04:00ইমরান ইভানhttps://www.bangla-kobita.com/imranib71/<p>জমি-জমা যাই আছিলো তার ফসল দিয়া আমাগো বছরডা ঘুরতো।<br />গেরামের মাইঝখানে যে দীঘিডা,<br />ছোডবেলায় বাপজান আর তার বন্ধুরা এতে ডুব-সাঁতার খেলতো।<br />বাপজানের বন্ধু জমির মিয়া পানিতে ডুব দিয়া নাকি মেলাক্ষণ থাকতে পারতো!<br />বাপজানের মুখে শোনা কথা।<br />দাদা মইরা যাওয়ার দুই বছর পর দ্যাশে যুদ্ধ আইলো,<br />আহ! সোনার মত গেরামডারে পুইড়া ছাই বানাই দিলো।</p>
<br /><p>গেরামে যখন মিলিটারি আইলো-<br />জমির মিয়া দৌড়াইয়া ঝাঁপ দিলো দীঘির পানিতে।<br />ছয়মাস বয়সী আমার একটা বইন আছিলো,<br />বাপ-মায়ের পয়লা সন্তান।<br />মিলিটারির ডরে মানুষ যখন জান লইয়া দৌড়াইতাছিলো,<br />ছোড চাচা মায়রে ডাক দিয়া কয়’ ভাবি বালিশ কোলে লইয়া দৌড়াইতাছো ক্যান?<br />বাপজানের চোখের কোণায় পানির দানা বড় অইতে থাকে।<br />‘তর মা বেদিশায় তর বইনরে মনে কইরা বালিশ কোলে লইয়া দৌড় দিছিলো’<br />চোখের কোণায় পানি জমে আমারও।<br />বইনডা বাঁইচা থাকলে আমারে কত্তো আদর করতো!<br />আমার জন্ম অইছে যুদ্ধের মেলা পরে।<br />কইলজায় ডর আয়ে, তহন যদি আমি থাকতাম-<br />জানোয়াররা বইনের মত আমারেও ঘরসহ পুড়াই মারতো?<br />জমির মিয়ার রক্তে দীঘির পানি সিঁদুরের মত লাল অইয়া গ্যাছিলো,<br />মিলিটারিরা তারে দীঘির মইধ্যেই গুলি কইরা মারছে।</p>
<br /><p>ছোড চাচা মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেওয়ার কারণে<br />শান্তি কমিটির লোকেরা চাচা আর ফুফুরে ধইরা নিয়া গ্যাছিলো।<br />দাদীরে লইয়া বাপ-মায় গ্যালো পূবে, বর্ডার পার অইয়া।<br />রিফুজি ক্যাম্পে খাওন আর চিকিৎসার অভাবে দাদীও চইলা গ্যালো দাদার কাছে।</p>
<br /><p>দ্যাশ স্বাধীন অইলো।<br />বাপজান আর মায় গেরামে ফিরা আইয়া দ্যাখে-<br />আমাগো ভিটা,জমি,দীঘি সব গ্যাছে মিঞার দখলে।<br />বাপজান কয় হ্যায় নাকি রাজাকার আছিলো।<br />অহন আমাগো যে বাড়িডা এইডা আছিলো খাল।<br />এই খালের পানিতেই নাকি ছোড চাচার লাশ ভাইসা উঠছিলো,<br />ফুফুরে পাওয়া গ্যাছিলো গাজী মিয়ার বাড়ীর পাশের তেঁতুল গাছে, ফাঁসিতে লটকানো।</p>
<br /><p>বাপজান চোখ মুছতে মুছতে কয়,<br />হায়রে মুক্তিযুদ্ধ, আমার সবকিছু লইয়া গ্যাছে!<br />তবে মুক্তিযুদ্ধ, আমার মায়ের দ্যাশটারে স্বাধীন কইরা দিয়া গ্যাছে।</p>@ 2024 - ইমরান ইভানhttps://www.bangla-kobita.com/imranib71/ajosro-galpo/অজস্র গল্প2021-03-19T15:10:13-04:002023-06-25T03:58:40-04:00ইমরান ইভানhttps://www.bangla-kobita.com/imranib71/<p>ছেলেটা আমার পাশ দিবে,<br />অনেক বড় সাহেব হবে।<br />কষ্ট করে আর কটা দিন,<br />তারপরেই তো আসবে সুদিন।<br />মাতিয়ে রাখছে পাড়া-পড়শী,<br />মায়ের মুখে কি যে হাসি।<br />কত কষ্ট অনাহারে<br />অন্যের বাড়ি কাজ করে,<br />ছেলেটাকে রেখে ঢাকায়<br />পড়াশোনার খরচ জোগায়।</p>
