ছন্দচটি-০৩
*স্বরবৃত্ত ছন্দ
এই ছন্দের অন্য নাম হলো— লোকছন্দ, প্রাকৃত বাংলা ছন্দ, ছড়ার ছন্দ, দলবৃত্ত, বলবৃত্ত, বলপ্রধান, লৌকিক ছন্দ, চিত্রা ইত্যাদি৷
রবীন্দ্রনাথ বলেন— "স্বরবৃত্ত ছন্দ আউলের মুখে, বাউলের মুখে, ভক্ত কবিদের গানে, মেয়েদের ছড়ায় বাংলাদেশের চিত্তটাকে একেবারে শ্যামল করে ছেয়ে রয়েছে৷"
সত্যেন্দ্রনাথ বলেন— "এ নিরক্ষরের ছন্দ৷ সংস্কৃতের উল্কিতে এর চেহারা বদলে যায় নি; সেই জন্যই ভাষার নিজেস্ব রূপটি এতে বজায় আছে৷"
কেউ কেউ এই ছন্দকে 'মেয়েলি ছন্দ' বলে থাকেন৷
স্বরবৃত্ত হলো যে ছন্দে যুগ্নধ্বনি(বদ্ধস্বর) সব সময় একমাত্রা গণানা করা হয় বা ধরা হয় এবং প্রত্যেক পর্বের আদিতে শ্বাসাঘাত পড়ে৷ সাধারণত এই ছন্দের পূর্ণপর্ব চারমাত্রা হয়, অপূর্ণ পর্ব তিন, দুই, এক মাত্রা হয়; চরণান্তে শেষ পর্ব অপূর্ণ হয়৷ তবে শেষ পর্ব অপূর্ণ হতেই হবে এমন নয়৷
স্বরবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য:—
ক) স্বরবৃত্ত ছন্দে যে-কোনো অক্ষর এক মাত্রা গণনা করা হয়(মুক্তাক্ষর, বদ্ধাক্ষর)৷
খ) প্রত্যেক পর্বের প্রথমেই স্বরাঘাত পড়ে৷
গ) এই ছন্দে প্রত্যেক পূর্ণপর্বে কমপক্ষে একটি করে যুগ্নধ্বনি(বদ্ধাক্ষর বা বদ্ধস্বর) থাকে৷
ঘ) কথ্য রীতির ক্রিয়াপদ ব্যবহার হয়৷
ঙ) লঘু চপল ভাব প্রকাশের উপযোগী৷
চ) এই ছন্দ দ্রুত লয়৷
উদাহরণ—
বাংলা তোমার/৪ বেহাল দশা/৪
বিশ্বমাঝে/৪ আজ!১
কেমন করে/ রাখবে ঢেকে/৪
এমন বড়/৪ লাজ?১
বাংলা বলে/৪ শোন রে বোকা-/৪
ভণ্ডশিষ্যের/ গুরু,২
প্রতারকের/৪ হস্তে পড়ে/৪
ধ্বংস আমার/৪ শুরু!২
স্বাধীন হলাম/৪ নামে মাত্র/৪
পেলাম ধোঁকা/৪বাজ,১
তাদের বংশ/৪ তোর কাছে যে/৪
শিখলো কাব্যের/৪ কাজ৷১
বুঝলি না তুই/৪ পেয়েছিলেম/৪
আজব পশু/৪ যত,২
এদের দেখে/৪ মাপ রে বোকা/৪
আমার বুকের/৪ ক্ষত!২
পূর্ণপর্ব ৪ মাত্রা, অপূর্ণ পর্ব ১ ও ২ মাত্রা৷
প্রত্যেক পূর্ণপর্বেই বদ্ধাক্ষর(যুগ্নধ্বনি/বদ্ধস্বর) রয়েছে৷