পালিয়ে ছিল তারা এক নিশীথ  রাতে,
বাঁধবে  সংসার  একখানি কুঠির ঘরে,
পলাশপুরের শেষ প্রান্তে ।


বাঁধল  তারা একচালা  ঘর, একটি উঠান,
আর ছিল রান্নার জন্যে চুলো।


এইভাবেই কাটছিল  সংসার  খুব সচ্ছন্দে।
তাদের জীবনে নেমে এলো আনন্দের মেলা বছর দেড়েক  পরে।
ভালবাসা  নীড়ে তাদের কোলে এল এক কন্যা  সন্তান।
আদর করে নাম রাখিল নতুন।


যত্নে সযত্নে,  আদরে আবদারে  বড় হতে থাকে নতুন।
এক বছর যায়,  দু বছর যায়, তিন বছর যায়,
এইভাবে কেটে যায় পনেরাটা বছর।
যৌবনে পদার্পণ ।


নতুন,  লাল শাড়ি পরে  গ্রামের আঁকা বাঁকা রাস্তা দিয়ে স্কুল যাবার  বেলায়  দেখতো  গ্রামের কত দৃশ্য।
দেখতো সে বাঁশবনে পাখিরা  গান গায় মনের আনন্দে।
ছোট্ট  বাছুর ছানা লাফিয়ে চলে তার আগে আগে।
পুকুর পারে গ্রামের বধূ  ব্যস্ত সবাই কাপড় কাচাই
ছোট্ট  বিল্টু মায়ের কোলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে।


স্বপ্নের রাজকুমার , নদীর ধারে  কৃষ্ণের বাঁশি  হাতে নতুনের জীবনে প্রেম হয়ে দেখা দিল।
বাঁশরি  বাজে , গগনের মেঘ বৃষ্টি  হয়ে ঝরে পড়ে,  
বৃষ্টির তালে তালে নতুন নাচে দুলে দুলে।


ভালবাসার নীড়ে নেমে এলো  কালো অন্ধকার, হঠাৎ থমকে যায় বাবার স্পন্দন।
পাশে  নেই কেউ, আছে শুধু বৃদ্ধা  মা।
হাউমাউ করে কেঁদে  ওঠে নতুন,
যদিও জানে বাবা  ফিরবে না আলোর বৃত্তে।


রাত যায়  দিন আসে কেটে যায়  সময়,
একাকি দাঁড়িয়ে  জীবনের মাঝ রাস্তায়।
সময়ের কালে কালে ফুঁরিয়ে যায় গোছানো  সব অর্থ।
বৃদ্ধা মায়ের দিকে করুণ  নয়নে চাই,
ক্ষুধা  যে আর ধরেনা, কষ্টের কলাহলে।


জীবনের সব আহ্লাদ  ফেলে বের হল কাজের সন্ধানে।
এ বাড়ি যায় , ও বাড়ি যায় ,  কাজ তো মেলা ভার,
অবশেষে ভাবল যাবে সে ভালবাসার কাছে।
ভালবাসা  বলল ,  দেখো নতুন, আমি বাবাকে বলেছি  সব, বাবাজে রাজি নই কি করব বলো তবে।
আমি যে বাবারে ছেড়ে যেতে পারিনা তোমার সাথে।।
অসহায়  নতুন হতাশ হল শেষে।


শুনেছে  সে শহর তটে অনেক কাজের সম্ভার।
শহর তটে যাবার কলে পথেরসাথি  বৃদ্ধা মা, ফেলা আসা কিছু স্মৃতি।
শহরে কাজের সন্ধানে , দেখা গ্রামের মেয়ে নীলাদ্রীর সঙ্গে,
অতঃপর , নীলা কে দেখে নতুন বলে ওঠে এ কি তোমার সাঁজ,  পরিধানে এই ছোট্ট  পোষাক?
যাকে দেখেছি আমি লাল চুড়ি, রাঙা  শাড়িতে।
ঘুমান্ত পৃথিবীতে আছে যৌবনের চাহিদা,
উঁচু তলার ওই উঁচু  রাজপ্রাসাদ   গুলিতে নেই যে সুখ।
সুখ আছে ওই বেশ্যা খানার বস্তিতে, আমি যে এক বেশ্যা।


ভাবিল সে রূপ আছে, যৌবন আছে,
মানুষ দ্বারেদ্বারে  ঘুরেছে কত?
                     আর নয়,
নতুন করে সুখের লড়াই খুঁজে পেল ওই বেশ্যা বস্তিতে, যোগ দিল বেশ্যাবৃত্তে।
ঘৃনা চোখে সমাজের দিকে চেয়ে অট্টহাসি  হেসে   বলল সে "আজ আমি এক বেশ্যা"।