চৈতি—
তোমার ঝিকুরখালির বাগান বাড়ি খানি
ছাপিয়েছে রূপ কাজল লতার অঙ্গ আভরণী
আমি তারে আমার হাতের মত চিনি –।
ফেরার পথে সূর্যি তখন সেই সুদূরে পথের বাঁকে
আমি জানি – একলা মেয়ে আপন মনে একলা চেয়ে থাকে
জানলা গলে চলকে পড়ে উছলে পড়া আলো
তোমার বিনোদ বেনী মুখ ঢেকে দেয় –
এটুকুই যা ভাল --!    


তোমার ঝিকুরখালির বাগান বাড়ি খানি
সেদিন ছিল আলোয় আলোয় অন্য মালিনী
আইবুড়ো ভাত – গায়ে হলুদ – হরেক রকম ছড়া
তোমার চোখে স্বপ্ন তখন – স্বপ্ন সুধা ভরা!
লগ্ন নটায়; বাইরে এলে বধূর সাজে –
ভরিয়ে দিলে আলোর ছটায় সেই সেদিনের সাঁঝে।
আকাশ জুড়ে চলকে পড়ে উছলে পড়া আলো
লাজ পরতে মুখ ঢেকে দেয় –
এটুকুই যা ভাল --!    


অমন সেদিন সুখের দিনে – কে খুঁজেছে রাধা?
কার চোখেতে বৃষ্টি ছিল? কার পা ছিল বাঁধা?
সেই যে পথিক শ্যামল কেতন মুক্ত ছিল সুপ্ত স্বপনে
তার সে স্বপন ভাঙল কি আজ এমনি অকারণে!
পত্র এল পাত্র বাড়ি –
চলবে না কো এমন পাত্র – ছাত্র পড়ানো।
সম্বন্ধ টা হয়েছে যার সাথে – পাত্র ভালোই- বিলেতে বেড়ানো
হঠাৎ করে চলকে পড়ে সুবাস মাখা প্রবাস গ্রন্থি আলো
ঘৃণাতে মুখ ফিরিয়ে নিলে --!
এটুকুই যা ভাল --!    


চৈতি—
তোমার ঝিকুরখালির বাগান বাড়ি খানি
রইল পড়ে একলা ঘরে আঁধার মালিনী।
চৌঠা বোশেখ বরের সাথে দিলে বিদেশ পাড়ি
অপূর্ব তা মানিয়ে ছিল অঙ্গে নীলাম্বরী!
সেদিন তোমার পথের পাশে আর ছিল না সে –
থাকলে যে জন মুখের হাসি মুছত নিঃশেষে।
এত আলোয় সেই ছেলেটার দৃষ্টি ছিল কালো
তার চোখের আঁধার মুখ ঢেকে দেয়  
এটুকুই যা ভাল --!    


চৌঠা বোশেখ পরের বছর একলা এলে ফিরে
তোমার ভাই বলেছিল – আর যাবে না ফিরে।
সেই সেদিনের মগ্ন স্বপন ভাঙল আজি ঝড়ে!  
তোমার ঝিকুরখালির বাগান বাড়ি খানি –
সাজল আবার কাজল লতার অঙ্গ আভরণী  
আমি যারে আমার হাতের মত চিনি –
জানলা গলে চলকে পড়ে মোম গলানো আলো  
তোমার বিনোদ বেনী আর মুখ ঢাকে না –
এটুকুই যা ভাল --!    


এক সকালে ডাক পাঠালে – রবী ঠাকুরের গানে  
শ্যামল কেতন আসবে কি আর আমার একলা গানের ভোরে?
একলা তুমি! একলা থাকার কতটুকুই জান!
একলা থেকেই একলা থাকা সয়;
তুমি ত জানই - একলা থাকা –
ঠিক ততটা একলা থাকা নয় –
বলতে পার –
এক জীবনে ঠিক কতটা একলা হওয়া যায়!!