কবিতা:- আমার গ্রাম
✍️ মনোজ ভৌমিক


আমার আদর্শ গ্রাম আছে ধরা 'পরে,
রূপনারায়ণ তীরে নদীবাঁধ ধারে।
ঊষার কিরণে হয় আলোকিত গ্রাম,
অরূপ রূপেতে যেন ও বৈকুণ্ঠধাম!
সুজলা সুফলা গ্রাম নয়নাভিরাম,
"সওদাগর" ছবিতে আছে যার নাম।
"আমন্ত্রণ" ছায়াছবি এ নদের তীরে,
হোগলার বন হেথা দুলিতো সমীরে।
হিজল-বকুল আর আছে বাঁশ ঝাড়,
মনোরম দৃশ্যে শোভে পুকুরের পাড়।
আট-দশ পাড়া নিয়ে ছোট্ট এই গ্রাম,
বাঁধের থেকেই শুরু কাশিয়াড়া নাম।
আম-জাম-নারকোল শিরীষের সারি,
পুরাতন বটগাছে ঝোলে কত ঝুরি।
তাল আর খেজুরের ছিল হেথা মেলা,
সময়ের সাথে দেখি বড় কালবেলা!
ছায়া ঘেরা মোর গ্রাম পুকুর সর্বস্ব ,
চণ্ডী ও দুর্গা পুকুর সবার নমস্য।
মাছরাঙা পানকৌড়ি ডুব দেয় জলে,
ঝাঁকে ঝাঁকে পাতিহাঁস মাতে কোলাহলে।
কামার-কুমোর-তাঁতি ব্রাহ্মণ ও চাষা,
সকলের মধ্যে বিরাজিত ভালোবাসা।
তিনবার শস্য ফলে চাষের জমিতে,
চাষীরা করতো চাষ লাঙলে গরুতে।
ব্যবসা বাণিজ্য ছিল এ নদে সুগম,
সওদাগরী নৌকায় ছিল বড় দম।
গ্রামটির মাঝখানে আছে আটচালা,
দেব-দেবীর দেউল থাকে সদা খোলা।
চণ্ডী মনসামঙ্গল চৈত্রের গাজন,
সাড়ম্বরে ভরে দেয় গ্রামবাসী-মন।
শিক্ষা-দীক্ষায় এ গ্রাম সদাই আদর্শ,
সমাজের সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়েছে হর্ষ।
গ্রামে আছে ছোটো স্কুল আর প্রাইমারী,
পাশের গ্রামেতে আছে দু'টি সেকেন্ডারি।
সপ্তাহে দুই দিবস হাট বসে চরে,
কেনাবেচা হাঁকডাক সারাদিন ধরে।
সাঙ্গ হয় অবশেষে দিবসের খেলা,
জোনাকির আলো নয় বিদ্যুৎ এ বেলা।
সময়ের সাথে আজ বদলেছে চিত্র,
এসেছে "সজলধারা" ভাবনা বিচিত্র।
রূপনারায়ণ তীরে হয়েছে উদ্যান,
শহর ছুঁয়েছে গ্রাম নেই ব্যবধান।
সড়ক হয়েছে আজ বাঁধের উপরে,
চলছে টোটোর গাড়ি গ্রামের ভিতরে।
সকল ঋতুতে গ্রাম অতি মনোহরা,
রাজনীতি গৌন হেথা আছে ভাইচারা।
পরজন্ম বলে যদি থাকে কিছু আর,
দেখি যেন এই গ্রাম চোখে বারবার।