অপশন ছিল না
ইন্তিখাব আলম


তখন রাত্রি বারো টা ফোন টা বেজে উঠল,
পড়ার ঘরে বিছানায় চোখ দুটি প্রায় বন্ধ হয়ে এসেছে।
বিছানায় বইগুলো এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে, ঘরের লাইট অফ করা হয়ে ওঠেনি।
ফোনের স্ক্রিনে জুহির ছবি ভেসে উঠল।
প্রতিদিনের মতোই কল টা রিসিভ করে,
হ্যালো, বলো, এতো রাতে,
এটা কথার কথা, কতদিন গেছে রাতে একটা, দুটো,
সকাল পাঁচটা পর্যন্ত ফোনে কথা হয়েছে।
অবশ্যই এটা তিন থেকে পাঁচ বছর আগের কথা,
যখন আমরা রোজ রাতে কলেজ লাইফে প্রেমের গল্প করতাম।
জুহি আমার প্রেমিকা, আমার আত্মা,
বন্ধুরা আমাদের সম্পর্কে বলে মেড ফোর ইচ আদার্স।
অনেক দিনের সম্পর্ক, প্রায় সাত বছর, বা তারাও বেশি।
ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে একটা important কথা ছিল,
ওকে এখন দুষ্টামি করো না, I love you, বেবি,
শো ম্যাচ। উম্মা উম্মা করে ফোনে চুম্বন ছুঁড়ে দিলাম।
আমার এখনো ম্যাথ এর প্রবলেম গুলি শলভ করা হয়ে ওঠেনি।
এবার ফোনটা রাখো।
জুহি চিৎকার করে বলল না শুনতেই হবে,
আমি চুপ হয়ে গেলাম, বললাম বলো।
জুহি বলল ফোনে বলা যাবে না, কালকে দেখা করো।
আমি বললাম কোথায়, কখন,
সময় ঠিক হল সন্ধ্যা পাঁচটা, কলকাতার cc2 তে।
পরের দিন ঠিক পাঁচটায় হাজির হলাম নির্দিষ্ট স্থানে,
সাথে জুহির ফেভারিট চকলেট ডাইরি মিল্ক, কয়েকটা কুড়কুড়ে প্যাকেট তাকে দিলাম।
নিতে চাইল না, বলল পরে নিচ্ছি।
আমি বললাম, এবার বলো তোমার important কথা , যা ফোনে বলতে পারছিলে না।


ব্যাগ থেকে একটা বিয়ের কার্ড বের করল,
দেখে বললাম কার বিয়ে? তোমার দিদির?
তোমার তো আবার দিদি নেই।
নিশ্চয় তোমার দাদার, ঠিক ধরেছি না?
ও সরি তোমার দাদার তো বিয়ে হয়ে গেছে।
কার বিয়ের চিঠি?
জুহি বলল, আমার দু দিন পর বিয়ে,
বিশ্বাস। বিশ্বাস!! বিশ্বাস!!! করতে পারছি না।
তবুও বললাম যা! ঠাট্টা র করার জন্য আমাকে ডেকেছ?
বিয়ের কার্ড খুলে দেখলাম হা জুহির বিয়ে, কিছুক্ষণ নীরবতা, চোখ জলে অস্পষ্ট ভাবে ছলছল করছে।
তবুও মুচকি হেসে বললাম এতো দেরি তে বললে যে,
হয়তো এবার থেকে অভিনয় করে যেতে হবে।
ও বলল আমাকে, দেখো তুমি হার্ট হও না, আমি
বলতাম সাহস করে বলে উঠতে পারে নি তোমাকে।
আমি বললাম তুমি আমাকে এতো ভয় পাও?
দেখো আমার কাছে কোনো অপসন ছিলো না,
তুমি এখনো বেকার, চাকরি পাওনি।
বাবা মাকে বলতে পারেনি তোমার কথা,
কি করে বললো? বুঝে উঠতে পারেনি।
ছোটো খাটো একটা চাকরি পেলে বলতাম।
অনেক দিন ধরে আমার দেখা শোনা চলছিল,
তোমাকে বিয়ে করব বলে এতোদিন,
সবাইকে রিজেক্ট করে আসছিলাম।
তুমি আমায় ভুল বোঝানো না।
আমি বললাম ছেলেটা কি করে?
বলল ডাক্তার, আমেরিকার শিকাগো শহরে,
কোন এক হসপিটালের কর্মরত।
একটু মুচকি হেসে, ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছ?
তোমরা সুখী হও।
রেস্টুরেন্টের টেবিলের পরে থাকা চকলেট আর কুড়কুড়ে প্যাকেট টা নিয়ে, এগুলো তোমার আর প্রয়োজন হবে না।
হাজারো স্মৃতির পাতা, আর চোখে জল নিয়ে,
আমার জুহিকে বিদায় দিয়ে এলাম শেষ বারের মতো।
চোখের জল জুহি দেখেনি,দেখতেও দেয়নি। দেখেছিল রাস্তায় ধারে একটি বাচ্চা যাকে সেই চকলেট গুলি দিয়েছিলাম।
আনন্দে চকলেট খেতে খেতে বাচ্চাটি বলল,
আবার একাকী রাস্তায় কেউ সঙ্গী হবে,।।
চোখের জল মুছে এবার বাড়ির দিকে ছুটলাম।
নতুন করে আবার শুরু করতে হবে।।


চোখে জল ছলছল করছে,
বাসে চেপে জানালার সিটে গিয়ে বসলাম।
ফেলে আসা দিন গুলির কথা খুব মনে পড়ছে,
কলেজ স্ট্রিটে কত একসঙ্গে ঘুরেছি, কখনো বা
কপি সপে।
কলকাতার প্রতিটি রাস্তায় তার সঙ্গে স্মৃতি জড়িয়ে আছে, খুব করে জুহির কথা মনে পড়ছে।
চিন্তায় আমি মগ্ন, ভাবলাম যাক এতোদিন পরে,
জুহি পাগলিটা জীবনে প্রথম ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কত রাত ভেবেছি, পাগলী টা আমার জন্য অপেক্ষা করছে, ভেবে কষ্ট হতো।
এতোদিন পর একটু শান্তি পাবো,
এই ভেবে জুহির জীবন আমার জন্য নষ্ট হতে হবে না।
আজ রাতে শান্তির ঘুম ঘুমাব।
মনের মধ্যে নানা রকম কথা চলছে-
পাগলী টা আমার জন্য কতই না লড়াই করেছে,
লড়াই এর শেষে হার মানতে বাধ্য হয়েছে।
আমি জানি জুহি আমার জন্য কষ্ট পেয়েছে,
হয়তো রেস্টুরেন্টে বসে বসে কাঁদছে।
আমার এই ভাবে ছেড়ে আসা ঠিক হয় নি,
আমাকে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।
সত্যিই তো জুহির কাছে অপসন ছিল না।