ভালোবাসা চোখে দেখা যায় না। বিমূর্ত। তবু ইহার কদরের
কোনো শেষ নেই। কোনো কালে ছিলোও না। থাকবেও না।


গাঙচিলটা সারাদিন আকাশে উড়লো। দিগন্তকে ছুঁতে চায়।
কতো কাকুতি। কতো মিনতি। কতো প্রতিশ্রুতি। ইয়ত্তা নেই।
কোনো লাভ হয় না। দিগন্ত তারে হররোজই কাছে ডাকে।  
প্রেমের কথা বলে। ভালোবাসার কথা বলে। কেবলই ছল করে।
ধরা দেয় না।
গাঙচিল রোজই আশায় বুক বাঁধে। সব উজাড় করে ভালোবাসে।
স্বপ্ন দিয়ে স্বপ্ন সাজায়। লাভের লাভ কিছুই হয় না।  
প্রকৃত ভালোবাসা বুঝি এমনি। একতরফা। কেবল ভালোবেসে
যায়। কিছুই পায় না।


চাতক সারাদিন আকাশ পানে চেয়ে থাকে। বিস্টি চায়।
মেঘলা আকাশ দেখে সে বাতাসে ভাসে। প্রিয়তমাকে ছুঁতে চায়।  
বিস্টিও আসবে বলে কথা দেয়। তারপর আর আসে না।  
হেমন্ত গেলো। শীত গেলো। বসন্ত গেলো। গ্রীষ্মের আধবেলা।
চাতকের চেয়ে থাকা আর শেষ হয় না।
চাতক এখন ভালোবাসার সঠিক সংজ্ঞা জানতে চায়।
কেউ বলে না। কেন বলে না। কেউ জানে না।  


মরা গাঙ। সেও সাগরকে ভালোবাসে। তাকে ছুঁতে চায়।
ভালোবাসায় কোনো দোষ নেই। যে কেউ যে কাউকে ভালোবাসতে
পারে। ভালোবাসার অধিকার সবারই আছে।
এক সময় তার যৌবন ছিলো। দু’কূল ছাপানো সুর ছিলো।
এখন শরীরে যৌবন নেই। যুবক মন আছে। সেখানে ভালোবাসাও
আছে। সাগর তাকে আর কাছে ডাকে না। প্রয়োজন নেই।
যে ভালোবাসা এক সময় ফুরিয়ে যায়; তা কতোটা সত্যি-মিথ্যে,
তা কতোটা ভালোবাসা, তা কেউ বলতে পারে না।


দেশের মানুষ সবাই দেশকে ভালোবাসে। কেউ বেশি বাসে।
আবার কেউ কম বাসে। কারো কাছে নিজের চেয়ে দেশ বড়।
আর কারো কাছে দেশের চেয়ে নিজে বড়। কেউ না খেয়ে থাকে।
আর কেউ দেশের হাড্ডি-মাংস সব এক সাথে চিবিয়ে খায়।
এই ভালোবাসার এতো জোর আছে যে, কেউ রাজা হয়।
আর কেউ প্রজা হয়।
একটি কথা কেউ কোনোদিন মনে রাখে না, প্রজারা রাজা বানায়।
রাজা প্রজায় বানায় না।
আর এই জন্যই ভালোবাসা নামক বিমূর্তপত্রটি কেউ যত্ন করে
রাখে না। প্রয়োজন ফুরোলে সাথে সাথে ছিঁড়ে ফেলে। দেরি করে না।