সুইসাইড নোট
ইন্তিখাব আলম


পরের দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠেনি মায়াবী, চঞ্চল, বাড়ির আদরের মিষ্টি মেয়েটি,
যে রোজ সকালে ঘুম থেকে ওঠে তুলসীগাছে জল
দিয়ে,
আর পূজা অর্চনা মাধ্যমে দিনগুলি শুরু করত নিজের মতো করে।
সকলের সামনে হাসি খুশি মুখ, আনান্দে দিন কাটাত এবেলা থেকে ওবেলা।
কেউ তাকে দেখে বলতে পারবে না তার অন্তরের মধ্যে কষ্ট আছে, হাজারো ক্ষত জমে আছে।
হা সেই আদুরে মেয়েটি ঘুম থেকে ওঠে নি--
সে চীর জীবনের জন্য শান্তির শয়নে নিমজ্জিত,
ঘরের দরজা ভেঙে অবিশ্বাস্য দৃশ্য ফুটে উঠছে,
মেয়েটি তার প্রিয় ওড়না দিয়ে শেলিং ফ্যানে ঝুলে পড়েছে।
হ্যাঁ মেয়েটি সুইসাইড করেছে।


পাশে পড়ে আছে কয়েকটি পেজের সুইসাইড নোট,


বাবা, পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও,
আমি জানি তুমি আমাকে হারতে শেখাও নি।
কিন্তু আমি হেরে গেলাম, হেরে গেলাম নিজের কাছে।
গত তিন মাস থেকে আমি, রাতে দু চোখের পাতা এক করতে পারে নি।
চিন্তায় মগ্ন ছিলাম, ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার উপায় খুঁজছিলাম অন্দরে অন্দরে।
আমি গত তিন মাস খুব জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি,
যুদ্ধে তোমার মেয়ে পরাজিত হয়েছে বাবা, বারবার।
বাবা আমি বিয়ের আগেই পেগনেন্ট, তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
একদিকে বিশ্বাস, অন্যদিকে তোমার মানসম্মান
আমাকে রাতে ঘুমাতে দেয় নি।
প্রেম ||
হা প্রেম!! আমাকে আজ ফাঁসির মঞ্চে দাঁড় করে দিয়েছে।


তোমার মনে আছে বাবা, ফাস্ট ইয়ারের কলেজের
এডমিশনের দিন, দ্বীপদার কথা,
পাশের গ্রামের ছেলে, তোমারেই ছাত্র ছিল।
তুমি বলেছিলে, যাক বাবা, তুমি এই কলেজে পড়,
যাক ভালো হল, এ আমার মেয়ে এই কলেজে ভর্তি করলাম।
কোন অসুবিধা হলে আমার মেয়েটা কে একটু দেখিও,
ও বলেছিল স্যার কোন চিন্তা করবেন না, আমি তো আছি।
তুমি বলেছিলে দ্বীপ খুব ভালো ছেলে, কিচ্ছু অসুবিধা হলে দ্বীপ কে বলিস।
সে দ্বীপদার প্রেমে পড়ে ছিলাম।


তারপর থেকে দ্বীপদা প্রথম প্রথম আমাকে
স্নেহের চোখে দেখত।
মেস খুঁজে দেওয়া থেকে কলেজের যাবতীয় কাজ,
লাইব্রেরি কার্ড করে দেওয়া, প্রয়োজনীয় বই,খাতা কিনে এনে দেওয়া সবই দ্বীপদা করত।
কিছু অসুবিধা হলেই, দ্বীপদা কে বলতাম, দ্বীপদা মুহূর্তের মধ্যে প্রবলেম গুলি সমাধান করে দিত।
আস্তে আস্তে দ্বীপদার সাথে দৃঢ় বন্ধনে জড়িয়ে পরছিলাম,
দ্বীপদা ওই, দ্বীপদা ওটা করে দাও, শুধু মনের মধ্যে একটাই নাম ভাসত দ্বীপদা।
ধীরে ধীরে দ্বীপদা অভ্যস্ত হয়ে ওঠলাম।
তখন দ্বীপদার সব কথায় ভালো লাগত, চলার
ধরণ, তার অ্যাটিচ্যুঢ দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতাম।
একদিন একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে আমাকে প্রপোজ করল,
আমি এক মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা না করে হ্যাঁ করে দিয়েছিলাম।
দ্বীপদাকে কত মেয়ে পেতে চাইত?
আমি কাছে পেয়ে ছাড়ার কথা ভাবেনি।
তারপর আরও গভীর হয়ে ওঠতে লাগলো ভালোবাসা,
রাস্তায় দ্বীপদার হাতে হাত ধরে চলতে খুব ভালো লাগতো।
তার সাথে সময় কাটাতে পারা মানে স্বর্গের মধ্যে থাকা।
আমি খেয়াল করতাম, আমার পড়ার ক্ষতি না হোক,
সেই ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকত সে।
আমাকে খুব করে পেতে চাইত, আর ভালবাসত।
ভালোবাসা গভীরতায় একদিন দুজনকে বিছানায়
নিয়ে গেলো,
তারপর থেকে মাঝে মধ্যে যৌবনের খেলায় লিপ্ত হয়েছি।


এরপর একদিন জানতে পারলাম আমি অন্তঃসত্ত্বা, আমি মা হতে চলেছি।
আমি দ্বীপদা কে জানানোর পর, দ্বীপদা ভেঙে পরে।
আমাকে পেটের সন্তান নষ্ট করে দিত বলল,
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম, ওটা দ্বীপদা।
মনে হল দ্বীপদা যৌবনের চাহিদা মিটানোর জন্য
আমাকে ব্যবহার করল, এইভাবে।
আমি বুঝতে পারিনি বাবা ওটা আমার দ্বীপদা।
তারপর থেকে প্রতিদিন কোলাহল লেগে থাকত,
একটাই কথা তাকে অ্যাব্যারশন করে নষ্ট করে দিতে হবে।
দ্বীপদা কাঁদত, একটা অভ্যন্তরীণ ব্যথায় ভোগত,
সে ব্যাথার কথা আমাকে কোনদিন বলেনি।
আমি তাকে সুইসাইড এর ভয় দেখালাম,
সে একটাই কথা বলত সুইসাইড এর আগে, আমাকে একবার জানিয়ে দিয়।
আমি সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করেছি দ্বীপদা কে বোঝানোর, আমি ব্যর্থ হয়েছি।
বলো বাবা, আমি কি করে পারতাম নিজের সন্তান কে নষ্ট করে দিতে? আমি পারেনি বাবা।


সন্তানের মৃত্যুর সাথে সাথে মায়ের মৃত্যু শ্রেয় ভেবে,
আমি কয়েকদিন ধরে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছি।
ভয়ে আমি ফিরে এসেছি।
সম্মান হানীর ভয় আমাকে মৃত্যু আমাকে আপন করে নিতে চাইছে।
আজ আমাকে পারতেই হবে,
আমি আর পারছি না, এই কোলাহল।
আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।
দ্বীপদা কে ভুল বোঝানো, দ্বীপদা আমার ভালো চাইত।
আজ দ্বীপদা কে বলেছি আমি সুইসাইড করব।
জানি বিশ্বাস করবে না, আমি নাকি ভিতু।
বাবা পারলে পরাজিত মেয়েকে ক্ষমা করে দিও।


কিছুক্ষণ পরে খবর এলো, দ্বীপদা গোলায় ফাঁস দিয়ে সুইসাইড করেছে, আর একটা সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে।।।


Second Part Upcoming Soon