<br /><p>প্রেমিকারও কত আশা<br />হবে এবার কাছে আসা।<br />কদিন পরেই শেষ পরীক্ষা,<br />অবসান হবে সব প্রতিক্ষা।<br />তারপর একটা চাকরি পেলে<br />বাবা-মাকে দেবো বলে।</p>
<br /><p>ছেলেটারও দিন ফুরায়না,<br />মায়ের কষ্ট আর সয় না।<br />বৃদ্ধ বয়সে আর কত<br />সইবে মায়ে ক্ষিদের ক্ষত।<br />মেয়েটাও কম করেনি<br />এত ঝড়েও হাত ছাড়েনি।<br />যদি একটা চাকরি পাই<br />দুজনকেই নিয়ে আসবো ঢাকায়।</p>
<br /><p>একাত্তরের সময়ের কথা<br />এখনো আছে স্মৃতিতে গাথা।<br />২৬ মার্চ আসেনি তখন<br />কথাগুলো হচ্ছে যখন।<br />এমন নয় একখানা,<br />অজস্র গল্প আছে জানা।</p>
<br /><p>স্বপ্ন দেখার আরেকটি রাত,<br />হয়নি সেদিন শুভ প্রভাত।<br />২৫ মার্চ রাতের ঢাকায়<br />হায়নারা গনহত্যা চালায়।<br />মায়ের মুখে কান্না ভারি,<br />ছেলের লাশ আসলো বাড়ি।<br />প্রেমিকাও নির্বাক নিথর<br />ঝড়ছে চোখে অশ্রু অঝর।<br />ছেলের শোকে জননী পাথর<br />প্রিয়তমা দুঃখে কাতর।<br />এমন আরো কতগুলি<br />মায়ের বুক করল খালি।<br />পশুর মত পাকসেনারা<br />শিশুদেরও ছাড় দিলনা।<br />প্রেমিকার মত হাজার নারী<br />করলো পশুরা শ্রীলতা হানি।</p>
<br /><p>নয়মাস ধরে যুদ্ধ হল,<br />কত কিছু ঘটে গেল।<br />ছেলের রক্তে, মায়ের দুখে<br />বীরঙ্গনা প্রেমীকার বিরহে,<br />অসংখ্য গল্পের আত্মত্যাগে<br />স্বাধীন হলো একটি দেশ,<br />বাংলাদেশ, বাংলাদেশ।।</p>@ 2024 - ইমরান ইভানhttps://www.bangla-kobita.com/imranib71/vabnar-shohor/ভাবনার শহর2021-03-18T04:19:34-04:002023-06-26T00:49:39-04:00ইমরান ইভানhttps://www.bangla-kobita.com/imranib71/<p>হায় প্রেমিকার শহর!<br />প্রেমিকার মতো তোমারও কোনকিছু স্থায়ী হয়না।<br />প্রেমিকা প্রেমিক পালটায়, ভালোবাসার রং পাল্টায়।<br />আমি পাল্টাই হাসির আড়ালে মুখোশ।<br />পাল্টে যায় জীবনের পাতাটা।<br />পাল্টাতে পারিনা নিজেকে।<br />রাত তিনটা সাতচল্লিশ (৩ঃ৪৭)<br />বুকের বা পাশটা চিন করে উঠে।<br />কয়েকফোটা লবণাক্ত পানি শুষে নেয় বালিশটা।<br />শুষে না কষ্ট গুলো।<br />ভাবনারা ভীর জমায় মাছ বাজারের মতো।<br />মাছিদের মতো খুঁজতে থাকি কিছু ফরমালিন বিহীন স্মৃতি।<br />তাজা স্মৃতিগুলো কত আগেই খেয়ে গেছে শকুনিরা।<br />একুরিয়ামের পানিটাও সমদ্রসম মনে হয়।<br />সেখানে হাতরে খুঁজে পায়নি একটাও গোল্ডফিশ।<br />রাতের দৈর্ঘ্য কমতে থাকে। বাড়তে থাকে ভাবনারা।<br />একটার পর একটা পাল্টাতে থাকি ভাবনার দুয়ার।।</p>@ 2024 - ইমরান ইভান