কবিতাঃ- শুধু চোখে পড়ে
✍️ মনোজ ভৌমিক


হাজার বছর ধরে হেঁটে যাওয়ার
শপথ নেওয়া হে কবিতা পথিক,
শুধুই হেঁটেছ তুমি
বাংলার মাঠ, ঘাট, নদী-নালা, সবুজ আঁচল ছুঁয়ে!
ঘেটেছিলে গাঙুরের ঘোলা জল পরম আদরে।


শোনেনি তো তিলোত্তমার আগ্রাসী কোলাহল!
একবার যদি শুনে নিতে
হয়তো স্তব্ধ হতো ট্রামের ক্যাচার!!
আর্তনাদ ওঠেনি তোমার একবারও বাঁচার...


মন্বন্তর সয়ে গেছো, মহামারী তাও!
মহাযুদ্ধের অভিশাপ বুকে হয়তো বাঁচতে চাওনি আরও!!
তোমার চোখ নিয়ে যখনি দেখছি রূপসী বাংলার ছবি,


দেখেছি, রূপসার জলে নেই সেই ভাবের উন্মাদনা!
হিজল-বকুলের শিখে ডেকে যায় ঘুঘু!!
জামুনের শাখে বসে ডাকে না দোয়েল!
অশথের হলুদ পাতায় লেখা সময়ের বিবর্ণ ইতিহাস!!
জলাশয় ভুলে গেছে মরাল-মরালীর প্রেমময় সন্তরণ!
কচুরিপানার ঘরে ঘুমিয়ে আছে ডাহুকের স্বর!!


মাটির সেঁদো গন্ধ ঢেকে গেছে
কংক্রিট পাথরে পাথরে!
চারিদিক বড় বিষময়!
জনপদে হাঁটে না আজ কেউ!
একা একা লাগে শুধু ভয়!!
অযথা ঘষা লাগে বড় বড় গাছে!
জেগে ওঠে শত দাবানল!!

পৃথিবীর দিকে দিকে আজ শুধু দগদগে ঘা!
লাশে লাশে ভরে গেছে খাল-বিল-নদী,
একবার ফিরে এসে দেখে যেতে যদি!
কবর খুঁড়ছে দেখি ক্ষুধার্ত ইঁদুর!
শঙ্খচিল দেখি না আর সান্ধ্য দিগন্তে...
শুধু গাঙচিল উড়ে যায় মরা নদী ছুঁয়ে!!


লক্ষ্মী পেঁচা বসে না ওই কৃষ্ণচূড়া শাখে!
কেবলি কালপেঁচা বসে আছে পৃথিবীর ছাদে!!
রক্ত শূণ্য মাটি বার বার কেঁপে ওঠে মহা জ্বরে!
সুদর্শন উড়ে না বাংলার গ্রামে গঞ্জে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে!


ফেনিল সমুদ্র ছুঁয়ে দারুচিনি দ্বীপের ভিতর
বনলতার ভাস্কর্য খোঁজা,শুধু সময় অপচয়।
গ্রাম ভেঙে ভেঙে হয়েছে শহর!
যদি হাজার বছর ধরে হাঁটতে...
দেখে নিতে আরো অজানা কত ভয়!
শুধু চোখে পড়ে শত বছরের ইতিহাসে
এই বিস্তীর্ণ তিলোত্তমার রাজপথে
ট্রামে লেখা তোমার শেষ পরিচয়!!