একটা পত্র পাওয়া গেছে। রক্তের অক্ষরে লেখা। প্রতিশোধ স্পৃহা নয়।
ভালোবাসা। পত্রটা টিয়া পাখির ঠোঁটে ছিলো। ভাঁজ করা। মা উঠোনে বসা ছিলো।
হাতে খোকার ছেঁড়া জামা।
মায়ের চোখে ছানি পড়েছে। কিছুই স্পষ্ট দেখে না। তবে খোকার চিঠি
ঠিক ঠিক পড়তে পারে। চশমা লাগে না।  
পত্রটির ভাষ্য ছিলোঃ
মা,
কৃষ্ণচূড়ার ডালটা নুইয়ে পড়েছে। কেউ দেখেনি। শফিউর দেখেছে।
আত্মার সম্পর্ক। চিরটা কাল টিকে থাকবে।


শহীদ মিনার অরক্ষিত। শেয়াল, কুকুর ঘুরাঘুরি করে। কেউ দেখেনি।
সালাম দেখেছে। আত্মার সম্পর্ক। কেউ ভাঙতে পারবে না।


বাংলা ভাষাকে ইংরেজি, হিন্দি খেয়ে ফেলছে। কেউ দেখেনি। রফিক দেখেছে।  
আত্মার সম্পর্ক। কেউ ছিঁড়তে পারবে না।


বর্ণমালার গানগুলো হারিয়ে গেছে। কেউ খোঁজ রাখেনি। বরকত রেখেছে।
আত্মার সম্পর্ক। কোনোদিন ভুলতে পারবে না।


বাংলাছবির কদর নেই। কমে গেছে। কেউ দেখে না। জব্বার দেখেছে।    
আত্মার সম্পর্ক। নাড়ীর টান কোনোদিন ভুলতে পারবে না।


এরপর লিখেছে, আমি সব বুঝতে পারি। কিন্তু কিছুই করতে পারি না মা।  
মা তুমি ভালো নেই। আমি জানি, তোমার খুব কষ্ট হয় মা।    
তোমার চোখের ছানিটা অপারেশন করিয়ে নিও মা। জানো মা, আমার না
তোমার কোলে মাথা রেখে গল্প শুনতে ইচ্ছে হয়।
মা ওই যে ধ্রুবতারাটি দেখ না! আমিই তোমার ছেলে। আমিও তোমার
মুখের ভাষার মান রক্ষার জন্য মিছিলে গিয়েছিলাম মা। আমিও শহীদ
হয়েছিলাম মা। কেউ আমার নাম জানে না। দুঃখ নিও মা। এ নিয়ে
আমার কোনো কষ্ট নেই। তুমিও কোনো কষ্ট নিও না মা---- ।
আজ রাখি মা। তুমি ভাল থেকো। আমি আসব। আবার আসব মা।
তোমার মুখে বাংলা হাসি ফুটিয়ে তুলবই ইনশাল্লাহ ------------!!  
                                                  ইতি
                                        তোমার আদরের খোকা


পুনশ্চঃ আর একটি কথা মা। মা তুমি কি আমাকে মাফ করেছ? সেই যে
তোমাকে না বলে মিছিলে চলে এসেছিলাম! তোমার দুটি পায়ে পড়ি লক্ষ্মী
মা আমার। একটি বারের জন্য আমাকে মাফ করে দিও।