চোখে তার নেই আর আগেকার জ্যোতি
রুক্ষ আঙ্গুলে ছেয়ে গেছে পেলবতার ইতি
পারে না পরাতে ছুঁচে সুতো এক চেষ্টায়
সেলাইয়ের ফোঁড়ে ফোঁড়ে ছুঁচ ফুটে যায়


মা তবু আঁধারে বসে একা, চেয়ে জানালায়
আপন হুঁশে নকশী কাঁথা সেলাই করে যায়


নানান শাড়ির ছেঁড়া পাড় সব কতই রঙিন
কিছু তার উজ্জ্বল, কিছু বা ফ্যাকাসে মলিন
আনমনে নক্সা পছন্দ করে নিজের অজান্তে
খোঁজে কোন রঙের সুতো পরাবে ছুঁচেতে
চোখে দেখে না ভালো, আন্দাজে হাতড়ায়
সবুজ, নীল, গোলাপি, লাল - যা হাতে পায়
ঝাপসা স্মৃতির বেদনা অশ্রুত করুন বিলাপে
ঠোঁটের ফাটলে ঘুমপাড়ানি শিহরণে কাঁপে


কী যে খোঁজে নীলাকাশে ছানি ধরা চোখে
কী দেখে, কী দেখে না, তা ফোটে না মুখে
কিন্তু কাঁথার জমির নীল তার চোখে ভাসে
যার গায়ে পেঁজা তুলোর মেঘ যায় ভেসে
সাগরে ঢেউয়ের চূড়ায় ঝরিয়ে বৃষ্টির রেণু
জ্বেলে দেয় এঁকে সুখের সাত রঙা রামধনু


আসলে, কাঁথায় আঁকে না মা কোন নক্সা
সেলাইয়ের বুনটে মাখায় স্বপনের নেশা
সোনাকে শোনাবে যখন ঘুমপাড়ানি গান
সোনা উঠে যাবে বেয়ে ঐ নক্সার সোপান
নীলাকাশে মেঘে বসে, হাতে ধরে রামধনুক
দেখবে নীচে মা চেয়ে আছে নিয়ে হাসিমুখ


এ সেই ধাইমা যে আশ্রয় দিয়েছিল কোলে
আজ বৃদ্ধা, পরিত্যক্তা, বুকে দুধ নেই বলে
চিরদিন পালন করে শিশু অপরের জঠরের
আজ আর পায় না দাম মাতৃত্বের আদরের


তাই,
সেঁকতে শিশুকে শরীরের নিবোনিবো ওমে
ধাইমা নিজেকে বিলায় নকশী কাঁথার নরমে ||


----------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