কবিতা:-কুমোরটুলির দূর্গা হয়নি চুরি।
কবি:-মনোজ ভৌমিক


ধোঁয়াশাচ্ছন্ন চোখগুলিতে শরতে গোধুলীর রঙ এখনো লাগেনি,
একাদশীর শিশিরে চোখ রোগড়ে এখনো স্বতেজ হয়ে শিউলিরা ফোটেনি।
বস্তির রঙমশালী জীবনে দিগন্তের অসুখের মাঝে করবীর আলাপন,
ধীরে ধীরে ঢলে পড়ে রাতের অন্ধকারে মহুয়ার গন্ধমাখা আধঢাকা তন।
হঠাৎ উঠল জেগে রঙভাঙা তন ঢেকে বস্তির আধো ঘুম চোখ,
গুনগুন স্বর নিয়ে কেউ হাসে কেউ কাঁদে,"কুমোরটুলির দূর্গা না কি নিখোঁজ?"
এখনো তো শারদ পঞ্চমী আসেনি! তাহলে বস্তিতে দূর্গার কি করে প্রবেশ!
তাহলে কি কুমোরটুলি থেকে আসার পথেই দূর্গা হয়েছে কি নিঃশেষ!
অনিমেষ নির্মিমেষ,ভারাক্রান্ত চোখদুটি লাঠির 'পরে ভর করে চেয়ে আছে অশেষ।
একবুক পাথর চেপে মেয়ের স্মৃতিটাকে সংস্কারের বেড়াজালে বেঁধেছিল বেশ।
পত্নী বিয়োগের পর বিষন্ন মন শরীরের এক অংশ পক্ষাঘাতে হয়েছে শেষ।
কুমারী মেয়ে মঞ্জুরী বুঝেছিল মজবুরী, কুমোরটুলির কাজে করেছিল মননিবেশ।
কুমোরটুলির সঞ্জয় মিস্ত্রী রঙ তুলি মাখা ফুটন্ত যৌবনের রেশ এতদিন ভুলেছিল বেশ।
শরতের শিউলিতে প্রেমের আলাপন, হেমন্তের শিশির ভেজা রাতে সিক্ত যৌবন।
বৈশাখের ঝোড়ো হাওয়ায় প্রণয়ের প্রস্তাব তখন,সঞ্জয় বলেদিল,"করিস না জ্বালাতন। "
প্রচণ্ড শ্রাবণ তখন দু'চোখের বন্যায় দোদুল্যমান নৌকা ডুবে যেতে চায়।
অনিমেষের দৃঢ় হাত গলাটিপে ধরে বস্তির মাটিতে মঞ্জুরী দূর্গা প্রসব করে।
মেয়ের ক্রন্দন বাপের বুকে আজও স্পন্দন, একপায়ে লাঠি ভর করে,শিক্ষার ফেরিওয়ালা ঘোরে।


বস্তির অন্ধকারে,আলোকিত দূর্গা হয়েছে সব্যসাচী অনিমেষ প্রজ্ঞা।
সবাই বলছে কেন আজ,"দূর্গা হয়েছে চুরি!"মন মানে না।হতে পারে ছলনা!
জয়ধ্বনিতে ফিরে আসে দূর্গা,ঊষার আলোতে বিজয়িনী রূপেতে।
রণচণ্ডী দূর্গা আজ বাঁচিয়েছে বস্তির দশ জন কুমারী কন্যাকে।
মানুষের ছদ্মবেশে সমাজের কষাইরা বেচে দিয়েছিল তাদের বিদেশীর হাতে।
দূর্গা হয়নি চুরি এ তো তার মজবুরী যুগে যুগে আসবে দূর্গা,দুর্গতি নাশিনী রূপেতে।