বউ সারাদিন অফিসের মুখ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করে,
কাগজ কুটে, ফাইল পত্তর ঠিকঠাক করে, নেটে ডাটা পোস্টিং দেয়,
স্কুল ভিজিট করে, কলেজ ভিজিট করে, মাদ্রাসা ভিজিট করে,
মাঝে মাঝে পাবলিক পরীক্ষা কন্টাক্ট করে, তাঁর ভোর হয়
অনেক ভোরে, তাঁর সন্ধ্যা হয় সন্ধ্যার অনেক পরে, লক্কড় ঝক্কড়
গাড়িতে টলতে টলতে কোনোমতে বাসায় ফিরে, যখন বাসায়
ফিরে তখন মহাউৎসব শুরু হয় তাকে ঘিরে; অতঃপর রেস্টলেস
জীবনের ছায়া নামে, তারাও হলুদ বাঁটে, মেন্দি বাঁটে; তবুও
ক্লান্তিরা মহাসুখে ঝাঁক বাঁধে আমার শ্বশুর বাবার দেওয়া
একমাত্র খাটে!


আমার কোনো অফিস-টফিস নাই, অফিসের নামে আমার
কোনো ছুটি-ছাটাও নাই; তবুও আমার, সময় খুব পাষণ্ড সীমার,
ডিউটির কোনো সীমা-পরিসীমা নাই; লেজে-গোবরে অবস্থা
আমার, বাবুদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া, স্কুল থেকে বাসায় ফিরিয়ে
আনা; ফাঁকে ফাঁকে বাজার-ঘাটে ঢুঁ মারা, খালি পকেটে মাঝে-
মধ্যে-ই হই হতচ্ছাড়া, তখন ---
মাথার জায়গায় আমার মাথা থাকে না, মাছির মতো ভনভন
করে ঘুরে, তবুও তরকারি কুটি, মশলা বাটি, মাঝে মাঝে মাছও
কাটি, সালুনে লবণ দেই, লবণ দিতে ভুলেও যাই; বাবুদের
গোসল দিই, খাওয়াই-দাওয়াই, ঘুম পাড়াই, ঘুমের মাঝে
আরশি আম্মু আম্মু করে, তখন আমার কলিজা ছ্যাঁত ছ্যাঁত করে;
ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আমারও আমার মায়ের কথা বারবার
খুউব খুউব মনে পড়ে; সন্ধ্যা বাঁক দেওয়ার আগে ওরা একটু-
আধটু খেলে আমি ওদের পাহারা দিই, ঝগড়া-ঝাঁটি মিটাই;
কোনো ক্লান্তি আমাকে স্পর্শ করে না, সন্ধ্যার পর আমি মুগ্ধ নয়নে
ওদের খাওয়া-খাওয়া দেখি, এই সন্ধ্যাটায় ওরা সারাদিনের খাবার
সুদ-আসলে উসুল করে ছাড়ে।


অতঃপর কিছুক্ষণ পড়ে, আমিই তখনও মাস্টার বড়ো; ক্লান্ত বউ
মাঝে মাঝে দু’একটি হাঁক-ডাক দেয়, আমি ঠিক মতো পড়াতে
পারি না, আবার কখনও কখনও আমি ভাসি কবিতা জলে,
তাতেই কারো কারো কোনো লাকড়ি ছাড়াই আগুন জ্বলে-- আগুন
জ্বলে; সারাদিন অবসর থাকি, গেরস্থালি কাজে দিই চরম ফাঁকি;
হাঁড়িপাতিল গোছানো রাখি না, বেড সিট, বালিশ কোথায় যায়
তাও দেখি না, আমি একটা আস্ত অকর্মার ধাড়ি-----!!


প্রায়-ই মাঝরাতের নীরবতা ভেঙে আরশি জেগে উঠে, আমি
বাবার কাছে যাব—বাবার বুকে ঘুমাব বলে চিৎকার-চেঁচামেচি দেয়,
কিছুক্ষণ পরেই আবার বলে, আমি আম্মু যাব! ঐশী মাঝে মধ্যে
ঘুমের ঘোরে আবোল-তাবোল বকে, আবার কিছুক্ষণ পর ঠিক
হওয়ার পরে বলে, বাবা আমাকে দোয়া পড়ে একটা ফুঁ দিয়ে দাও;
আমি আল্লাহর নামে ফুঁ দিয়ে দিই – ঐশী আবার নিশ্চিন্তে ঘুমায়,
যে পড়ার চেয়ে, খাওয়া-দাওয়ার চেয়ে খেলেই বেশি; সেই ইউশার
এসবের কোনো পরোয়া নেই, একঘুমেই সমুদ্র পাড়ি দেয়!!


ভুলতেই বসেছি এসবের বাইরেও যে আরেকটা লাবণ্যময় জীবন
আছে, চাঁদের বুকে জোড়া চাঁদ আছে, ফুলে ফুলে সাজানো- গোছানো
বাগান আছে, এখনও আমাদের কবিতার মতো যৌবন আছে!!