ময়ূরাক্ষী—


তিরিশ বছর পরে গড়িয়া দেখছে তোকে—
সেই যে চলে গেলি— তারপর—
তারপর— তিরিশ বসন্ত কেটে গেছে
তিরিশ হাজার ট্রেন গেছে চলে
তারপর— তুই—
দীর্ঘ ক্লান্ত ছায়ায় হেঁটে গেলি
এখানেই চুপিসাড়ে বলি –
ভাল আছিস?


বহুদিন হয়ে গেলো—
এখনো ছুঁইনি তোর হাত  
দূরের সমুদ্র থেকে বয়ে আসা এলোমেলো হাওয়া  
ছুঁয়েছে অনেক— অনেক বার আমাদের ঠোঁট
বৃষ্টি হয়েছে অনেক—অনেক অশনি প্রপাত  
বহুদিন হয়ে গেলো—
এখনো ছুঁইনি তোর হাত!  


তিরিশ বছর ধরে বুড়ো বট গাছ—
হাপিত্যেশ বসে পুরনো গলির মোড়ে;    
কানাই এর চায়ের দোকানে এখনো ঝড় ওঠে
সিগারেট পুড়ে যায় আঙুলের ফাঁকে  
প্যাঁচালো ধোঁয়ার পথ চেয়ে শুভময়—  
হুট করে উঠে- দ্রুত পায় ফিরে যায়—
                                    নিজস্ব চিলের নীড়ে।  
এমনই কেটেছে দিন, এখনো কাটে—
                                    বিগত তিরিশ বছর ধরে।
  
তোর নামে কেঁপে ওঠে বরিস্তা বিকেল
অনাদরে পড়ে থাকা অবশেষ উচ্ছিষ্ট তরল –
টুক করে গিলে নিই স্মৃতির পাঁচন।    
ফুটপাতে বয়ে চলা সমুদ্র সফেন রাত—    
রাজকীয় ট্যাক্সি তে লেগে থাকা মেয়েলী ঘ্রাণের কাছে
সঁপে দিয়ে শরীরের ভার –
অযাচিত ঘুম- কিশোরীর মতো চুপ করে বসে—  
হাঁটুতে ছুঁয়েছে তার থুতনি- অপার বিস্ময় লেগে চূর্ণ চুলে
বিনিদ্র রাত কাটে— অযাচিত স্বপ্নের ঘোরে!
  
এক মুখ কাঁচাপাকা দাড়ি— ভিখারি- পাগল অবিনাশ
মজে যাওয়া খাল পাড়ে থেমে যাওয়া থিয়েটারে চিলে কোঠা ঘরে
এখনো একলা বসে—  
হারানো নাকছাবি তোর— সযত্নে রেখেছে ঠোঙা তে ভরে –
“খুকুমণি” ফিরে এসে যদি খোঁজ করে!  
মুহুরী যতিন দাস জহুরী চোখে চিনেছে তখনই তোকে
আতশ কাঁচের নিচে- তিরিশ বছর আগে
লিখে দেওয়া দেয়াল লিখন—
“বিশল্যকরণী বন”  


তিরিশ বছর পরে গড়িয়া দেখছে তোকে—
পৌষের গা থেকে ঝরে পড়া ক্ষয়িষ্ণু সৌর ভাপ; অথবা  
ঝরে পড়া কুঁচফল হাসি টুকু পেতে—
হাঁ করে বসে আছে—
বুড়ো বট গাছ, অবিনাশ, শুভময়, খাল পাড়
কানাইয়ের চা এর দোকান—
       আর চিরতরে ভুলে যাওয়া
                          “বিশল্যকরণী বন”!!