গল্প কবিতাঃ-মন্থন
✍️ মনোজ ভৌমিক
সময়টা হেমন্তের গোধূলি।সূর্য কেমন অস্থির ভাবে ডুবছে! ধোঁয়াশা চিরতে চিরতে অস্তরাগ যেন বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে।অরিত্র কাজ থেকে ফিরে হন্তদন্ত হয়ে কিছু একটা দরকারি কাগজ খুঁজতে গিয়ে হতভম্ব হয়ে উঠেছে।ঘরের সব জায়গা তন্নতন্ন করে খুঁজে চলেছে। কোথাও হদিস পাওয়া যাচ্ছে না!গৃহকর্তার এ হেন দশা দেখে সব্বাই তটস্থ।অবশেষে অনিন্দিতা সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলো,"কী হারিয়েছ কি?"অরিত্র উদ্ভ্রান্তের মত খুঁজেই চলেছে। এসব দেখে মেয়ে পূর্ণিমা গর্জে উঠলো,"আজ কার দোষ? প্রতিবার তো যেকোনো অজুহাতে মায়ের দোষ হয়। এবারেও কি তাহলে..."অরিত্র নিশ্চুপ। সামনে এসে দাঁড়ায় ছেলে মৈনাক।চোখ দুটো বড় বড় করে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,"এবার সত্যি সত্যিই বয়স হয়েছে।স্মৃতি শক্তি লুপ্ত হতে চলেছে।কিছু ব্যক্তিগত না রেখে শেয়ার করার চেষ্টা করলে ভালো হয়।"যেন ছোটোবেলা থেকে পাওয়া নিজের উপর সমস্ত অনুশাসনের প্রত্যুত্তর দিল।
সবাই ভীষণ জানতে উৎসুক, " হারিয়েছেটা কি!" অরিত্র বেশ কিছুটা সময় চুপচাপ বসে থাকে।পরিশেষে উত্তর দিল,"একটা ফিক্সড ডিপোজিট সার্টিফিকেট।"সবাই সমস্বরে চিৎকার করে ওঠে,"কত টাকার??"উত্তর আসে,"পাঁচ হাজার।"সক্কলে কেমন যেন বিরক্তির দৃষ্টি ফেলে চলে যায়।ওদের কাছে পাঁচ হাজার টাকা অতি নগণ্য হলেও,অরিত্রের কাছে ও টাকার মূল্য রয়েছে অনেকখানি।কি করে সে এতখালি দ্বায়িত্ব জ্ঞান হীন হয়ে উঠতে পারে!যার থেকে কোম্পানির একটা ক্ষুদ্র নথী পর্যন্ত এদিক ওদিক হয় না, তারই ঘরে সে নিজেই..কি করে সম্ভব!ছেলে মৈনাকের কথাগুলো তার কানে বার বার ধ্বনিত হতে লাগল।হঠাৎ করে ঘরের বড় আয়নায় চোখ পড়ে।নিজেকে দেখে অবাক হয়ে ওঠে।কাজ আর সাংসারিক তাড়নায় যেন কত যুগ ও আয়নার সামনে এভাবে মুখোমুখি হয়নি।অফিসে যাওয়ার শীঘ্রতায় শুধু মাথায় চিরুনি বুলিয়েছে। সত্যিই আজ সে বুড়ো!মাথার অজস্র চুলে পাক ধরেছে।শরীরের মাংস পেশীতে আর সেই দৃঢ়তা নেই!মুখমণ্ডলেও বয়সের ছাপ পড়েছে!সেদিন পিয়ন যেন কিছু একটা বলছিল,"বাবু,আপনি আজকাল বড্ড ভুলে যান...কোন ফাইল কোথায় রাখতে বলেন নিজেও বোঝেন না।"সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে উপর থেকে ডাক আসে,"অনেক হয়েছে,রাত হলো।উঠে এসো।গিলতে তো হবে।"অবজ্ঞার স্বর হৃদয়ের অন্তস্থল জ্বালিয়ে দিল।রিটায়ারমেন্টের আর দু’বছর বাকি!তারপর!!বৃদ্ধ হলে কি সংসারে অপাঙক্তেয় হতে হয়!ভাবনার মন্থন করতে করতে রাস্তার স্ট্রীট লাইটটা নিভে গেল!রাস্তার দূরত্ব সে আর ঠাওর করতে পারেনা...