সুসং রাজার দেশে
ইসমত আরা মমতাজ
(নেত্রকোনার দুর্গাপুর-কলমাকান্দা বাসীর প্রতি সশ্রদ্ধ উৎসর্গিত)
আকাশে মাটিতে মিতালি পাতিয়ে
অদূরে গারো ঐ সীমান্তে দাঁড়িয়ে
নেত্রকোনার অতন্দ্র প্রহরি স্বাচ্ছন্দে;পাদদেশে
চিরনিদ্রায় সুসং রাজা শায়িত নিশ্চিন্তে।
সোমেশ্বরি আর কংস করায়ে স্নান অহর্নিশ
ধুয়ে মুছে সাফ করে সব জঞ্জাল
পাহাড়ি বালা কলমাকান্দা আর দূর্গাপুরের,
এভাবেই দুই বালা গলায় গলায়
কাটিয়ে দেয় অষ্ট প্রহর সুখের-দুঃখের।
গারো, হাজং, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান
আর হিন্দু মুসুলমান-
যে যার ধর্ম মানে অর্পিত নিয়মে।
ধর্ম-বর্ণের অদৃশ্য দোহাই ভুলে
একই সুর গুঞ্জরণে,পার করে
বছর-যুগ, মানবতার ঐক্য বন্ধনে।
বর্ষায় কংস যখন ধেয়ে আসে রুদ্র ‘কংস’
হয়ে,থেমে যায় বালাদের মধুর নিক্কণ,
খুলে খুলে যায় বিজয়পুরের শ্বেত কন্যার শেত নূপুর
কেটে যায় ঝর্ণার গানের তাল-লয়-ছন্দ আর সুরের মুর্ছণ।
হাওড়-বাওড়,খাল-বিল, সীমাহীন জলামাঠ
কৈ,শিং,মাগুর, চিতল, বোয়াল,গজার আর
সর্ব রোগের মহৌষধ ‘মাশোল’ মশাই’র আদি
বাসভূম এই পাড়,কংসের।
হলুদে-সবুজে বাহারি ধানের ক্ষেত যতদূর দেখা যায়
শরৎ-হেমন্তে কেবলই মন মাতিয়ে যায়।
রূপসী বাংলার রূপিনী শ্যামলী যেন
সোনার মল পায়ে দিয়ে সুরের মাতম ধরায়।
আকাশে বাতাসে ভাসে বাঁশমোতি, কালি জিরার মিষ্টি সুবাস
কিষাণের মন দোলায় শান্তি সুখের নির্মল সুবাতাস-
কিষাণি বধূ খুসির জোয়ারে মন ভাসিয়ে
চোখে আঁকে স্বপ্নের অঞ্জন,আটপৌরে শাড়ির ঘোমটার ফাঁকে
আড়চোখে চায় বুক ভরা ভালোবাসায়; পরম তৃপ্তিতে
দিনশেষে ক্লান্ত দেহটা এলিয়ে দিয়ে শক্ত মাটির
দেয়লের গায়-বিভোর নিদ্রা যায়।
রাত পোহালেই সগন আসে দাওয়ায়-
পিঠা-পায়েসের ধুম পড়ে যায় পাড়ায় পাড়ায়।
ক’দিন বাদেই শীত বুড়ি আচমকা দেয় হানা
পাড়ার নয়ন, মাইকেল, নগেনরা মিলে খড়ের আগুন তাপায়।
ভোর বিহানে টাটকা খেজুরের রসের চোঙায়
স্বাদের চুমুক টানে; ধোঁয়া-তোলা ভাপা-পুলি আর পাটিসাপটার
অপার স্বাদ নেয় চন্দনি-অমাবশ্যায়।
চৈত্রে চলে গারো’র বুকে পাহাড়ি আবাদ ‘জুম’
লাল, নীল, হলুদ বেগুনি বনফুল হরষে- আমোদে
তখন পাহাড়ি বালার কপোলে খায় চুম।
***মাশোল- এক প্রকার বিরাটকায় মাছ, এর কেতাবি নাম মহাশোল।
***সগন-আত্মীয়,কুটুম
***তাপায়-পোহায়,আগুনের উত্তাপ নেয়
***বিহান-সকাল
***চন্দনী- চন্দ্রিমা,পুর্ণিমা
বরদল। কলমাকান্দা, নেত্রকোনা, ২০০১ খ্রিঃ