পল্লী কবির ঘাটা হইতে-মাধবদীয়ার দিকে
মেঠো পথ ধরি হাটিতে হইবে-একটু বামে বেঁকে।
কিয়দ্দুর এগুতেই চক্ষে পড়িবে- দু-মানুষ সম উঁচু একটি গ্রাম
পুব-পশ্চিম হয়ে শুয়ে আছে যেন্- ”চৌদ্দ হাজীর ডাঙ্গী” ইহার নাম।
ঘটি বাটি নিয়া সৎ সাহসিকতায়- তাওয়াক্কুল করে সাথী
পায়ে হাটি হাটি- ছুটিছে দ্রুত - অবিরাম দিবারাতি।
ভাই বোন সহ ছোট বড় মিলে – সুন্দর এই কাফেলা
মা‘বুদের ঘরে হাজিরা দিতে – না হয় যেন্ অবহেলা।
কত গ্রাম আর কাঁদা মাটির পথ – নদী হইয়া পাড়
সমুদ্র পথে জেদ্দা পাইতে – চড়িয়া ষ্টিমার।
কত শত মাইল মারিয়া তাহারা- গিয়া কাবার ধার
বলিছে কাঁদিয়া ”লাব্বাইক আল্লাহুম্মা” – আল্লাহু আকবার।
ফিরিয়া আসিল পূন্যময় কাফেলা- মক্কার  ধূলি নিয়া
প্রিয় নবীজির (সঃ) শান্তির জবাব আর –হেদায়ার দো’আ পাইয়া।
গাঁ এর পর গাঁ ভাসিল সহসা – মুখে মুখে গেল রটে
দলে দল বাঁধি আকুলি চিত্তে – দেখিতে আসিল ছুটে।
পথিকের তরে জিজ্ঞাসিলে কেহ – কোথা যাও মাগো কোথা যাও বাবাজান?
টলমল চোখে বলিছে খুশিতে – যাই দেখিবারে চৌদ্দ পূন্যবান।
নারী পুরুষ সমেত চৌদ্দ হাজ্বীর – ছিল ঐ কাফেলা
তারই সম্মানে  এ গাঁ এর গলে – “হাজ্বী ডাঙ্গী” নামের মালা।
সেথা গিয়ে আজি কি দেখিতে পাই- আফসুসে ফাটে বুক
হাজ্বীরা থাকিলে বনে গিয়ে তারা – লজ্জায় ঢাকিতো মুখ।
ধর্মহীন জাতী কাহাকে বলে – হয় যদি দেখিতে সাধ
যাইতে হইবে “ হাজ্বী ডাঙ্গী” গ্রামে – ভাঙ্গিতে ইচ্ছার বাঁধ।
হাজ্বীদের  পেটে জন্ম নেয়া কিছু - চাপাবাজ ওয়ারিশান
করে আজি পীর বাবা নিয়া মাতমাতি গাহে হুক্কাহুয়ার গান।
পড়েনা নামাজ , রাখেনা রোজা- বুঝেনা কালেমার শান
বুক ফুলিয়ে গর্বে তবু বলে,  মোরা – সাচ্চা মুসলমান।
কথায় কথায় ফতোয়া দেয়া  যেন – আজম্ম অধিকার
দলিল চাহিলে সামনে টেনে আনে ”শান” আটরশি বাবার।
বাবা যেন ওদের ছিনাতে বসা- বাবা ছাড়া কিছু নাই
বার কাঠা দুরে বাবার নামে মসজিদ গড়িছে ওরা তাই।
আট চল্লিশ হাত পরে পরে  মসজিদ - যদি হয় দুরত্ব
হবে কি নামাজ ? বলিবেন ভাই – জেনে কুরআনের মহত্ত্ব।
একটি বাড়ীতে চারটি মুফতী !! তাদের হাল যদি হয় এমন
ইবলিশ ব্যাটার ওখানে থাকার – কি হবে প্রয়োজন ?
হালে গিয়ে হেতা ”হাজ্বী ডাঙ্গী” নাকি ”পাঁজি ডাঙ্গী” ভুলে গেছি গাঁ এর নাম
বুকের ব্যাথা চেপে স্বজল মুখে কেন যে - স্ব-জোড়ে হাসিলাম?
ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হলেও তা - পারি না কেন জানো?
এবার তাহলে কানে মুখে বলি ভাই- মন দিয়ে তা শুনো।
এই গায়েতে শুয়ে যে চৌদ্দজন পূন্যবান- পূন্যবতী
আমিযে তাহাদের বংশপরম্পরা দুরসম্পর্কের নাতি।
নানাজীর মাতা ছিল একজন পূন্যবতি হাজ্বী
যার ঔরশে জম্মেছিল মোর জমম দুঃখী মা-জী।
হাজ্বী ডাঙ্গীদের পাঁজি ডাঙ্গী মনে হয় দেখে- যে প্রতিচ্ছবি
হেথা গিয়েই আবার মনে পরে মোর মায়ের মুখচ্ছবি।