নাড়ু নস্কর লেনে থাকত সে, একাকিনী বাসিন্দা কুহেলিকা
আসত না সে জানালায়, না ঝুল বারান্দায় কভু দিত দেখা


দেখেছি তাকে কখন-সখন পাড়ার পথে যেতে আত্মমগনে
নিরিবিলি বেলা, বড় রাস্তার ছায়া ঘন তরুবীথির শূন্য অরণ্যে
ফুটপাথের শৈবালে, ছায়ার ফুকরে, নম্র রোদের ফিকে আঁচে
ফ্যাকাসে পায়ের পাতা মেলে যেত, বিড়াল পা ফেলার ধাঁচে
খোলা চুলে বেলি, মালায় চামেলি, সাজাত সে সেরে স্নানটি
দু’ বাহু নিরাভরণ, থাকত আঙ্গুলে না পালিশ, না কোন আংটি


যখনই দেখেছি তাকে, সে যেত, সে আসত চেহারা লুকিয়ে
মুখ কখনই দেখিনি তার, তাই পারব না তাকে দিতে চিনিয়ে
তবু, নাড়ু নস্কর লেনের সাথে অস্তিত্বের ছিল যত টুকু টান
সে শুধু কুহেলিকার রূপ দেখবার, দুর্বার ইচ্ছা এক আনচান


একদিন আমি একা দাঁড়িয়ে ব্যালকনিতে, বড্ড ফাঁকা মনটা
করছি অপেক্ষা শোনার জন্য, অতি চেনা একটি ট্রামের ঘণ্টা
নামবে কুহেলিকা, আসবে ওই বাঁ দিকের গলি দিয়ে বেরিয়ে
সেই হাতেই ঘুরে চলে যাবে সে, আমার দিকে পিঠ ফিরিয়ে


দেখলাম সে এলো কি, মাথাটা ডোবাল তুলে দুই ত্রস্ত হাত
যেন কোন অনাহূত ভ্রমরের সাথে, হয়েছে তার মোলাকাত
এড়াতে তাকে কুহেলিকা বেঁকে, ঝুঁকে, ঘুরিয়ে মুখ চকিতে
তাকাল আমার ব্যালকনির দিকে বিব্রত, বিপন্ন দুই আঁখিতে


দেখা হল না তার চিবুক, ঠোঁট, নাক ; না কালো ঘন বুনো চোখ
দেখলাম শুধু তার চাঁদনী কপালে, কপোলে খোদিত এক শোক
কোনও বসন্তের, দাগ বসন্তের,  যে দাগ যাবে না  শত ধুলেও
তাই কি সে কখনও তোলে নি মুখ ? দেখে নি আমায় ভুলেও


নাড়ু নস্কর লেন থাকবে থাকুক না – কুহেলিকাও থাকুক একা
আমি কি করব ? আমি অপারগ – হয়ে গেছে যে পাকা দেখা ||


---------------------------------------------
ইন্দ্রনীর / ২৯ জুন ২০১৪